মৌ হাসতে হাসতে বলে, আহা হা! কি ভাল ছেলে রে!
সত্যি বলছি, যুবক-যুবতীদের লীলা খেলার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না কিন্তু উর্বশীর উন্মত্ত যৌবন আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
মৌ ওর কোল থেকে নেমেই বলে, এখানে যতদিন থাকব, তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না।
স্পর্শ করব না কিন্তু তোর প্রতি কর্তব্য পালন তো করব।
কর্তব্য? কিসের কর্তব্য?
তোর সব রকমের প্রয়োজন, চাহিদা, ইচ্ছা ইত্যাদি তো মিটাতে হবে।
মৌ হাসতে হাসতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, লিওপার্ড কান্ট চেঞ্জ ইট স্পটস্। নেকড়ের কালো কালো ছোপ কিছুতেই তুলে ফেলা যায় না, তাই না?
.
সেই কোন কালে যাযাবর লিখেছিলেন, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। কথাটি ষোল আনার উপরে আঠারো আনা সত্য। বিমান যাত্রায় দূর দূরান্তর পৌঁছনো যায় খুবই অল্প সময়ে কিন্তু আগে-পরে হ্যাপা কম নয়।
বারোটার প্লেন? এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে পাক্কা দুঘন্টা আগে। তারপর? বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক নিয়মে সব বিমানযাত্রীই সন্দেহজনক। তাইতো সবাইকেই আত্মসমর্পণ করতে হবে দেশপ্রেমিক সিপাহীদের কাছে একাধিকবার।
অতঃপর?
যাও খোকা-খুকি বিমানে বসো।
বিজ্ঞান যে বেগ দিয়ে আবেগ কেড়ে নিয়েছে তার জ্বলন্ত জীবন্ত প্রমাণ পাবেন বিমান সেবিকাদের শুকনো প্রাণহীন সেবাযত্নে।
যাইহোক এইসব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে গন্তব্যে পৌঁছবার পরও মুক্তি নেই। তিন-চারশ’ যাত্রীর মালপত্তরের সঙ্গে লাইন দিয়ে আপনার সুটকেশ-ব্যাগটির জন্য হা-হুঁতাশ করে দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে।
শুধু কী তাই?
মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, পরনে লুঙ্গি গেঞ্জি পরে স্বচ্ছন্দে বনগাঁ বা ব্যান্ডেল লোকালে যাতায়াত করা সম্ভব হলেও বিমান যাত্রায় আপনাকে সেজেগুজেই যেতে হবে; তারজন্য কী কম সময় লাগে?
তাই তো মৌ সত্যি ক্লান্তবোধ করছিল।
শান্তদা, সত্যি বড় টায়ার্ড লাগছে; তাছাড়া ঘুমও পাচ্ছে। আমি শুতে যাচ্ছি; প্লীজ তুমি ডিসটার্ব কোরো না।
না, না, ডিসটার্ব করব না; তুই শুতে যা।
মৌ বেডরুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলে, তুমি একটু বিশ্রাম করবে না?
হ্যাঁ, করব একটু পরে।
পরে কেন এখনই এসো।
কয়েকটা টেলিফোন করেই আসছি।
বেশি দেরি কোরো না।
না, না, দেরি করব না।
মৌ শোয়র সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ে।
শান্ত কর্ডলেস টেলিফোন হাতে নিয়েই টেলিফোন করতে শুরু করে।
.
বেশ কিছুক্ষণ ঘুমুবার পর মৌ-এর ঘুম পাতলা হয়েছে; ঠিক তখনই ওর কানে আবছা আবছা ভেসে আসে এক মহিলার সঙ্গে শান্তদার কথাবার্তা। ও একটু কান খাড়া করতেই বুঝতে পারে, হ্যাঁ, শান্তদা এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছে।
মৌ বিছানা থেকে নেমে ড্রইং-ডাইনিং রুমে পা দিয়েই একজন বয়স্কা মহিলাকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। মহিলাও ওকে একবার দেখেই শান্তকে বলে, ইনি কে?
