প্রশংসা করার মতো তো কিছু করিনি।
আমি কি করে জানব বলুন? তবে অনুমতি দিলে ওর চিঠিটার রেলিভ্যান্ট পোর্সান পড়ে শোনাতে পারি।
ইফ ইউ উইস।
মণিকা পড়ল, প্লিজ কনভে মাই পার্সোন্যাল থ্যাঙ্কস টু দ্যাট চার্মিং ইয়ং এ-ডি-সি টু দি গভর্নর। এমন একদিন আসবে যেদিন হয়তো গভর্নরকে ভুলে যাব কিন্তু ক্যাপ্টেন রায়কে নিশ্চয়ই ভুলব না।
মণিকার কাছে এসব শুনতে খুব ভালো লাগে। হাসতে হাসতে বললেন, মাই গড। হোয়াট হ্যাঁভ আই ডান?
মণিকাও একটু হাসতে হাসতে বলল, আমিও তাই ভাবছিলাম।
এ চিঠি গভর্নরের হাতে পড়লে এক্ষুনি আমাকে বিদায় করবেন।
ক্যাপ্টেন একটু হেসে আবার জানতে চায়, আর কি লিখলেন?
এর বেশি জানতে হলে এখানে এসে দেখে যান।
অপ্রত্যক্ষ আমন্ত্রণ জানায় মণিকা।
ডিনারের সময় বেড়াতে যাওয়া কি ঠিক হবে? ঠাট্টা করেন এ-ডি-সি।
সারা দুনিয়াটাকেই রাজভবন ভাবেন কেন বলুন তো?
সেইদিন সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন রায় দ্বিতীয়বার পদার্পণ করলেন ডক্টর ব্যানার্জির বাড়িতে।
মণিকা দরজার গোড়ায় অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে বলল, আপনার মতো বলব নাকি প্লিজ কাম ইন?
ক্যাপ্টেন হাসতে হাসতে বলেন, অতিথিকে অপমান করছেন?
দাঁত দিয়ে জিভ কেটে মণিকা বলে, ছি, ছি। অপমান করব কেন? আসুন আসুন ভিতরে আসুন।
মণিকার মা ভিতরের বারান্দা থেকে ড্রইংরুমে ঢুকেই বললেন, এসো, এসো। এতদিন পরে মনে পড়ল?
মিসেস ব্যানার্জির কথায় খুশি হয় ক্যাপ্টেন। না, না, ওকথা কেন বলছেন? একটু ব্যস্ত ছিলাম কদিন।
বসো, বসো, কোনো তাড়াহুড়ো নেই তো? একেবারে খাওয়া-দাওয়া করে যাবে।
ক্যান্টেনের জবাব দেবার আগেই মিস ব্যানার্জি বলে, সে কি মা? উইদাউট প্রপার ইনভিটেশন এ-ডি-সি কি ডিনার খেতে পারেন?
ভদ্রমহিলা মেয়েকে শাসন করেন, আঃ! বুলু কি হচ্ছে?
মণিকা যখন ছোট্ট ছিল তখন বুলবুলি পাখির মতো দিনরাত্তির বক বক করত। সেই থেকেই ওর নাম হয় বুলু। ছোট্ট মেয়েকে বুলু বলে ডাকলে হয়তো ভালোই লাগে কিন্তু তাই বলে এম-এ পাশ করার পরও বুলু?
আঃ! মা, সবার সামনে কি বুলু বুলু করছ?
এবার আর ক্যাপ্টেন চুপ করে থাকে না এত রাগ করছেন কেন? বুলু নামটা তো ভারি সুন্দর।
পরের ডাকমান শুনতে সবারই ভালো লাগে।
মিসেস ব্যানার্জি যেন অনুযোগ করেন, আজকালকার কি যে ফ্যাশান তা বুঝি না। ডাকনাম ধরে ডাকলেই রেগে যায়।
ক্যাপ্টেনের মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে গেল, না মাসিমা। আমি কিন্তু রাগ করি না।
মণিকা বলে, আপনি তো ডেঞ্জারাস লোক। বুড়ো-বুড়িদের খুশি করার বেশ কায়দা জানেন তো?
মিসেস ব্যানার্জি ভিতরে যাবার সময় বলে গেলেন, তুমি ওর কথা গ্রাহ্য করো না।
মিসেস ব্যানার্জি চলে যাবার পর মণিকা বলল, তারপর বলুন কেমন আছেন।
আপনি কেমন আছেন?
বেকারের আবার ভালো-মন্দ থাকার কি আছে?
আপনার চাকরি করার প্রয়োজন কি?
তাই বলে সারাজীবন বাপ-মার অন্ন ধ্বংস করব?
সারা জীবন কেন করবেন? লেখাপড়া শিখেছেন, এবার বিয়ে করে…
ক্যাপ্টেনকে আর বলতে দেয় না মণিকা, বুড়ো লাটসাহেবের সঙ্গে থেকে বুড়োদের মতো কথাবার্তা চিন্তা-ভাবনা করতে শিখেছেন তো বেশ।
বিয়ের কথা বললেই বুড়োদের মতো হলাম?
তবে কি?
চাকরটা এক কাপ কফি নিয়ে আসতে না আসতেই মিসেস ব্যানার্জিও ড্রইংরুমে এলেন। এখন আর কিছু দিলাম না। একটু পরেই খেতে দেব।
ক্যাপ্টেন হাসিমুখে বলে, ঠিক আছে মাসিমা।
এবার মণিকার দিকে ফিরে বলেন ডক্টর মঙের চিঠিটা কই?
চিঠিটা সত্যিই পড়বেন? পড়লে কিন্তু আপনার অহংকার বেড়ে যাবে। বাঁকা চোখে হাসতে হাসতে মণিকা বলল!
আপনি বড্ড বেশি তর্ক করেন।
মণিকা হাসতে হাসতেই উঠে গেল।
একটু পরেই ডক্টর মঙের চিঠিটা নিয়ে এল, এই নিন, পড়ুন।
আপনিই পড়ুন।
না, না, আপনিই পড়ুন।
ওটা আপনার চিঠি। আমার পড়া ঠিক নয়।
শেষ পর্যন্ত মণিকাই পড়ল, মাই সুইট লিটল মাদার, বেনারস আর গয়াতে এত বেশি পোগ্রাম ছিল যে কিছুতেই তোমাকে চিঠি লিখতে পারিনি। তাই তোমার বাবাকে শুধু একটা টেলিগ্রাম করি। যাই হোক সব সময় তোমাদের কথা মনে হয়। তোমার বাবা, মা ও তুমি আমাকে এত বেশি প্রাণের মধ্যে টেনে নিয়েছ যে একমুহূর্তও তোমাদের ভুলতে পারি না। বার বার মনে হচ্ছে আবার কবে রেঙ্গুন ফেরার পথে কলকাতা আসব…
এবার মণিকা থামে। বলে, এবার আসল জায়গাটা পড়ি।
অ্যাজ ইউ প্লিজ।
তবে শুনুন। মণিকা আবার শুরু করে, ক্যাপ্টেন রায়ের কি খবর? তোমার সঙ্গে এর মধ্যে দেখা হয়েছে নাকি ছেলেটিকে বড় ভালো লেগেছে। চেহারাটির মধ্যেই কেমন যেন একটা সুন্দর আকর্ষণ আছে…
মণিকা মুখ টিপে হাসতে হাসতে জোর করে একটি কাশির আওয়াজ করল। একবার এক ঝলক দেখেও নেয় ক্যাপ্টেনকে।
আরো পড়ব?
ক্যাপ্টেনও চাপা হাসি হাসতে হাসতে বলল, অ্যাজ ইউ প্লিজ!
আমি কিন্তু আপনার গভর্নর নই? কথায় কথায় এত প্লিজ প্লিজ না করলেও চলবে।
ইউ আর মাচ মোর ইমপর্ট্যান্ট দ্যান মাই গভর্নর।
সত্যি?
সত্যি।
বসন্তের একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল।
ক্যাপ্টেন এবার জিজ্ঞাসা করে, আপনার বাবাকে দেখছি না?
বাবা কটকে গিয়েছেন।
কটকে?
হ্যাঁ। কটক ইউনিভার্সিটিতে একটা মিটিং আছে। বাবা থাকলে কি আমাকে বকবক করতে হতো?
কেন, আপনার বাবা বুঝি কথাবার্তা বলতে খুব পছন্দ করেন?