সত্যি কথা বলব?
তবে কী মিথ্যে কথা বলবি?
তুই দারুণ সুন্দরী; তাইতো ভেবেছিলাম খুবই,অহঙ্কারী হবি।
আচ্ছা?
হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
রুচিরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলে, কলেজে আসার দু’তিন দিন পর ক্যান্টিনে তোর সঙ্গে আলাপ হতেই বুঝলাম আমার ধারণা ভুল। সেদিন তোর সঙ্গে কথা বলে এত ভাল লেগেছিল যে রাত্রে টেলিফোন করে তোর সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারিনি।
সেদিন রাত্রে তোর টেলিফোন পেয়ে আমারও খুব ভাল লেগেছিল।
গঙ্গা দিয়ে আরো জল গড়িয়েছি।
ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়েছে আরো কয়েকজনের সঙ্গে।…
.
জানো শান্তদা, দেখলাম সবাই কোন না কোন ছেলের প্রেমে পড়েছে।
তাই নাকি?
দু’তিনজন তো স্বীকার করেছে তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
অনেক দুর মানে?
মানে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে।
ভেরি গুড।
এই কথা বলেই শান্ত হাসতে হাসতে বলে, আমি তখন কলকাতায় থাকলে তুমিও সেই অমৃতের স্বাদ পেতে।
অসভ্য কোথাকার।
ওহে সুন্দরী, যতক্ষণ মনের মানুষের কাছে সেই আনন্দ না পাওয়া যায়, ততক্ষণ বলা যায় আঙুর ফল টক কিন্তু সেদিন যখন আমাকে ভাসিয়ে দিলে, তখন তো মনে হয়নি।…
আঃ! শান্তদা।
আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে রাখলে কী চরম সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে?
আমি জানি না, প্লীজ চুপ করো।
শান্ত আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, মৌ, একটা চরম সত্যি কথা জেনে রাখো; আমরা যতক্ষণ বিশেষ কিছু না পাই ততক্ষণই সৎ। যাকে কেউ ঘুষ দেয় না বা যার ঘুষ খাবার সুযোগ নেই তিনি সৎ থাকতে বাধ্য হন কিন্তু ঘটনাচক্রে ওই মানুষই যদি ঘুষ খাবার সুযোগ পায় তখন আর তিনি ঘুষ নিতে দ্বিধা করেন না।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।
সেইরকম যে ছেলে-মেয়ে মিলেমিশে আনন্দ করার সুযোগ না পায় ততক্ষণ তারা ভাল কিন্তু সুযোগ পেলে কোন ছেলেমেয়েই নিষিদ্ধ ফল খেতে দ্বিধা করে না।
হ্যাঁ, শান্তদা ঠিক বলেছ।
.
জানো শান্তদা, আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছ থেকে একটা ব্যাপার জেনে আমি অবাক হয়েছি।
কী খবর জেনে অবাক হয়েছিস?
সায়নী আমার খুবই প্রিয় বন্ধু। ক্লাস ইলেভেন থেকে এম. এ পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছি। ওর থেকে মাত্র ছ’বছরের বড় ওর ছোট মামা। ছোটবেলা থেকেই দু’জনের মধ্যে খুব ভাব।’হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষা দিয়ে মামাবাড়ি যাবার পর ছোট মামার সঙ্গে যে শারীরিক সম্পর্ক শুরু হয়েছে তা এখনও চলছে।
শান্ত হাসতে হাসতে বলে, আগেকার দিনে ঠাকুমা-পিসিমারা ঠিকই বলতেন।
ওরা কী বলতেন?
বলতেন, আগুন আর বারুদ কাছাকাছি এলে তো জ্বলে উঠবেই।
আচ্ছা!