শান্ত এক গাল হেসে বলে, আমার স্ত্রী।
মহিলা মৌ-কে একবার ভাল করে দেখেই এক গাল হেসে বলে, তোমার স্ত্রী তো দারুণ সুন্দরী।
মহিলা দৃষ্টি ঘুরিয়ে শান্তকে বলে, এবার কী কলকাতা গিয়েছিলে বিয়ে করতে?
না, না; আমাদের বিয়ে হয়েছে অনেক দিন আগে।
তাহলে ওকে এতদিন এখানে আনোনি কেন?
ও পড়াশুনা করছিল।
তাই বলে স্বামীর ঘর করবে না?
মহিলা মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, এতকাল ওকে না এনে খুব ভুল করেছ।
বাঈ, ও তো আবার কলকাতা ফিরে যাবে।
কেন? কেন?
ও তো কলেজে পড়ায়।
তুমি কী বউকে খেতে-পরতে দিতে পারবে না যে ওকে কলকাতার কলেজে চাকরি করতে হবে?
শান্ত গম্ভীর হয়ে বলে, ওর কোন ভাইবোন নেই; তাছাড়া মা-বাবার বয়স হয়েছে। তাই ও আর কিছুদিন কলকাতায় থাক; তারপর ওকে এখানে নিয়ে আসব।
এবার বাঈ মৌ-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান্তর উদ্দেশে বলে এমন সুন্দরী বউকে ছেড়ে থাকো কী করে?
শান্ত একটু হেসে বলে, সত্যি বলছি, বাঈ, ওকে ছেড়ে থাকতে সত্যি খুব খারাপ লাগে। বাধ্য হয়েই ওকে কলকাতায় রেখেছি, তবে খুব বেশি দিন আর ওকে ওখানে ফেলে রাখব না।
শান্ত মৌ-এর পাশে দাঁড়িয়ে বলে, জানো বাঈ, একে কে পছন্দ করেন?
কে?
আমার মা।
মা-জী ঠিক মেয়েকেই পছন্দ করেছেন। আমি তোমার বউকে দেখেই বুঝেছি, ও খুব ভাল মেয়ে।
এবার শান্ত মৌ-কে বলে, বাঈ মা-র সময় থেকে আমাদের বাড়িতে কাজ করছে। মা ওকে সব রকম বাঙালী রান্না করতে শিখিয়েছেন।
মৌ একটু হেসে বলে, তাই নাকি?
শুধু তাই না। বাঙ্গ যেমন মশলা দোসা বানাতে পারে, সেইরকমই মিক্সড ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেনও খুব ভাল করে।
মৌ অবাক হয়ে বলে, বাঈ এত রকম রান্না জানে?
মা থাকতেই বাঈ সংসার চালায়। আলমারী থেকে টাকা নিয়ে ও বাজার-হাট করে, অন্য কাজের মেয়েটাকে খেতে দেয়, মাইনে দেয়…
এবার বাঈ মৌ-কে বলে, কী করব? মা-জীর শরীর ভাল ছিল না বলে আমাকেই সব সামলাতে হতো। তাছাড়া উনি আমাকে খুবই বিশ্বাস করতেন।
বাঈ না থেমেই বলে, মা-জী আমার ছোট মেয়ের বিয়েতে কি দিয়েছিলেন জানো?
কী দিয়েছিলেন?
নিজের একটা ভাল হার পালিশ করে আমার মেয়েকে দেন; তাছাড়া আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, মা ঐরকমই ছিলেন।
তোর স্বামীও কম কিছু করেনি।
ও কী করেছিল?
মেয়ের বিয়ের বেনারসী শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট আর জামাইয়ের জন্য গরদের ধুতি-কুর্তা, হাতের ঘড়ি সোনার আংটি আর কুর্তার জন্য সোনার বোতাম দিয়েছিল।