লন্ডন যাবার কথা শুনেই বন্দনা চঞ্চল হয়ে ওঠে, তুমি লন্ডনে আসছ?
না। তবে গেলে মজা হতো।
এসো না দাদা। আমরা একটা বড় ফ্যাট নেব।
ঘড়ি দেখে তরুণ চমকে উঠল, মাই গড! সওয়া তিনটে বাজে।
তাই নাকি? বন্দনার কাছে যেন তেমন রাত হয়নি।
যাও, যাও, শিগগির শুতে যাও।
বন্দনা তরুণের বিছানার বেডকভার তুলে ব্ল্যাঙ্কেটগুলো ঠিক করে নিজের শোবার ঘরে চলে গেল।
ছোট্ট নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে বিকাশের স্যুটটা ঠিক করে ওয়ার্ডরবে তুলে রাখল। নিজে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে খোঁপা খুলে চুল আঁচড়ে নিল। তারপর কাপড়-চোপড় ছেড়ে নাইটি পরে সুইচ অফ করে লেপের তলায় ঢুকে পড়ল।
একটু এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করে শুতে গিয়েই বিকাশ জেগে গেল!
তুমি ঘুমাওনি? বন্দনা জানতে চাইল।
ঘুমোব না কেন? তুমিই তো ঘুম ভাঙিয়ে দিলে।
উঃ কি মিথ্যে কথা তুমি বলতে পার।
মিথ্যে কথা? তুমি রোজ আমার ঘুম ভাঙাও না?
কখখনো না। তুমিই জেগে জেগে গুণ্ডামি করো।
গুণ্ডামি নয়, বলল কর্তব্য। মাই সেকরে ডিউটি টু মাই বিলাভে অ্যান্ড একসাইটিং ওয়াইফ
অন্ধকারের মধ্যেও যেন দুজনে দুজনকে দেখতে পেল, দেখতে পেল হাসি হাসি মুখ।
বন্দনা যেন গাম্ভীর্যের সঙ্গেই হুঁশিয়ার করে, যতই ফ্লাটারি করো, আজ সুবিধে হচ্ছে না।
আই অ্যাম নট কনসার্নড় উইথ মাই সুবিধে, বাট ইওর অসুবিধে।
আজ দেখছি তোমার মাথায় ভূত চেপেছে, বাট ফর গডস্ সে ডোন্ট ডিসটার্ব মী।
বন্দনা একটু পরেই আবার বলে, জান কটা বাজে?
কটা?
চারটে বেজে গেছে।
সো হোয়াট?
কাল সকালে দেরি করে উঠলে দাদার কাছে মুখ দেখানো যাবে না। ভাববে…!
কিছু ভাববেন না, বরং জানবেন বেশ সুখেই আছে।…
সত্যি সত্যি পরদিন সকালে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেল। তরুণ অফিস যাবার জন্য তৈরি হয়ে গেছে। প্যান্ট্রিতে চা-ব্রেকফাস্টের উদ্যোগ আয়োজন করে লিভিংরুমে বসে বসে কয়েকটা পিরিওডিক্যাল উল্টে দেখছে।
ওদিকে ওরা দুজনে উঠে কেউই আগে বেরুতে চাইছিল না। অনেক ঠেলাঠেলির পর দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়ে এলো।
কি, ঘুম হলো? তরুণ জানতে চাইল।
মুহূর্তের জন্য বন্দনা-বিকাশের সলজ্জ দৃষ্টি-বিনিময় হলো। তারপর বন্দনা বলল, এখনও জানতে চাইছ ঘুম হলো কিনা?
কাল তোমরা বেশ টায়ার্ড ছিলে। অত রাত করে শুতে যাওয়া ঠিক হয়নি।
বিকাশ কোনোমতে বলল, অফিস যাবার চাপ না থাকলে ঘুম যেন ভাঙতে চায় না।
নিশ্চয়ই ঘুমোবে। খাবে-দাবে ঘুমোবে বৈকি! কদিন রিল্যাক্স করে নাও।
দাদা, তুমি চা খেয়েছ?
রোজই তো একলা খাই। তোমরা আসার পরও একলা একলা খাব?
বন্দনা চটপট চা-টা নিয়ে এলো। চা-টা খেয়ে উঠবার সময় তরুণ বলল, বুঝলে বিকাশ, বন্দনা যতদিন আছে ততদিন আমি আর কিছু কাজকর্ম করব না।
বিকাশ বেশ জোরের সঙ্গে বলল, নিশ্চয়ই করবেন না।
মাছ-মাংস সব কেনা আছে। দেখেছ তো?
বন্দনা বলে, কালকেই দেখেছি।
খুব ভালো করে খাবার-দাবার বানাও। আমি কিন্তু রোজ লাঞ্চ খেতে আসব। হাসতে হাসতে তরুণ বলে।
বন্দনা হাসতে হাসতে বলে, না আসবার কি কথা আছে দাদা?
তরুণ একবার হাতের ঘড়িটা দেখে বলল, ও। বড্ড দেরি হয়ে গেল।
বেরুবার আগে তরুণ একবার অফিসে কন্সাল জেনারেলকে টেলিফোন করল, স্যর, আমি এক্ষুনি আসছি।
ট্যান্ডন সাহেব জবাব দিলেন, কে তোমাকে আসতে বলেছে? বি হ্যাপি উইথ ইওর সিস্টার অ্যান্ড বিকাশ।
থ্যাংক ইউ ভেরি ম্যাচ স্যার! আই অ্যাম কামিং উইদিন হাফ অ্যান আওয়ার।
ট্যাভন সাহেব আর তরুণের সঙ্গে কথা বলতে চান না। একবার বন্দনাকে দাও তো। গুডমর্নিং।
গুডমর্নিং। কেমন আছ বন্দনা?
খুব ভালো।
কাল রাত্তিরে খুব জমেছিল তো?
হ্যাঁ, তা বেশ জমেছিল।
তোমার দাদাকে অফিসে আসতে দিচ্ছ কেন?
অফিসে না গেলেও চলবে?
একশো বার।
বন্দনা টেলিফোন নামিয়ে রেখে দেখল দাদা হাসছে।
তোমাকে অফিস যেতে হবে না।
তাই কি হয়? ট্যান্ডন সাহেব অমনি বলেন।
কিছুক্ষণ ধরে ভাইবোনে অনুরোধ-উপরোধের পালা চলল। শেষে সমস্যার সমাধান করল বিকাশ।
ঠিক আছে, চল আমরাও দাদার সঙ্গে অফিস যাই। কিছুক্ষণ থেকে সবাই আবার একসঙ্গে চলে আসব।
বন্দনা দুটো হাতে তালি বাজিয়ে বলল, দি আইডিয়া!
১৮. দুঃখের দিনগুলো কাটতে চায় না
দুঃখের দিনগুলো কাটতে চায় না কিন্তু সুখের দিনগুলো কেমন যেন ঝড়ের বেগে উড়ে যায়। বন্দনা-বিকাশকে নিয়ে তরুণের দিনগুলিও অমনি উড়ে গেল। দেখতে দেখতে বিকাশের ছুটি ফুরিয়ে এলো।
কটি দিন কত কি করল! কত কি দেখল! রবিবার সকালেই বিকাশ চলে যাবে। শনিবার সন্ধ্যায় তরুণ ওদের নিয়ে মার্কেটিং-এ বেরুল।
তোমরা তো লন্ডনে হাস পাপির জুতো পরে হৈ হৈ কর। এদের হাতে তৈরি জুতো জোড়া নিয়ে পরে দেখে কি চমৎকার।
বিকাশ বলল, আমার তিন-চার জোড়া ভালো জুতো আছে। আবার জুতোর কি দরকার।
তরুণ সেকথা কানেও তুলো না। এবার ঘুরতে ঘুরতে ছোট্ট একটা গলির মধ্যে এক এজেন্সি হাউসে হাজির হল।
হাউ আর ইউ মিঃ নোয়েল?
ফাইন, থ্যাংক ইউ স্যার।
এই হচ্ছে আমার বোন আর ব্রাদার-ইন-ল। ওদের জিনিসটা রেডি আছে তো?
বিকাশ-বন্দনা একটু মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।
নোয়েল সাহেব বললেন, আপনার জিনিস রেডি রাখব না?
এক মিনিটের মধ্যে ভিতর থেকে ঘুরে এসেই টেবিলের ওপর ব্রাউনের টুরিস্ট মডেল একটা টিভি সেট খুলে দেখালেন।
বন্দনা বলল, একি দাদা! টিভি সেট কিনছ কেন?