জবাব দিয়েছেন?
না, এখনও দিইনি। দু একদিনের মধ্যেই দেব।
এবার দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, রঞ্জনাকে আপনার দাদার ভালো লাগছে তো?
দাদা তো ওর প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত।
তাই নাকি?
ওরও দাদাকে খুব ভালো লেগেছে।
ভালো। খুব ভালো। অমন দাদাকে ভালো না লাগার তো কোনো কারণ নেই।
এবার রঞ্জনা বললো, সত্যি দাদার মতো মানুষ হয় না। বি-এইচ-ইউতে অনেক পণ্ডিত মানুষ দেখেছি কিন্তু দাদার মধ্যে পাণ্ডিত্য আর হিউম্যান কোয়ালিটিজ সমান।
আমি সমর্থন জানালাম, ঠিক বলেছ। এবার একটা সিগারেট ধরিয়ে দেবব্রতকে জিজ্ঞাসা করলাম, রঞ্জনাকে আপনার ভালো লেগেছে তো?
এক মুহূর্তের জন্য দেবব্রত একটু ভাবল। আমার মনে হয় আমার চাইতে আরো ভালো আরো কোয়ালিফায়েড ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হওয়া উচিত ছিল।
এবার রঞ্জনার দিকে ফিরে বললাম, কি রঞ্জনা, তোমারও কি ধারণা আরো ভালো মেয়ের সঙ্গে ওঁর বিয়ে হওয়া উচিত ছিল?
রঞ্জনা একবার দেবব্রতর চোখে চোখ রেখেই ঘুরিয়ে নিল। হলে নিশ্চয়ই আরো খুশী হতে আরো সুখী হতো।
আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজব করার পর হঠাৎ ও জিজ্ঞাসা করল, রাত্রে আপনার খাওয়া-দাওয়ার কি হবে?
রাত্রে বিশেষ কিছু খাব না।
কেন? চাকর নেই বলে?
ঠিক তা নয়। দুপুরে খুব বেশি খেয়েছি।
রঞ্জনা একটু হাসল। ঘরে চাল-ডাল তরি-তরকারি নেই?
ব্যাচেলার বলে কি সংসার করি না? সব কিছু আছে। বেশ গর্বের সঙ্গেই জানালাম।
কোথায় আছে দেখিয়ে দিন তো। বলেই ও উঠে দাঁড়াল। দেবব্রতর দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি দাদার ওষুধটা কিনে আনো। এর মধ্যে আমার এদিকের কাজ হয়ে যাবে।
দেবব্রতও সঙ্গে সঙ্গে উঠল।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, রঞ্জনা, তুমি কি বিয়ের পর সন্ন্যাসিনী হয়েছ?
ওরা দুজনেই হাসল।রঞ্জনা বললো, আপনার জন্য দুটো ডালভাত রান্না করলেই যদি সন্ন্যাসিনী হওয়া যায় তাহলে আমি রাজি।
আমার উপকার না করে বাড়ি যাও। ডক্টর চৌধুরী নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য চিন্তা করছেন।
দেবব্রত বললল, দাদা এখানে নেই। কাল সকালে ফিরবেন।
আমি আরো কয়েকবার বললাম কিন্তু ফল হলো না। দেবব্রত আমার কথা শুনল না। স্ত্রীর কথা শুনে ওষুধ আনতে গেল। দেবব্রত বেরিয়ে যেতেই বললাম, ঠিক করলে না রঞ্জনা।
কেন?
হাজার হোক আমি ব্যাচেলার। তার উপর বয়সটা খুব বেশি নয়, আমার জন্য তোমার এতটা ব্যগ্রতা না দেখানই ভালো হতো।
রঞ্জনা একটু জোরেই হাসল। হঠাৎ হাসি থামিয়ে বললো, কে আপনাকে ব্যাচেলার থাকতে বলেছে?
আমার কথা ছাড়ো। তবে ভবিষ্যতে এমন উৎসাহ দেখিও না।
কেন?
