স্যাম্পেন এন্ড ফ্রেঞ্চ ওয়াইন। জানি না আপনি কোনটা পছন্দ করবেন। তাই দুটোই…
লোকটা তো বেশ মজার। মিস অ্যান্ডারসন মুহূর্তের জন্য ভাবেন।
কিন্তু হুইস্কি আনলেন না যে?
জেনারেলি…
জেফারসন বলতে গিয়েও যেন দ্বিধা করেন।
জেনারেলি কি?
সুড আই সে?
মিস অ্যান্ডারসনের আরো মজা লাগে। কাম অন! আমার বাবা গভর্নর, আমি নই। আই অ্যাম জাস্ট এ ইয়ং গার্ল লাইক অল আদার ইংলিশ গার্লস।
এক্সকিউজ মী। তাহলে বলছি।
একশোবার বলুন। ইউ ক্যান সে এনিথিং ইউ লাইক।
পাশের টিপাই থেকে নিজের হুইস্কির গেলাসটা তুলে এক চুমুকে দেন। যেন দ্বিধা সঙ্কোচের জন্য গলা দিয়ে কথাটা বেরুচ্ছিল না, তা বোধ হয় পরিষ্কার হয়!
জেনারেলি সাধারণ মেয়েরা ওয়াইন খায় আর রোমান্টিক মেয়েরা স্যাম্পেন খায়। তাই…
মিস অ্যান্ডারসনের মুচকি হাসিটা আর লুকিয়ে থাকে না, প্রকাশ হয়ে পড়ে। সো হোয়াট?
আই ডোন্ট নো আপনি কি ধরনের মেয়ে। তাই দুটো গেলাসই…
পরিতৃপ্তির হাসিতে অ্যা ডারসন-নন্দিনীর সারা মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
আই অ্যাম অ্যাফ্রেড ইভন আফটার দিস আমি আর ওয়াইন খেতে পারি না।
ওয়ান্ডারফুল!
মিঃ জেফারসন স্যাম্পেনের গেলাসটা তুলে দিলেন ওর হাতে।
দুজনের হাতের দুটি গ্লাস এগিয়ে এল কাছে; একেবারে নিবিড় হবার পর ক্ষণিকের জন্য স্পর্শ হল দুটি গেলাসে।
চিয়ার্স!
চিয়ার্স!
এই হল শুধু। একটি অধ্যায়ের শুরু। একটি কাহিনির শুরু।
রমজানের কি সব মনে আছে? বিশ পঁচিশ বছর আগেকার কথা কি মনে থাকে? মনে আছে জেফারসন সাহেবও নতুন বিলেত থেকে এসে একটা বড় বিলেতি কোম্পানির বড় অফিসার ছিলেন। তবে রমজান জানে না উনি শৈশব, কৈশোর কাটিয়েছেন এডিনবরায়, যৌবনে পড়াশুনা করেছেন কিংস কলেজে। কলেজ থেকে বেরুবার পর ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে বা কলোনিয়াল সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দেবার কথা ভেবেছিলেন, তাও রমজান জানে না। কি দরকার ওসব জানার।
ওই সাহেবের দপ্তর ছিল ডালহৌসি স্কোয়ারের ওই কোণায় আর থাকতেন বেঙ্গল ক্লাবে।
বুড়ো রমজান ঠিক বলছে তো? ক্যাপ্টেন রায় একটু জেরা করেন, ওই সাহেব কোথায় থাকতেন কোথায় চাকরি করতেন, তা তুমি জানলে কেমন করে?
রমজান এ-ডি-সি সাহেবের কথা শুনে হাসে। আরে সাব, আমি জানবো নাতো কে জানবে? আমাকে যে ডিউটি দিতে হতো। সকালে, সন্ধেয়, রাত্তিরে।
তার মানে?
প্রথম প্রথম লাটসাহেবের কোনো পার্সোন্যাল অফিসার সঙ্গে থাকলেও পরবর্তীকালে একজন বেয়ারা-চাপরাশীকে নিয়েই ওঁরা ঘোরাঘুরি করতেন। সাদা পোশাকে। তাছাড়া গভর্নমেন্ট হাউসের ক্লাউন মার্কা রোলস রয়েস বা ফোর্ড গাড়ি চড়ে নয়, সাধারণ ছোট গাড়ি চড়েই ওঁরা ঘুরতেন।
ক্যাপ্টেন রায় আবার প্রশ্ন করেন, কেন?
