একজন হিজ হাইনেসকে ড্রিঙ্ক অ্যান্ড ফুড সার্ভ করছে, একজন টয়লেট অ্যান্ড বাথ-এ হেলপ করে, একজন হিজ হাইনেসকে জামাকাপড় পরিয়ে দেয় আর একজন নাইট ডিউটি দেয়।
টয়লেট আর বাথ-এ কি হেলপ করতে হয়?
হিজ হাইনেস কি নিজে নিজে স্নান করবেন?
মহারাজাকে স্নান করিয়ে দিতে হয়?
অব কোর্স।
জাহাজ ফ্রেঞ্চ কোস্ট ছাড়ার পরই মহারাজার এক গার্ল ফ্রেন্ডের খুব সিরিয়াস সী সিকনেস হলো। এ-ডি-সির কাছে খবর পেয়েই হিজ হাইনেস অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে ওর পার্সোন্যাল ফিজিসিয়ানকে খবর দিতে বললেন। এ-ডি-সি মুহূর্তের জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে জানালেন, ইওর হাইনেস, আপনার পার্সোন্যাল ডাক্তার তো আমাদের পার্টিতে নেই।
ব্যস! হিজ হাইনেস রেগে লাল। তলব করলেন প্রাইভেট সেক্রেটারিকে। প্রাইভেট সেক্রেটারি কেবিনে ঢুকতেই রাগে ফেটে পড়লেন, ডু ইউ থিংক আই অ্যাম এ বেগার? আমি আমার একজন ডাক্তারকে নিয়ে বিলেত যেতে পারি না? জানেন, আমি পুরো একটা জাহাজ ভাড়া করে সারা পৃথিবী চক্কর দিতে পারি? আজ যদি আমার অসুখ হতো, তাহলে? তাহলে কি হতো? কে দেখত? আমি মরে গেলে কে রাজত্ব সামলাবে? এক নিঃশ্বাসে হাজারটা প্রশ্ন করার শেষে বললেন, আপনার মতো প্রাইভেট সেক্রেটারির আমার দরকার নেই। হ্যাঁ, জাহাজের ডাক্তার দিয়ে যেন আমার গার্ল ফ্রেন্ডদের চিকিৎসা না করা হয়।
প্রাইভেট সেক্রেটারি অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গে নিবেদন করলেন, ইওর হাইনেস! আমি আপনার অনুমতি না নিয়েই বিলেত থেকে একজন অত্যন্ত ভালো ডাক্তারকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছি।
মহারাজা লাফিয়ে উঠে বললেন, রিয়েলি?
ইয়েস ইওর হাইনেস!
কোথায় সেই ডাক্তার?
এক্ষুনি ডেকে আনছি ইওর হাইনেস।
একটু পরেই প্রাইভেট সেক্রেটারি ডাঃ জনার্দন চৌধুরীকে এনে মহারাজার সামনে হাজির করলেন, ইওর হাইনেস, ইনিই আপনার নতুন পার্সোন্যাল ফিজিসিয়ান।
.
চৌধুরীবাড়ির গল্প শুনতে শুনতে হাসি পায়। প্রায় অবিশ্বাস্য মনে হলেও জানি এমন হতো। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বহু রাজপ্রাসাদে গেছি, থেকেছি। নানাজনের সঙ্গে মিশেছি, শুনেছি অসংখ্য কাহিনি। এর চাইতেও অনেক অনেক অবিশ্বাস্য কাহিনি।
গল্প করতে করতে হুইস্কির গেলাস খালি হয়। আমি আবার ভরে নিই, দিই। দুজনেই চুমুক দিই। ও একটু ভাবে। আনমনে একবার জানলা দিয়ে লন্ডনের ঘোলাটে আকাশের দিকে তাকায়।
বড় দাদুর আর কলকাতায় ফেরা হলো না। বোষে থেকে সোজা চলে গেলেন কাপুরতলা। তারপর সিমলা।
সিমলায় কেন?
মহারাজা বছরের চার-পাঁচ মাস সিমলায় কাটাতেন বলে বড় দাদু ওখানেই থাকতেন। সিমলার কাপুরতলা হাউসে গেলে এখনও বড় দাদুর সঙ্গে অনেক বড় বড় লোকের ছবি দেখতে পাবেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। আমি দাদার সঙ্গে অনেকবার সিমলা গেছি আর প্রত্যেকবার কাপুরতলা হাউসে গিয়ে বড় দাদুর ছবিগুলো দেখেছি।
.
শুধু কতকগুলো ফটো নয়, আরো কিছু আছে। এখনও অনেক বৃদ্ধের মুখে ডাঃ জনার্দন চৌধুরীর কথা শোনা যাবে, জানা যাবে অনেক মজার ঘটনা। নতুন বিলেত ফেরত ডাক্তার বলে মহারাজা ওঁকে বেশি পছন্দ করতেন। বিশ্বাসও করতেন অনেক বেশি। সেজন্য মহারানী বা মহারাজার প্রমোদ সঙ্গিনীদের কোনো কিছু হলেই ডাঃ চৌধুরীর তলব হতো। রাজপ্রাসাদের অন্য দুজন পুরনো ডাক্তার। এজন্য অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং ডাঃ চৌধুরীর কুৎসা প্রচার করতে শুরু করলেন। মহারাজার প্রাইভেট সেক্রেটারিই ছিলেন ডাঃ চৌধুরীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও একমাত্র ব্যক্তিগত বন্ধু। মহারাজাও ওঁকে ভালোবাসেন। সুতরাং হিজ হাইনেসের কানে সেই কুৎসার কাহিনি পৌঁছে দেওয়া সহজ ছিল না, কিন্তু তবু একদিন সত্যি সত্যি পৌঁছল। কোর্ট মিনিস্টার দেওয়ান গুরুবচন সিং মহারাজাকে বললেন, ইওর হাইনেস, ডাঃ চৌধুরী সম্পর্কে অনেক কথা শুনছি। অবশ্য ঠিক বিশ্বাসযোগ্য না হলেও অনেকের কাছে শুনছি বলেই আপনাকে জানান কর্তব্য মনে করলাম।
ডাক্তার ড্রিঙ্ক করা শুরু করেছে নাকি?
না ইওর হাইনেস, উনি ড্রিঙ্ক করেন না ঠিকই কিন্তু শুনছি…
কি শুনছেন?
শুনছি চিকিৎসা করার সুযোগ নিয়ে ডাঃ চৌধুরী আপনার কয়েকজন বান্ধবীদের সঙ্গে…
কি? ইজ হি এনজয়িং দেয়ার কোম্পানি?
তাইতো শুনছি ইওর হাইনেস।
মহারাজা গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আর কিছু শুনেছেন?
শুনছি তো আরো অনেক কিছু কিন্তু ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।
আরো কি শুনছেন?
ইওর হাইনেস, সেসব কথা আপনার না শোনাই ভালো।
মহারাজার অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলেন না কোর্ট মিনিস্টার। শেষ পর্যন্ত বললেন, শুনছি দু-একজন মহারানীদের সঙ্গেও ডাঃ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা নাকি অনেক দূর গড়িয়েছে।
মহারাজা হাসতে হাসতে শুধু বললেন, ভেরি ইন্টারেস্টিং।
ঠিক পরের দিনই মহারাজা অর্ডার দিলেন, মহারানী ও বান্ধবীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ডাঃ চৌধুরীর। শুধু তাই নয়। কারুর একটু সামান্য মাথা ব্যথা করলেই মহারাজ ডাঃ চৌধুরীকে ডেকে বলতেন, ডক্টর, রাতে পেসেন্টের কাছে থাকবেন।
ডাঃ চৌধুরী হাসতে হাসতে বলতেন, ইওর হাইনেস, সেরকম কিছু হলে আমি নিশ্চয়ই থাকব কিন্তু দিস ইজ নাথিং।
তা হোক। আপনি থাকলে আমি নিশ্চিন্ত থাকব; নয়তো চিন্তায় সারা রাত ঘুমুতে পারব না।