প করছি কিন্তু ডক্টর চৌধুরী কি ভাববেন বলতো?
দাদার কাছে কিছু চাইলে উনি বরং খুশী হন, তা জানেন?
গাড়ির হর্ন শুনতেই রঞ্জনা উঠে দাঁড়াল। চলুন, আপনাকে ছেড়ে আসি।
তুমিও যাবে?
কেন? কোন আপত্তি আছে?
আমি একা বলে কি মানুষের সাহচর্য পছন্দ করি না?
তার মানে?
চলুন, চলুন। বলতে বলতেই বেরিয়ে গেল। চাকরটাকে বললো, আমি একটু বেরুচ্ছি।
গাড়িতে উঠেই রঞ্জনা জানতে চাইল, অফিস না বাড়ি যাবেন?
কাল থেকে অফিস যাবো।
রঞ্জনা ড্রাইভারকে বললো, সাব কা কোঠী চলো।
গাড়িতে যেতে যেতেই আমি বললাম, রঞ্জনা, আমি তোমার কথাবার্তা ঠিক বুঝি না।
ও একটু হাসল, সহজ সরল কথাবার্তা আপনি বুঝতে পারেন না, তা আমি জানি।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আমি চুপ করে বসে রইলাম। বেশ কয়েক মিনিট পরে দৃষ্টিটা হঠাৎ গুটিয়ে ভিতরে আনতেই দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখে ওর চোখ পড়তেই জিজ্ঞাসা করল, কি ভাবছিলেন?
আমি উত্তর দেবার আগেই আমার বাড়ির সামনে গাড়ি থামল। দুজনেই নামলাম। বেল বাজাতেই রাধাকিষণ দরজা খুলে দিল। ভিতরে ঢুকে বললাম, সো।
রঞ্জনা বসেই জিজ্ঞাসা করল, আমার কথার জবাব দিলেন না?
কোনো কথার?
গাড়িতে আসতে আসতে কি ভাবছিলেন?
সত্যি বলব?
নিশ্চয়ই।
কিছু মনে করবে না তো?
না।
তোমার কথাই ভাবছিলাম।
রঞ্জনা একটু হেসে উঠল, এই প্রথম বোধহয় আমার কথা ভাবলেন?
এর আগেও ভেবেছি।
সত্যি ভেবেছেন?
ভাবব না কেন বল? তোমাদের সবার সঙ্গে যখন আমার এত হৃদ্যতা, তখন তোমার কথা ভাবব না কেন?
আগে জানতে পারলে আমার একটু উপকার হতো।
উপকার হতো মানে?
যখন জানাননি তখন ওসব কথা ছাড়ুন।
আমি আর কোনো কথা না বলে একটা সিগারেট ধরালাম।
রঞ্জনা হাসতে হাসতে বললো, সিগারেটের গন্ধ আমার খুব ভালো লাগে।
আমি হাসলাম, তাই নাকি?
সত্যি। দারুণ ভালো লাগে।
দেবু সিগারেট খায়?
ও আবার সিগারেট খাবে?
তার মানে?
অত গুড বয় কখনো সিগারেট খায়?
তোমার ভালো লাগে জানলে নিশ্চয়ই খাবে।
আপনি তাহলে ওকে চেনেননি।
আমি আবার চুপ করে সিগারেট টানতে লাগলাম। রঞ্জনাও একটু চুপ করে রইল। তারপর হাসতে হাসতে বললো, হোস্টেলে থাকার সময় আমরা কয়েকজন মেয়ে মাঝে মাঝেই সিগারেট খেতাম।
আমি হাসলাম, সত্যি?
সত্যি নয়তো মিথ্যে বলছি? একটা সিগারেট দিন, খেয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। ও যেন মজা করে বললো।
আমি হাসতে হাসতেই ওকে একটা সিগারেট অফার করলাম। ও সিগারেটটা হাতে নিয়ে বললো, এ ঘরে না, ভিতরের ঘরে চলুন।
কেন?
হঠাৎ যদি রাধাকিষণ এসে পড়ে তাহলে…
চলো।
দুটি বেডরুমের একটিতে আমি পড়াশুনা কাজকর্ম করি, অন্যটায় শুই। স্টাডিতেই ঢুকলাম। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললাম, বসো।
রঞ্জনা বসল।
আমি লাইটার জ্বেলে ওর মুখের সামনে ধরতেই ও একটানে সিগারেটটা ধরিয়ে নিল। পর পর কয়েকটা টান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, অনেক কাল পরে সিগারেট খেতে বেশ লাগছে।
আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হোস্টেল ওয়ার্ডেন মাঝে মাঝে হঠাৎ আমাদের রুমে এলে কি কাণ্ডটাই হতো!…
কি হতো?
চারজন মেয়ের কেউ না কেউ সিগারেট খেতই। তাছাড়া সবার টেবিলেই সিগারেট-দেশলাই পড়ে থাকত।
তাই নাকি?
হোস্টেলে থাকার যে কি আনন্দ সে আপনি কি বুঝবেন?
আমি হাসলাম।
আপনাকে নিয়েই কি হোস্টেলে কম মজা হতো?
চমকে উঠলাম, আমাকে নিয়ে?
হ্যাঁ, আপনাকে নিয়ে। আপনার জন্য আমাকে সবাই জার্নালিস্ট বলত…
সে কি?
এম. এ. পরীক্ষা দেবার পরই আমার বিয়ে হয়ে গেল, নয়তো আমি ঠিক জার্নালিজম করতাম।
রিয়েলি?
সত্যি বলছি জার্নালিজম আমার খুব ইন্টারেস্টিং লাগে।
ফরেন সার্ভিসের চাইতেও?
অব কোর্স। ফরেন সার্ভিসের সবাই বড় চালিয়াত হয়।
জার্নালিস্টরা হয় না?
সিগারেটটা শেষ হয়ে যেতেই অ্যাশট্রেতে ফেলে দিল রঞ্জনা। বললো, ওসব বাদ দিন। ভাবতে গেলেও মন-মেজাজ খারাপ হয়।
মন-মেজাজ খারাপ হবে কেন?
যাই হোক আপনি সত্যি একটা বিচিত্র মানুষ। আর যাই থাক মন বলে কোনো পদার্থ আপনার নেই।
আমি আর পারলাম না। চেয়ারটা টেনে ওর খুব কাছে গিয়ে বললাম, আমার দিকে তাকাও।
ও আমার চোখের পর দৃষ্টিটা আনতেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মনের কথাটা খুলে বলবে?
রঞ্জনা বেশ জোরেই হেসে উঠল, এই পৃথিবীতে কোনো মানুষটা মনের কথা খুলে বলে বলুন তো? তাছাড়া আপনাকে বলে আমার লাভ?
লাভ-লোকসানের কথা আমি জানি না। তবে তোমার কথা শুনে বেশ বুঝতে পারি তোমার যেন কি একটা গোলমাল হয়ে গেছে।
তাতে তো আপনার কোনো ক্ষতি হয়নি।
তোমার হয়েছে?
হলে কি আপনি ক্ষতিপূরণ দেবেন?ও আমার প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করতে করতে বললো, আপনার সে ক্ষমতা নেই।
কি এমন ক্ষতি তোমার হলো যে আমি ক্ষতিপূরণ করতে পারব না?
আপন মনে সিগারেট ধরাল, আমি সিগারেট খাচ্ছি বলে রাগ করছেন?
না।
রাগ না করলেও মনে মনে নিশ্চয়ই খারাপ ভাবছেন?
শখ করে সিগারেট খাচ্ছ, খারাপ ভাবব কেন?
খুব জোরে সিগারেটে টান দিয়ে রঞ্জনা একটু মুচকি হাসল, আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
নিশ্চয়ই ভালোবাসি। তুমি সুভাষদার মেয়ে। তোমাকে ভালোবাসব না?
আঃ! এর মধ্যে আবার বাবা-মাকে টানছেন কেন?
আমি চুপ করে রইলাম।
রঞ্জনা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে বললো, কোনদিন মুখ ফুটে আমার একথা বলতে হবে ভাবিনি, কিন্তু আজ আর না বলে পারছি না…