কেন আবার? তখনকার দিনকাল কি ছিল, তা জানা নেই? গভর্নমেন্ট হাউসের গাড়ি দেখলে কোথা থেকে কে বোমা মেরে দেবে, তার কি কোনো ঠিকানা ছিল? তাইতো খোদ মিলিটারি সেক্রেটারি পরামর্শ দিয়েছিলেন, তোমরা ঘোরাফেরা করতে চাও, কোনো আপত্তি নেই। বাট ইউ মাস্ট মুভ অ্যারাউন্ড লাইক কমোনার্স।
নিছক সাধারণ ইংলিশ গার্লের মতো ঘোরাঘুরি করলে বিপদ নেই বলেই সাধারণ গাড়ি আর সাদা পোশাকের চাপরাশী-বেয়ারার ব্যবস্থা হল।
ক্যাপ্টেনসাব, বিশওয়াশ করুন কভি কভি বেঙ্গল ক্লাব থেকে ঐহি হোকরী রাত দুতিন বাজে ফিরত।
এতক্ষণ…
আরে সাব, লাচ-গান, খানা-পিনা আউর কত কি চলত, কে জানে।
০৪. বেশি দূর যাবার দরকার নেই
বেশি দূর যাবার দরকার নেই। আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না, অতীত বর্তমানের সব কিছু মাল-মশলাই পাওয়া যাবে। দৃষ্টিটা একটু চারপাশে ঘোরালেই হয়। কিন্তু এই দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে নেবার অবকাশ থাকলেও ইচ্ছা থাকে না সবার। আগ্রহও নেই বহুজনের। তাছাড়া চোখ থাকলেই দৃষ্টি শক্তি কি থাকে সবার? কান থাকলেই কি শুনতে পায় সবাই?
না। চোখ, কান থাকলেই দৃষ্টি শক্তি বা শ্রবণ শক্তি থাকে না। হৃদপিণ্ড তো সবারই আছে; মন, সংবেদনশীল মন কি সবার হয়?
না।
শুধু দুমুঠো অন্নের জন্য যাঁরা ডালহৌসীর রণাঙ্গনে নিত্য সংগ্রামে মত্ত, তাদের কথা আলাদা। মার্চেন্ট অফিসের হৃদয়হীন ছোট কর্তাদের ভজনায় যাদের সারা জীবন কেটে যায়, তারা আশপাশে দেখবেন কখন?
সবাই তো ওই দলের নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের অফুরন্ত অবকাশ রয়েছে সংসারের চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে নেবার। কিন্তু অপরের মুখের হাসি, চোখের জল দেখার প্রয়োজন কি? আশপাশের মানুষগুলো বাঁচল কি মরল, হাসল কি কাদল, তাতে ওই সার্থক স্বার্থপরদের কি আসে যায়?
কিছু না। বিন্দু মাত্র না। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের খবর না নেওয়াই তো বড় হবার লক্ষণ!
অফিসারের দল বেয়ারা-চাপরাশী-কেরানীদের সেলাম নেন কিন্তু তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ? নেভার? অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, প্রেস্টিজ সব গোল্লায় যাবে যে!
রাজভবনের বেয়ারা-চাপরাশীদের বেশি দূরে সরিয়ে রাখা অসম্ভব। তবে খুব বেশি কাছে টানতেও অফিসারের দল নারাজ।
সেকেন্ড পাঞ্জাব ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ব্যারাক থেকে ক্যাপ্টেন রায় যখন প্রথম রাজভবনে এলেন, তখন তিনিও শুধু সেলাম নিতেন। আমজাদ আলি, রমজান, হরকিষণ, মনোহরলালদের রোজ দেখতেন, সেবা নিজেন কিন্তু ঠিক চিনতে চাইতেন না। ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্যাপ্টেন রায়ের দৃষ্টিটা উদাস হয়ে শূন্য আকাশের দিকে চলে যেত।