না তা ঠিক নয়, তবে নাসেরের মতো অন্যান্য লীডাররা ঠিক অতটা প্রগ্রেসিভ নয় বলেই মাঝে মাঝে আমরা অনেক ডিফিকাল্টি ফেস করছি।
একজন নেতাকে কেন্দ্র করে কি একটা দেশের প্রতি আমাদের পলিসি ঠিক করা উচিত?
সমস্ত মিডল-ইস্ট আর ব্ল্যাক আফ্রিকাতে দেশের চাইতে ব্যক্তিই বড়।
হঠাৎ রমা ঘরে ঢুকে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আমাকে একটু বইয়ের দোকানে নিয়ে যাবেন?
কি বই কিনবে?
আমার কয়েকটা রেফারেন্স বই।
এমনি বইয়ের দোকান তো অনেক চিনি কিন্তু তোমাদের রেফারেন্স বই ঐসব দোকানে পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ।
না পাওয়া গেলেও ওরা বলে দেবে নিশ্চয়ই।
হ্যাঁ, তা তো বলবেই।
খাওয়া-দাওয়ার পরে নিয়ে যাবেন।
খাওয়া-দাওয়ার পর তো দুরের কথা, আজ রাত্রেও আমি বাড়ি ফিরছি কিনা সন্দেহ।
সুভাষদা বললেন, সেই ভালো। তুমি আর আজ বাড়ি যেও না।
রমা একটু বিরক্ত হয়েই বললো, বাড়ি ফিরবেন না বলে কি দু এক ঘণ্টার জন্য বইয়ের দোকানেও যাওয়া যায় না?
হঠাৎ খেয়াল হলো আজ রবিবার। আজ রবিবার তো সব দোকান আজ বন্ধ।
কাল আবার ভুলে যাবেন না।
আমি হাসি। বলি, তোমার হুকুম আমি ভুলব?
আমি হুকুম করব আপনাকে? অত সাহস আমার নেই।
রমা চলে যাচ্ছিল। সুভাষদা ডাক দিলেন, একটু দাঁড়া। এবার আমার দিকে তাকিয়ে সুভাষদা জিজ্ঞাসা করলেন, ভালো জিন আছে, একটু খাবে?
আমি রমার দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, আপনার স্ত্রী আর মেয়ে অসন্তুষ্ট না হলে একটু খেতে পারি।
রমা আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ড্রইংরুম থেকে বেরিয়ে গেল। একটু পরেই দু গেলাস জিন দিয়ে বললো, অসন্তুষ্ট না হয়েই দিলাম।
এ বাড়িতে আমার জন্য কেউ কোনোদিন অসন্তুষ্ট হবে না, তা আমি জানি।
সত্যিই তাই; দুপুরবেলায় খেতে বসে ছোলার ডালে নারকেল দেখেই বৌদিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার এ দুর্বলতার কথা জানলেন কি করে?
সব দুর্বলতার কথা কি আমাকে বলেছ?
তেমন কিছু দুর্বলতা তো আমার নেই বৌদি।
খেতে খেতে অবাক লাগে কবে কোনদিন কোথায় বৌদিকে বলেছিলাম ছোলার ডালে নারকেল বা মিষ্টি চাটনী খেতে ভালোবাসি, তাও ওঁর মনে আছে। ভোলেননি মাছে বেশি কাঁটা থাকলে খেতে পারি না। আমি খাওয়া-দাওয়ার শেষে খুব গম্ভীর হয়ে বললাম, আমি আজই আমার চাকরটাকে বিদায় করে দেব।
বৌদি জিজ্ঞাসা করলেন, কেন?
এই রান্না খাবার পর আর ওর রান্না মুখে তুলতে পারব?
ওঁরা তিনজনেই হাসলেন।
বৌদি বললেন, কায়রোতে তোমার দাদার আন্ডারেই শ্রীনিবাসন সেকেন্ড সেক্রেটারি ছিল। হোম লিভ থেকে ফিরে যাবার সময় কয়েকটা নারকেল নিয়ে গিয়েছিল। আমাকে দুটো নারকেল দিয়েছিল। আমরা দুজনেই বলাবলি করতাম ঐ সময় তুমি যদি একবার হঠাৎ এসে হাজির হও…
তাহলে খুব নারকেল খাওয়াতেন! এই তো?
খুব না হলেও খাওয়াতাম।
সে দুঃখ এবার ঘুচিয়ে নেবেন।
ওসব কথা বাদ দাও। তবে এবার সময় পেলেই চলে আসবে।
সময় না পেলেও আসব।
ওঁরা আবার হাসেন। সুভাষদা উঠে গেলেন, আমি উঠছি।
বৌদি বললেন, যাও! তোমার মতো বেরসিক লোক না বসে থাকাই ভালো।
রমা প্রতিবাদ করে, তুমি বাবাকে অমন করে বলবে না তো!
কি এমন খারাপ কথা বললাম?
আমি হাসতে হাসতে রমাকে বললাম, আমার ব্যক্তিত্বের কাছে তোমার বাবা একটু ম্লান হয়ে যাচ্ছেন বলেই বোধহয়…।
তা তো বটেই! আপনার মতো ব্রিলিয়ান্ট লোক তো আমরা কোনোদিন দেখিনি!
এ বাড়িতে তুমিই বোধহয় আমাকে ঠিক সহ্য করতে পার না, তাই না রমা?
রমা কিছু বলার আগেই বৌদি বললেন, তোমাকে দেখেই তো ও মাঝে মাঝে জার্নালিস্ট হতে চায়।
পরের দিন বইয়ের দোকানে নিয়ে যাবার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি জার্নালিস্ট হতে চাও নাকি?
হতে চাইলেই কি হতে পারব?
কেন হতে পারবে না?
সে অনেক অসুবিধে আছে।
অনেক অসুবিধা আবার কি?
সে আপনি বুঝবেন না।
আমি বোধহয় তোমার কোন ব্যাপারই বুঝব না, তাই না রমা?
রমা কোন জবাব দিল না। চুপ করে রইল। একটু পরে জিজ্ঞাসা করল, আপনার বাড়িটা কতদূর?
দিল্লিতে কোনো কিছুই কাছাকাছি নয়; এমনকি মানুষগুলোও না।
রমা হাসল। অনেক দূর?
খানিকটা দূর ঠিকই, তবে ইচ্ছা করলে সে দূরত্ব অতিক্রম করা যায়।
মোতিবাগ থেকে শান্তি পথ দিয়ে তিন মূর্তি ভবন-সাউথ অ্যাভিনিউ পার হয়ে আস্তে আস্তে কনট প্লেসের কাছে এলাম। যন্তর মন্তরের কাছে গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে বেরুতেই রমা বললো, কি দারুণ গরম!
এই মে-জুন মাস দুটো সত্যি বড় খারাপ।
আর এই দুটো মাসই আমাকে এখানে কাটাতে হবে।
হাঁটতে হাঁটতে বললাম, গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি তো মাঝে মাঝে সিনেমা হলে ঢুকে পড়ি।
আপনি বুঝি খুব সিনেমা দেখেন?
বিশেষ সময় তো পাই না, তবে মাঝে মাঝে দেখি।
আপনি কখন অফিস যান?
পার্লামেন্ট থাকলে এগারোটার মধ্যে বেরুতে হয়; নয়তো একটা-দেড়টার পর অফিস যাই।
কখন ফেরেন?
তার কোনো ঠিক নেই।
ঠিক নেই মানে রাত্রে আটটানটা হয়ে যায়?
কাজ না থাকলে আটটানটা, থাকলে আরো বেশি রাত হয়।
সে কি?
সপ্তাহে দুএকদিন সাড়ে এগারোটা বাবোটা হয়ই।
রমা চমকে ওঠে, বলেন কি?
আমরা যদি রাত্রে কাজ না করি তাহলে ভোরবেলায় কাগজে সব খবর পাবে কি করে?
দুটো-তিনটে দোকানে ঘোরাঘুরি করে ওর বইগুলো পাওয়া গেল। আবার হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে ফিরে এলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবে?