ও! লাভলি! শুনেই মেমসাহেব আত্মহারা হয়ে যান।
আধ গেলাস হুইস্কী একসঙ্গে গলায় ঢেলে দিয়ে কমিশনার সাহেব বললেন, খামিনী, তুমি শুধু আমার বন্ধু না, আমার স্ত্রীরও বন্ধু।…
ইওর একসেলেনসী, আমি কী আপনাদের বন্ধু হবার যোগ্য? আমি নিছক ভক্ত মাত্র!
একে হুইস্কী, তার উপর অত দামী হীরের আংটি। বার্জম্যান ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললেন, নো খামিনী, তুমি আমাদের দুজনেরই বন্ধু।
পেটে আরও দু-পাঁচ পেগ হুইস্কী পড়ার পর কমিশনার গড় গড় করে বলে যান, ইউ সী খামিনী, আমি বোকা না..
ছি, ছি, ইওর একসেলেনসী, এ কি কথা বলছেন?
…হার ম্যাজেস্টি দ্য কুইন আমাকে ভাল না বাসলে এই সাঁইত্রিশ বছর বয়সে আমি কমিশনার হই না কিন্তু আমি জানি অনেকেই আমাকে পছন্দ করে না। এমন কি বহু ব্লাডি নেটিভ জেন্টলম্যানও আমাকে এড়িয়ে চলে।
ইওর একসেলেনসী, ওরা পাপী, ওরা হতচ্ছাড়া।
কমিশনার সাহেব ওর কথা শুনেও শোনেন না। উনি আপনমনে বলেন, তুমি যেভাবে আমাদের সেবা করছ, তার জন্য আমরা শুধু খুশি না, উই আর গ্রেটফুল।
এটা তো আমার কর্তব্য ইওর একসে..
হঠাৎ বার্জম্যান গর্জে ওঠেন, স্টপ! ব্লাডি খামিনী! কাম অন! আমরা তিনজনে নাচব!
কামিনীরঞ্জনের জীবনে সে এক অবিস্মরণীয় দিন। পুণ্য তিথিও বলা চলে।
তিনজনে মিলে নাচ শুরু হলেও নেশার ঘোরে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বার্জম্যান ঢলে পড়লেন কিন্তু মেমসাহেব কামিনীরঞ্জনকে নিয়ে নাচ থামালেন না। কিছুতেই না। মাঝে মাঝে মেমসাহেব ওয়াইনের গেলাসে চুমুক দেন। কামিনীরঞ্জনও একটু হুইস্কী দিয়ে শুকনো গলা ভিজিয়ে নেন। নাচ চলে মৃদুমন্দ গতিতে। নাচতে নাচতে কথাও হয়।
জানো খামিনী, বার্জ কী বলে?
কী বলেন?
বার্জ বলে, খামিনী নেটিভ হলেও বোধহয় ইংরেজ মহিলার গর্ভে জন্মেছে। তা না হলে এত সুন্দর দেখতে হয়?
কামিনীরঞ্জনের মনে খুশি ও গর্বের বন্যা বয়ে যায়। বলেন, হিজ একসেলেনসী, আমাকে সত্যি স্নেহ করেন।
আই অলসো লাভ ইউ খামিনী!
একশবার! হাজার বার তা স্বীকার করি।
রাত আরো একটু গম্ভীর হয়। বার্জম্যান সাহেব মুহূর্তের জন্য আত্মসম্বিৎ ফিরে পেয়েই আবার একটু হুইস্কী খেয়েই শুয়ে পড়েন। চোখ বন্ধ করেই উনি জড়িয়ে জড়িয়ে বলেন, নাচ থামালেই আমি তোমাদের চাকরি খেয়ে দেব।
গভীর রাত্রি ও ওয়াইনএর সম্মিলিত মাদকতার প্রভাবে মেমসাহেবও কেমন যেন একটু বদলে যান। কামিনীরঞ্জনকে আরো কাছে টেনে নেন। তারপর হঠাৎ একটি চুম্বন।
কামিনীরঞ্জন চমকে ওঠেন। অনিন্দে, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলেন, মেমসাহেব, একি করলেন?
খামিনী, ইউ আর এ লাভলি ম্যান! তোমার সঙ্গে নাচতে আমার খুব ভাল লাগছে।
বাট হিজ একসেলেনসী…
ড্যাম ইওর হিজ একসেলেনসী! ও যদি জনস্টোনের ঐ হতভাগী বউটাকে নিয়ে রেগুলার স্ফুর্তি করতে পারে, তাহলে আমি তোমাকে কেন কিস করতে পারব না?
মেমসাহেবের কথা শুনেও ওর ভাল লাগে। সারা শরীর রোমাঞ্চিত হয় কিন্তু হিজ একসেলেনসীর সামনে…
মেমসাহেব এবার ওকে দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আবার একটি চুম্বন করেন।
এবার আর কামিনীরঞ্জন চুপ করে থাকতে পারেন না। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলেন, মেমসাহেব, হিজ একসেলেনসী আমাকে গুলী করে মারবেন।
মিসেস বার্জম্যান হাসতে হাসতে বলেন, এখন আমি তোমাকে নিয়ে সারা রাত শুয়ে থাকলেও তোমার হিজ একসেলেনসী জানতে পারবে না। ভুলে যেও না, প্রায় দুবোতল হুইস্কী ওর পেটে গেছে।
দিন এগিয়ে চলে। কমিশনার দম্পতির সঙ্গে কামিনীরঞ্জনের সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়। কমিশনার সাহেব ট্যুরে যাবার সময় মাঝে মাঝে স্ত্রীকে ছাড়াও কামিনীরঞ্জনকেও সঙ্গে নিয়ে যান। আবার সাহেব একলা গেলে কামিনীরঞ্জন সকাল সন্ধ্যেয় কোঠীতে গিয়ে মেমসাহেবের তদারকী করেন।
এখন আর বার্জম্যান সাহেবকে কেউ এড়িয়ে চলেন না। বরং সবাই ওকে খুশি করতে ব্যস্ত। রাজা-মহারাজা-জমিদাররা ছাড়াও গণ্যমান্য নেটিভরা ওকে নিত্য উপঢৌকন পাঠান। হাজার-হাজার লাখ-লাখ মূল্যের সেসব উপহার। সাহেব-মেমসাহেব দুইজনেই খুশি কিন্তু দুইজনেই কামিনীরঞ্জনকে বলেন, এখন সবাই আমাদের খুশি করতে ব্যস্ত কিন্তু আমরা জানি তুমি ছাড়া আর কেউ আমাদের রিয়েল ফ্রেণ্ড না।
হিজ একসেলেনসী, আমি কী এই দুর্লভ সম্মানের উপযুক্ত?
রাজকার্যের জন্য কমিশনার সাহেবকে মাঝে মাঝেই বাইরে যেতে হয়। কখনো দুএকদিন, কখনো আবার পাঁচ-সাতদিন। এই অবসরে মেমসাহেবের সঙ্গে কামিনীরঞ্জনের সম্পর্ক হঠাৎ মোড় ঘুরল।
সেদিন সন্ধ্যে থেকেই দারুণ জল-ঝড়। কামিনীরঞ্জন ঐ জল-ঝড় উপেক্ষা করেই মেমসাহেবের খোঁজ-খবর নিতে এলেন কোঠীতে। ইচ্ছা ছিল ঘণ্টাখানেক থেকেই ফিরে যাবেন কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির বেগ এত বাড়ল যে ঘর থেকে বের হওয়াই অসম্ভব। এইসব চিন্তা-ভাবনা করতে করতেই দুজনে একটু-আধটু ড্রিঙ্ক করলেন। তারপর ঝড়-বৃষ্টির তেজ আরও বাড়তেই মেমসাহেব বললেন, খামিনী, এই ঝড়-বৃষ্টির রাত্রে আমি শুধু চাকর-বাকরদের ভরসায় থাকতে পারব না। আজ তুমি আমার কাছে থাকবে।
না, না, মেমসাহেব তা হতে পারে না। আপনি প্লীজ..
হোয়াট না? না? তুমি আজ আমার কাছে থাকবে। এটা আমার অর্ডার।
মনে মনে যত ইচ্ছাই থাক, মুখে কামিনীরঞ্জন বার বার আপত্তি করলেন। অনুনয়-বিনয়ও করলেন কিন্তু কে কার কথা শোনে? আরও খানিকটা ড্রিঙ্ক করার পর মেমসাহেব কামিনীরঞ্জনকে নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকলেন।