তোর জন্য। হয়তো বলাইদার জন্যও।
আরতি এবার একটু সিরিয়াস হয়।
দ্যাখ মণিকা, একটা কথা বলি। এমনি টুক-টাক অ্যাকসিডেন্ট বহু মেয়ের জীবনেই ঘটে কিন্তু আমরা স্বীকার করতে পারি না। স্বীকার করতে চাই না…
মণিকা প্রতিবাদ করে। কিন্তু ঠিক আগের মতো জোর করে নয়। তুই যেন সব মেয়ের কথা জানিস!
সবার কথা না জানলেও ভিক্টোরিয়া আর ইউনিভারসিটির কিছু মেয়ের কথা জানি…
মণিকার মনে দ্বিধা আসে। আর এসব আলোচনা করতে চায় না। এই সবই আলোচনা করবি নাকি বেরুবি।
আরতি উঠে দাঁড়ায় দাঁড়া। কিছু খাওয়া-দাওয়া করি। তারপর তোর কথা শুনি!
আমার আর কি কথা শুনবি?
গতবার তো শুধু ফটোটা দেখিয়েই পালিয়ে গেলি। কিছুই তো শোনা হলো না।
শোনাবার মতো এখনও কিছু হয়নি!
লুকোবার মতো কিছু না হলেও শোনাবার মতো নিশ্চয়ই অনেক কিছু হয়েছে।
একটু লজ্জা, একটু দ্বিধা এলেও আরতির মতো বন্ধুকে কিছু না বলে শান্তি পাচ্ছিল না মণিকা।
জানিস আরতি আমি যেন মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছি। ঠিক ভালো লাগছে না। তাছাড়া…
তাছাড়া কি?
ও এমন একলা একলা থাকে যে বড় দুশ্চিন্তা হয়। কাল সারারাত তো ঘুমোতেই পারিনি।
কেন?
নানা কারণে।
আরতি হাসে। বলে, যাই বলিস খুব ইন্টারেস্টিং হাজব্যান্ড হবে তোর। একবার আলাপ করিয়ে দিবি না?
ঠিক লাঞ্চ টাইমে মণিকা রাজভবনে টেলিফোন করল।
কি, খেতে বসেছ?
না। একটু দেরি আছে।
আমি আসব?
বারণ করেছি কোনোদিন?
লাঞ্চ খেয়েই তো আবার গভর্নরের কাছে দৌড়বে?
ইউ আর মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান গভর্নর টু মি।
তাইতো কেবল ট্যুর করে করে ঘুরে বেড়াও।
আরতি হঠাৎ টেলিফোনটা কেড়ে নেয় মণিকার হাত থেকে।
গুড আফটারনুন। আমি আরতি। মণিকার সঙ্গে আমিও থাকতে পারি তো?
উইথ প্লেজার।
নর্থ গেট পুলিশ অফিসের সামনে ট্যাক্সি দাঁড়াল! মণিকা একবার বাইরের দিকে মুখ বাড়াতেই সার্জেন্ট হাত নেড়ে ট্যাক্সিকে ভিতরে যেতে বলল। মার্বেল হলের সামনে পোর্টিকোতে ট্যাক্সি থামতেই একজন বেয়ারা এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল, মণিকা ব্যাগ থেকে টাকা বার করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ভিতরের দিকে ফিরতেই দুজন বেয়ারা সেলাম দিল। লিফট-এর সামনে আসতেই লিফট-ম্যানও সেলাম দিল।
মণিকাকে নিয়ে ফিস ফিস আলোচনার দিন শেষ হয়েছে রাজভবনে। নর্থ গেট পুলিশ অফিস থেকে শুরু করে সমস্ত বেয়ারা চাপরাশী-লিফটম্যানরাই চিনে গেছে মণিকাকে। আমজাদ, রমজান থেকে নটবর সবার সঙ্গেই ওর বেশ ভাব। ক্যাপ্টেন হঠাৎ কাজে বেরিয়ে গেলে মণিকা তো ওদের সঙ্গেই গল্প করে।
লিফট-এ উঠতেই মণিকা বলল, কি নটবর, তোমার ছেলের মুখে ভাত দেবে কবে?
নটবর কৃতজ্ঞতায় প্রায় গলে যায়। আর আমাদের ছেলের আবার মুখে ভাত!
আঃ। ওসব কথা বলে না। দিন ঠিক করে আমাকে খবর দিও।
নটবর আর উত্তর দিতে পারে না। লিট-এর দরজা খুলে দিয়ে মুখ নীচু করে শুধু মাথাটা কাত করে।
করিডোর দিকে হাঁটতে হাঁটতে আরতি বললে, তুই তো বেশ জমিয়েছিস!
দরজা নক্ করে ভিতরে ঢুকতেই ক্যাপ্টেন অভ্যর্থনা করল, আসুন, আসুন।
মণিকা আলাপ করিয়ে দিল, আমার বন্ধু আরতি। ভিক্টোরিয়ায় একসঙ্গে পড়তাম। তারপর এম-এ পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে গেল।
ক্যাপ্টেন মণিকাকে একটু শাসন করল, পুরো নামটা না বললে কি আলাপ করানো হয়?
মণিকা উত্তর দেবার আগেই আরতি বললো, আমি মিসেস আরতি সরকার।
থ্যাঙ্ক ইউ।
বড় কৌচটায় ওরা দুজনে আর ছোট কৌচে ক্যাপ্টেন বসল।
মিঃ সরকার কি কলকাতাতেই থাকেন?
মণিকা বললে, না উনি কার্শিয়াং-এর ডিভিশন্যাল ফরেস্ট অফিসার।
হোয়াট এ লাকি গার্ল? ইন্ডিয়াতে থেকেও সারা বছর কন্টিনেন্টাল ক্লাইমেট এনজয় করেন?
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে আরতি জবাব দেয়, হা! তা বটে! দ্বারভাঙা বিল্ডিং ছেড়ে ডি-এফ-ওর বাংলো! তাছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কফিহাউস বা বেকার ল্যাবরেটরির মাঠে আড্ডা না দিয়ে কিছু চোর-জোচ্চোর কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে নিত্য সন্ধ্যা কাটান নট এ ব্যাড থিং।
একটু থেমে আরতি হাসতে হাসতে বলে, তাই না?
মণিকা একটু শাসন না করে পারে না। আলতু-ফালতু কবি না তো আরতি। তোর মতো সুখে কটা মেয়ে থাকে বল তো?
সুখ? আরতি মুহূর্তের জন্য সিরিয়াস হয়। পরমুহূর্তে রং বদলায়। হাসতে শুরু করে। এক্সকিউজ মি ক্যাপ্টেন রয়, আপনি কি আমাদের লাঞ্চ খাওয়াবেন?
একশো বার। উইথ প্লেজার, বাট…
মণিকা জিজ্ঞাসা করল, আমজাদ কোথায়?
একটু বাইরে পাঠিয়েছি। এক্ষুনি আসবে।
কিছু আনতে পাঠিয়েছ।
হ্যাঁ।
কি?
ক্যাপ্টেন উঠে গিয়ে একটা টেলিগ্রাম এনে মণিকার হাতে দিল। আজ সকালেই মা-র কাছ থেকে পেলাম…
তোমার আজ জন্মদিন?
হ্যাঁ।
আরতি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে ডান হাতটা এগিয়ে দিল, উইস ইউ বেস্ট অফ লাক ক্যাপ্টেন।
হাসি মুখে হ্যাঁন্ডসেক করে ক্যাপ্টেন বলল, মেনি মেনি থ্যাঙ্কস।
মণিকা আবার প্রশ্ন করে, কই আমাকে তো কিছু বলেনি?
মা-র টেলিগ্রামটা পাবার পরই তোমাকে টেলিফোন করেছিলাম। শুনলাম বেরিয়ে গেছ।
তুমি টেলিফোন করেছিলে? একবার না, কয়েকবার।
এর মধ্যে দরজা নক্ করেই আমজাদ একটা বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকল। লিজিয়ে সাব।
প্যাকেটটা খুলে আন।
মণিকা জানতে চাইল, কিসের প্যাকেট?
মা কিছু মিষ্টি-টিষ্টি পাঠিয়েছেন আর কি! একটু আগেই আই-এ-সি থেকে জানাল, এলাহাবাদ থেকে একটা প্যাকেট এসেছে। তাই ভাবলাম মা-র দেওয়া মিষ্টিটা খেয়েই লাঞ্চ খাব।