ভাল লাগারই তো সময়।
আমাকে কী খুব রূপসী মনে করেন?
খুব বেশি রূপসী হলে আপনার সঙ্গে মেলামেশাই করতাম না।
অবাক হয় মণিকা। তার মানে?
বেশি সুন্দরীদের দিয়ে কোনো কাজ হয় নাকি?
অনেক সুন্দরীর সঙ্গে মিশেই কী এই অভিজ্ঞতা? জেরা করে মণিকা।
হাসতে হাসতে ক্যাপ্টেন বলে, Remember that the most beautiful things in the world are the most uselesspeacocks and Lilies for example.
আপন মনেই মণিকা বলে, শুধু রাশকি পড়েই কি এই অভিজ্ঞতা হয়?
নিশ্চয়ই… অত্যন্ত মার্জিতভাবে হাসতে হাসতে ঠাট্টা করলেও অন্য মেয়ের সঙ্গে ক্যাপ্টেনের ঘনিষ্ঠতার সামান্যতম ইঙ্গিত মণিকাকে ঈর্ষান্বিত করে। মজা লাগে ক্যাপ্টেনের।
তর্ক করবেন না বেরুবেন?
তর্ক করছি?
তর্ক করছেন না?
তাই বলে আপনি আমাকে যা তা বলবেন?
সুন্দরকে সুন্দর, ভালোকে ভালো বলব না?
ক্যাপ্টেন কি করে বোঝায় মণিকাকে? একথা কি বলা যায় যে The beauty shall no more be found অথবা চোখের আলোয় দেখেছিলাম চোখের বাহিরে। নবাব সিরাজদৌল্লার মতো কৈশোরের প্রারম্ভ থেকেই নারী-সাহচর্য উপভোগ করেনি ক্যাপ্টেন কমল রায় কিন্তু মেলামেশা তো করেছে বহুজনের সঙ্গে। এ-ডি-সি হয়ে কলকাতায় আসার পরই কি কম মেয়ের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হল? গ্র্যান্ড-গ্রেটইস্টার্ন-স্পেনসেস, ক্যালকাটা ক্লাবে বা কোচবিহার কাপের খেলার দিন টার্ফ ক্লাবে গেলে কত ললিত-লাবণ্যের দেখা হয়। কথা হয়, হাসি হয়, ঠাট্টা-মস্করা হয় কিন্তু তারা তো, আধেক ঘুমে নয়ন চুমে স্বপন দিয়ে যায় না। বাগানে কত ফুল ফুটে থাকে; যাদের ফ্লাওয়ার ভাস-এ রাখলে ভালো লাগে তাদের দিয়ে কি পূজোর অঞ্জলি দেওয়া যায়?
ক্যাপ্টেনের মনের এসব কথা কি কোনো ভাষায় ব্যক্ত করা যায়?
একটু পরে ক্যাপ্টেন আবার বলে, আজ আর আপনার সঙ্গে তর্ক করব না।
ঘাড় বেঁকিয়ে ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে মণিকা বলে, কেন?
তর্ক করলে কি গান শোনাবেন?
মাথাটা দোলাতে দোলাতে মণিকা বলে, বিশ্বাস করুন, আজকাল আর একেবারেই চর্চা করি না।
তাতে কি হয়েছে? আজ থেকেই না হয় আবার গানের চর্চা শুরু হবে।
ঘরের এপাশে-ওপাশে ঘুরে-ঘুরে ক্যাপ্টেন সিগারেট, দেশলাই, পার্স ও আরো কি কি পকেটে পুরে নিল। লম্বা আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে একবার চুলটা ব্রাশ করে নিল।
চলুন, বেরিয়ে পড়ি।
মণিকা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চলুন।
পাশাপাশি এগুতে গিয়েই একবার দুজনে দুজনকে দেখে নিল। মণিকা একটু লজ্জিত হল এমন করে চোখে চোখ পড়তে। চট করে বুদ্ধি খাঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করল, সবকিছু নিয়েছেন তো?
ক্যাপ্টেন থমকে দাঁড়িয়ে পকেট হাতড়ে বলল, দ্যাটস রাইট! ফোর্ট উইলিয়াম থেকে এক বন্ধুর গাড়ি নিয়ে এসেছি, কিন্তু চাবিটা নিতেই ভুলে গেছি।
তা না হলে পুরুষ মানুষ?
ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেবার জন্য তো আপনারা আছেন।
এ বহুবচনের অর্থ মণিকা বোঝে। মুখে কিছু বলে না, মনে মনে তৃপ্তি পায়।
রাজভবনের নর্থ-ইস্ট গেটের পাশে গাড়িটা একটা গাছের ছায়ায় ছিল। দরজার লক খুলে ক্যাপ্টেন জিজ্ঞাসা করল, কোথায় বসবেন? সামনে না পিছনে?
পিছনে বসলে লোকে যে আপনাকে ড্রাইভার ভাববে। হাসতে হাসতে মন্তব্য করে মণিকা।
ক্যাপ্টেন চুপ করে থাকে না। সামনে বসলে যে লোকে আপনাকে আমার স্টেনোগ্রাফার। ভাববে?
আমাকে দেখে কেউ স্টেনো ভাববে না।
এটা যে অফিস এরিয়া।
তবুও।
তবে কি ভাববে?
বিপদে পড়ে মণিকা। যা ইচ্ছে ভাবে ভাবুক।
ক্যাপ্টেনের পাশে বসে মণিকা।
এবার গাড়িতে স্টার্ট করে ক্যাপ্টেন প্রশ্ন করে, বলুন, কোথায় যাবেন? প্রস্তাব, পালটা প্রস্তাবের পর মণিকা বলল, চলুন, মধ্যমগ্রাম ঘুরে আসি।
সেখানে কি আছে?
আমাদের একটা ছোট্ট ফার্ম আছে।
ক্যাপ্টেনের মনে পড়ল মণিকার মা-ই একদিন বলেছিলেন, নিজেদের বাগানের শাক-সবজি কত কি আসে, কিন্তু খাবার লোক নেই।
ক্যাপ্টেন জানতে চেয়েছিল, কোথায় আপনাদের ফার্ম?
মধ্যমগ্রাম। একবার দেখে এসো, ভালো লাগবে। দু-এক বছর পর উনি তো ওখানেই থাকবেন বলেছেন।
স্টিয়ারিংটা ভালো করে ধরে গিয়ার দিতে দিতে মণিকাকে বলল, ঠিক আছে বাট-লেট আস হ্যাঁভ সাম টি বিফোর দ্যাট।
চলুন। আপনারা হোটেল-রেস্তোরাঁয় না গেলে ঠিক শান্তি পান না, তাই না?
ক্যাপ্টেন হাসে। বলে, যারা নিজের ঘর বাঁধতে পারেনি, তাদের আর কি গতি বলুন? মধ্যমগ্রামে গেলে চা খাওয়াবেন?
নিশ্চয়ই।
তাহলে চলুন।
সোজা মধ্যমগ্রাম গিয়েছিল। গাড়ি চালাতে চালাতে ক্যাপ্টেন বার বার এদিক-ওদিক কি যেন দেখছিল।
কি দেখছেন?
এই লোকজন।
লোকজন?
হ্যাঁ। প্রবাসী বাঙালি বলে কোনোদিন এত বাঙালি ছেলে-মেয়ের ভিড় দেখিনি। তাই তো কলকাতার রাস্তাঘাটে এত বাঙালি দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।
ক বছর রেঙ্গুনে কাটিয়ে কলকাতা ফেরার পর আমারও এমনি হয়েছিল।
বাংলাদেশের অ্যাটমসফিয়ার এনজয় করব বলে এ-ডি-সি-র চাকরি নিয়ে এলাম, কিন্তু ঠিক যেটা চেয়েছিলাম সেটাই পেলাম না।
যতীন্দ্রমোহন এভিন পিছনে ফেলে শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় পার হল।
মণিকা ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা রাজভবনের অ্যাটমসফিয়ারটা অমন পিকিউলিয়ার কেন বলুন তো?
কেন তা জানি না। তবে একটা জগা-খিচুড়ি অ্যাটমসফিয়ার। খানিকটা কলোনিয়াল, খানিকটা বাদশাহী, খানিকটা ইংলিশ। সব কিছু পাবেন, পাবেন না ইন্ডিয়ান অ্যাটমসফিয়ার।