হয়তো তোমার ক্ষতি হতে পারে।
রঞ্জনা হাসল, আচ্ছা সে দেখা যাবে। এখন কিচেনে চলুন তো।
কি করব? বাধ্য হয়ে ওকে সব কিছু দেখিয়ে দিলাম। সামান্য সাহায্য করলাম। দুটি ওভেনে একসঙ্গে রান্না শুরু হলো।
ফ্রিজ রয়েছে অথচ মাছ, মাংস, ডিম কিছুই রাখেন না কেন?
তুমি আসবে জানলে নিশ্চয়ই রাখতাম।
এবার থেকে রাখবেন।
তুমি এসে রান্না করে দেবে?
রোজ না হলেও মাঝে মাঝে এসে করব বৈকি।
তা না হলে নাটক জমবে কেন?
রঞ্জনা হাসল।
একটু পরে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, দেবব্রতর ছুটি কতদিন আছে?
আর এক সপ্তাহ।
তুমি ওঁর সঙ্গেই ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছ?
হ্যাঁ যাচ্ছি তবে মাঝে মাঝেই আমি দিল্লি আসব।
কেন?
দাদার জন্য। তরকারি নামিয়ে একবার আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসির রেখা ঠোঁটের পাশে লুকিয়ে বললো, তাছাড়া আপনিও তো এখানেই আছেন।
হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, আমি এখানে আছি বলেই তো এতদিন নৈনিতালে কাটিয়ে এলে।
রমার মুখের চেহারাটাই পাল্টে গেল। আমার দিকে তাকাতেই ভয়ে আমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। তারপর বললো, আমি বলেই নৈনিতালের লেকের জলে সবকিছু ডুবিয়ে দিতে পারিনি।
তা আমি জানি।
তাহলে এসব কথা আর কোনদিন বলবেন না।
তুমি মাঝে মাঝে আসবে তো?
বোধহয় আপনি না চাইলেও আমাকে আসতে হবে।
রান্না প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। আমি ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলাম। একটু পরেই দেবব্রত এলো।
ওষুধ পেয়েছেন?
হ্যাঁ পেয়েছি।
কবে ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছেন?
এইত শুক্রবারে।
আবার কবে দিল্পি আসছেন?
আমি আর এর মধ্যে আসছি না। ও আসবে।
রঞ্জনা এলো।
আমি দেবব্রতকে বললাম, আপনার স্ত্রীর পরোপকার করার বাতিকটা একটু কন্ট্রোল করবেন।
দেবব্রত বললো, আপনার জন্য সামান্য একটু রান্না করল বলে…
ওর কথার মাঝখানেই রঞ্জনা বললো, খুব অন্যায় করেছি। এর পরদিন মাছ মাংস রান্না করে আজকের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে যাব।
আমি মাছ মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠল।
০৫. ভগবানে বিশ্বাস বা ভক্তি
ভগবানে বিশ্বাস বা ভক্তি থাকুক বা নাই থাকুক পূজার প্যান্ডেলে দেবী মূর্তি দেখতে বেশ লাগে। একটু আনন্দের ছোঁয়া, একটু পূর্ণতার স্পর্শ নতুনত্বের স্বাদ সবাই পায়। বসন্ত দূরে থাক, কাছে থাক, মনে মনে রঙ লাগে। তারপর হঠাৎ যখন প্যান্ডেলটা খালি হয়, দেবীর বেদী শূন্য তখন বিষণ্ণতার করুণ সুর মনের মধ্যে বেজে ওঠে।
দেবব্রত আর রঞ্জনা ব্যাঙ্গালোরে চলে যাবার সপ্তাহখানেক পরে ডক্টর চৌধুরী আমাকে ঠিক এই কথাগুলোই বলছিলেন।
সকালবেলাতেই ওঁর টেলিফোন এলো, আমি দেবতোষ চৌধুরী কথা বলছি।
বলুন, কেমন আছেন?
আছি ভালোই তবে মনটা বিশেষ সুবিধের নয়।