শান্ত সঙ্গে সঙ্গে বলে, আমাকে পরিপূর্ণভাবে পেয়ে তুই কোন পূর্ণতার স্বাদ পাচ্ছিস না?
বেশ কিছু বছর শূন্যতার জ্বালা সহ্য করার পর এখন তোমাকে পেয়ে নিশ্চয়ই ভাল লাগছে।
মৌ না থেমেই ওর মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলে, আবার সেই পুরনো শূন্যতার জ্বালা আমাকে সহ্য করতে হবে না তো?
কখনই না।
এই কথা বলেই শান্ত ওকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।
মৌ-ও ওকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
দু’চার মিনিট নীরবতার পর মৌ বলে, শান্তদা একটা কথা বলব?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বল।
তুমি যখন আমাকে বুকের মধ্যে টেনে নাও, তখন যে কি শান্তি পাই তা তুমি ভাবতে পারবে না।
তাই নাকি?
হ্যাঁ শান্তদা, এখন আমার কোন দুঃখ কষ্ট নেই, অভাব-অভিযোগ নেই, ভূত-ভবিষ্যত নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই; এখন আমার মন আনন্দে টইটুম্বর।
তুই আমাকে সত্যি খুব ভালবাসিস।
নিশ্চয়ই ভালবাসি; তা না হলে কেউ এভাবে নিজেকে উজাড় করে সবকিছু বিলিয়ে দিতে পারে?
শান্ত আলতো ওকে একবার চুমু খায়।
মৌ আবার বলে, নিজেকে কখনই এভাবে বিলিয়ে দিতে পারতাম না যদি তুমি আমাকে না ভালবাসতে। তুমিও আমাকে পাগলের মতো ভালবাসো।
সত্যি তাই মনে করিস?
হ্যাঁ, সত্যিই তাই বলে তো তুমি আমাকে প্রাণভরে পাবার জন্য কি পাগলামীই করো!
তুই পাগলামী করিস না?
পাগলের পাল্লায় পড়ি বলেই তো পাগলামী করতে বাধ্য হই। যত দোষ নন্দ ঘোষ, তাই না?
কী করব? নন্দ ঘোষই যদি প্রথম আগুন জ্বালায়, তাহলে তো সে আগুন ছড়িয়ে পড়বেই।
শান্ত হো হো করে হেসে ওঠে।
.
ওরা দুজনে সারাদিন শুধু হোটেলের ঘরে বসে থাকে না। রোজই সকালের দিকে শান্ত এক একদিন এক এক এরিয়ার ডিস্ট্রিবিউটারের দীর্ঘ আলোচনা করে ড্রইং- ডাইনিং রুম-এ বসে। এইসব আলোচনার সময় মৌ-ও শান্তর পাশে থাকে।
মিঃ কেজরিওয়াল, দিস ইজ মহুয়া…
মিঃ কেজরিয়াল সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত জোড় করে ওকে নমস্কার করে বলেন, নমস্তে মেম সাব!
মৌ-ও দু’হাত জোড় করে ওকে নমস্কার করে।
শান্ত ধীরে ধীরে বলে, মহুয়া খুবই উচ্চশিক্ষিতা ও অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে; ও আমাদের কোম্পানীতে শিগগিরিই জয়েন করবে।
স্যার, আপনাদের বহু প্রোডাক্টই তো মেয়েদের জন্য; সেইগুলোর ব্যাপারে ওর পরামর্শ আমাদের খুবই সাহায্য করবে।
হ্যাঁ, তা তো করবেই কিন্তু অন্যান্য প্রোডাক্টের ব্যাপারেও ওর মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে হয়।
স্যার, তা তো হবেই।
আপনাদের প্রত্যেককে উইকলি সেলস্ রিপোর্ট ওর কাছে পাঠাতে হবে প্রতি সোমবার।
হ্যাঁ স্যার, নিশ্চয়ই পাঠাব।
শান্ত একইভাবে নন্দলাল জালান, বিমলেন্দু পাইন, অশোক মেটা, জগদীশ্বর আগরওয়াল, গঙ্গাশরণ যাদব আর নরনারায়ণ বসাকের সঙ্গে মহুয়ার পরিচয় করিয়ে দেন।
.