তোর বন্ধুর সঙ্গে ছোট মামার সম্পর্ক আছে বলে অবাক হবার কারণ নেই; কারণ কারুর সঙ্গে ছোট মামা, কারুর সঙ্গে ছোট কুর্কি, বা পিসতুতো-মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়া যতটা সহজ বাইরের কোন ছেলের সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা হওয়া অসম্ভব।
হ্যাঁ, ঠিক বলেছ।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মৌ বলে, বড় হবার পর তোমাকে কাছে না পেয়ে আমি যে কি করে কটা বছর কাটিয়েছি তা তুমি কল্পনা করতে পারবে না।
কী করব বল? নতুন চাকরি, অমানুষির্ক পরিশ্রম, বাবার অসুস্থতা, বাবার মৃত্যু, মা-র অসুস্থতা, তারপর তার মৃত্যু, আমি তখন কোনমতে কর্তব্য পালন করে চলেছি।
বুঝেছি।
মৌ, তুই ভাবতে পারবি না, নতুন চাকরি করতে করতে আমি কী করে ওদের বেস্ট ট্রিটমেন্ট দেবার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করেছি।
শান্ত না থেমেই বলে, যখন একটু সামলে নিয়েছি আবার নিজের দিকে ফিরে তাকাবার অবকাশ পেয়েছি, তখনই আমি তোদের কাছে ছুটে এসেছি।
মৌ ওর গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলে, গুড বয়!
এখন গুড বয় মনে হচ্ছে কিন্তু এই ক’বছর ধরে তো ভেবেছিস শান্তদা তোদের ভুলে গেছে অথবা গোল্লায় গেছে বা হয়তো ভেবেছিস শান্তদা এক নম্বর বেইমান।
শান্ত না থেমেই বলে, আর তুই তো ভেবেছিস আমি তোকে ঠকিয়েছি, তোর সঙ্গে ভালবাসার অভিনয় করে নিশ্চয়ই এতদিনে বিয়ে করে মহা ফুর্তিতে দিন কাটাচ্ছি।
হয়েছে? নাকি আরো কিছু বলবে?
আর কী বলব?
শান্তদা, তোমার প্রতি মা-বাবার এত অন্ধ স্নেহ যে তুমি খুন করলেও ওরা তা কখনই বিশ্বাস করবেন না। তুমি আমার মায়ের পেটে না জন্মালেও ওরা তোমাকে প্রথম সন্তানই মনে করেন, তা জানো?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই জানি ও বিশ্বাসও করি।
আমার কথা শুনবে?
হ্যাঁ, বল।
মৌ ওর গলা জড়িয়ে চোখের পর চোখ রেখে বলে, তুমি কী জানো প্রেম- ভালবাসার ব্যাপারে ছেলেদের চাইতে মেয়েরা অনেক বেশি সিরিয়াস। তারা একবার কাউকে মন দিলে আর তাকে সারাজীবনেও ভুলতে পারে না।
শান্ত হাসতে হাসতে বলে, আমি মাঝে মধ্যে এখানে এলে আর তোর এম. এ পর্যন্ত পড়া হতো না।
কেন?
এর মধ্যে তোকে অন্তত নিশ্চয়ই বার ছয়েক মেটারনিটি ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হতো।
আঃ! শান্তদা!
শান্ত একটু চাপা হাসি হেসে বলে, একদিক দিয়ে এখন এসে ভালই করেছি।
শুনি, কোনদিক দিয়ে ভাল করেছ।
তুই তো এখন গাছপাকা আম, যেমন মিষ্টি তেমনি রসে ভরপুর। তোকে পেয়ে এখন কি ভালই লাগছে।
আমি গাছপাকা আম?
তুই তো এখন চব্বিশ বসন্তের পরিপূর্ণ ফোঁটা পদ্মের মতো…
আর কিছু না?
মৌ, সত্যি বলছি তুই যে আমাকে কি আনন্দে রেখেছিস তা জানিস না। তোর জন্য আমি জীবনে পরিপূর্ণতার স্বাদ পাচ্ছি।
সত্যি তাই?
হ্যাঁ মৌ, সত্যি তাই।