এই পর্ব মিটতেই মৌ বলে, শান্তদা, আমি কী পারব এই কাজ করতে?
আসল কথা হচ্ছে, এদের সবাইকে প্রতিনিয়ত চাপে রাখতে হবে বিক্রি বাড়াবার জন্য।
কিন্তু কীভাবে চাপে রাখব?
এদের প্রত্যেককে বলবে, এই প্রোডাক্ট, ওই প্রোডাক্ট, সেই প্রোডাক্টের বিক্রি বাড়াও।
শান্ত একটু হেসে বলে, এরা প্রত্যেকেই জানে ওদের বিরুদ্ধে কোন রিপোর্ট হেড অফিসে গেলেই এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চলে যেতে পারে; তাইতো ওরা যেভাবেই হোক বিক্রি বাড়াবেই।
আমার মতো মেয়ের কথাকেও ওরা সত্যি গুরুত্ব দেবে?
আলবাত দেবে।
শান্ত সঙ্গে সঙ্গে বলে, হাজার হোক তুমি ভারতের অন্যতম বিখ্যাত কোম্পানীর একজন অফিসার হিসেবে কথা বলবে। ওরা কোম্পানীর অফিসারদের যেমন ভয় করে, সেইরকমই ভক্তি করে।
ও একটু হেসে বলে, তোকে দু’একটা টেকনিক শিখিয়ে দেব, দেখবি তাতে কি দারুণ কাজ হবে।
মৌ একটু হেসে বলে, প্লীজ একটা উদাহরণ দাও।
তুই হাতের ফাইলের কাগজগুলো একটু উল্টেপাল্টে দেখে নিয়েই বলবি, মিঃ কেজরিওয়াল, লাস্ট ক’ উইকের রিপোর্টে দেখছি প্রত্যেক সপ্তাহে জগদীশ্বর আগরওয়াল, পাইন আর অশোক মেটার বিক্রি দশ কোটি থেকে বাইশ কোটি টাকার মাল বেশি বিক্রি করছেন কিন্তু আপনার বিক্রি বাড়ছে না কেন?
যাদের বিক্রি বাড়ছে বললাম, তাদের বিক্রি কী সত্যি বাড়ছে?
শান্ত গম্ভীর হয়ে বলে, না, কিন্তু তোর কথা শুনেই কেজরিওয়ালের মুখ শুকিয়ে যাবে।
তারপর?
তারপর তুই ওকে বলবি, আপনি আমাদের কোম্পানীর বহু পুরনো ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যথেষ্ট সুনাম আছে; তবে আমার মনে হয়, আপনার সেলসম্যানরা বোধহয় ঠিক মতো কাজ করছে না।
শান্ত হাসতে হাসতে বলে, দেখবি তোর এই কথায় ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
.
ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্টদের সঙ্গে কথাবার্তার পর্ব শেষ, এবার শান্তকে ফিরতে হবে মুম্বাই।
ভাল কাকা, এবার আমাকে ফিরতে হবে।
এরই মধ্যে?
ভেবেছিলাম তিন-চারদিনের বেশি থাকব না কিন্তু নানা কারণে ছ’দিন রইলাম। তাইতো ঠিক করেছি কালই ফিরে যাব।
আবার কবে আসবি?
এবার থেকে এক-দেড় মাস অন্তরই আমাকে আসতে হবে।
তাহলে তো ভালই।
আর একটা কথা।
হ্যাঁ, বল।
আমি ঠিক করেছি মৌ-কে কলকাতাতেই আমাদের কোম্পানীর কাজে লাগিয়ে দেব।
মৌ কী পারবে সে কাজ করতে?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুব পারবে।
বিমলবাবু একটু হেসে বলেন, ও যদি পারে সে কাজ করতে, তাহলে আমি আপত্তি করব কেন?
তবে ওকে একটা ফর্মাল ইন্টারভিউ তো দিতে হবে আমাদের মুম্বাই অফিসে; তারপর ওকে তিন-চার সপ্তাহ ধরে ট্রেনিং দেওয়া হবে।