এটা একটি পারমাণবিক বোমা। এটি বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্যে লাগাম টানবে, যে উৎস থেকে সূর্য তার শক্তি আহরণ করে থাকে দূর প্রাচ্যে যারা যুদ্ধ নিয়ে গেছে তাদের ওপর সেই শক্তিকেই যুক্ত করা হয়েছে।
১৯৩৯ সালের পূর্বে বৈজ্ঞানিকরা তত্ত্বগতভাবে বিশ্বাস করতেন পারমাণবিক শক্তিকে মুক্তি সম্ভব। কিন্তু কেউ-ই জানতেন না বাস্তবে এটা কী করে করা সম্ভব। ১৯৪২ সালে আমরা জানতে পারলাম জার্মানরা পারমাণবিক শক্তিকে তাদের যুদ্ধ-যন্ত্রের অন্য এক ইঞ্জিনে ব্যবহার করার জন্য পাগলের মত কাজ করছে এবং তাদের আশা ছিল এর দ্বারাই তারা সমগ্র বিশ্ব-কে পদানত করতে পারবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞ যে জার্মানরা V-1, V-2 দেরিতে পেয়েছে এবং তা-ও খুবই সীমিত পরিমাণে। এবং আরও বেশি কৃতজ্ঞ যে তারা পারমাণবিক বোমা বানাতে পারেনি।
স্থল-নৌ-এবং বিমান যুদ্ধের সঙ্গে এই গবেষণা যুদ্ধেও আমাদের নির্ধারক ঝুঁকি ছিল। যাই হোক শেষ পর্যন্ত এই গবেষণা যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করেছি।
১৯৪০ সালে, পার্ল হারবার ঘটার পূর্বে গ্রেট ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং কার্যকারিতা বিষয়ক চুক্তি এবং আমাদের অমূল্য সমস্ত বিজয় শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক বোমা তৈরির একটা সাধারণ চুক্তির দিকে নিয়ে যায়। এবং সিদ্ধান্ত হয়। আমেরিকা ও গ্রেট ব্রিটেনের বৈজ্ঞানিকরা পারমাণবিক বোমার ওপরে এক সঙ্গে কাজ করবে। আমেরিকার হাতে বিজ্ঞানের নানান শাখা-প্রশাখাতে কাজ করা অনেক দক্ষ-প্রতিভার বৈজ্ঞানিক আছে। আমেরিকার আছে বিশাল শিল্প এবং অর্থনৈতিক ভাণ্ডারের মজুত, যেগুলো কোন রকম অহেতুক জটিলতা ছাড়াই যুদ্ধ-কাজে-ব্যয় করা যেতে পারে। আমেরিকাতে গবেষণার কাজ এবং উৎপাদন-শিল্প যেখানে বেশ ভাল। পরিমাণে উৎপাদন শুরু হয়েছিল, সেগুলো ছিল শত্রুর বিমানহানা যে সমস্ত অঞ্চলে অসম্ভব, সেই রকম অবস্থানে। ঠিক এই সময়ে গ্রেট ব্রিটেন শত্রুর আক্রমণের সামনে পড়ে, সেখানে মুহুর্মুহু জার্মান আক্রমণ চলতে থাকে। এই সময়ে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে বোমা তৈরির কাজগুলো এখানেই হবে। এখন আমাদের দুটো বড় প্ল্যান্ট, এবং অনেকগুলো ছোট ছোট শিল্প আছে। যেখানে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের কাজ চলছে। বোমা তৈরির চূড়ান্ত সময়ে নিয়োজিত কর্মী সংখ্যা ছিল ১২৫০০০। এবং এখনও ৬৫০০০ কর্মী প্ল্যান্টগুলো চালু রাখতে কাজ করে চলেছেন। অনেকেই সেখানে দুই কিম্বা আড়াই বছর কাজ করেছে। কেউ কেউ কিছুই বুঝতে পারেন নি। কেউ কেউ জানতেন তারা কিছু উৎপাদনের কাজ করছেন। তারা দেখতেন বিপুল পরিমাণ দ্রব্য প্ল্যান্টের ভেতরে ঢুকছে কিন্তু, কিছুই। বেরুচ্ছে না। কারণ, বিস্ফোরক চার্জগুলোর বস্তুগত আয়তন ছিল খুবই ছোট। বিশ্বের ইতিহাসে বৈজ্ঞানিক কাজে সব থেকে বড় জুয়া খেলাতে আমরা দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছি। কিন্তু এই প্রকল্পের চমৎকারিত্ব, এর আকারে, গোপনীয়তায় কিম্বা ব্যয়বহুলতাতে সীমাবদ্ধ নয়, এর আসল চমৎকারিত্ব হল বিশ্বের বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাতে কাজ করা বিভিন্ন মস্তিষ্কগুলোর এক সূত্রে কাজ করে নির্দিষ্ট কার্যকর পরিকল্পনা রূপায়ণ করা। শিল্প সংস্থার পরিকল্পনা তৈরি থেকে চালু করার শ্রমও কম আশ্চর্যের নয়।
এই ধরনের যন্ত্রপাতি এবং পদ্ধতির অতীতে কোন নজির ছিল না, সুতরাং অনেক মনের মস্তিষ্ক-জাত শিল্প একত্রিত হয়ে একটি আকার ধারণ করল। এবং যেমনটি ভাবা। গিয়েছিল সেইরকম ফল-ই ফলল। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান এবং শিল্পসংস্থা উভয়েই সরাসরি আমেরিকার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশে কাজ করেছে। এবং এত ব্যাপক বিভিন্ন। ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করে অত্যাশ্চর্য অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সৈন্যবাহিনী জ্ঞানের জগতে এক বিশাল অগ্রগতি ঘটিয়েছে। আমার মনে হয় না পৃথিবীর অন্য কোথাও এধরনের সমন্বয় সম্ভব! ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংগঠিত বিজ্ঞানের সাফল্য অর্জন করা গেছে। এবং এটা অর্জিত হয়েছে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে এবং অব্যর্থ ভাবে। আমরা এখন প্রস্তুত, আরও দ্রুততার সঙ্গে যে-কোন শহরে জাপানিদের মাটির ওপরে আকাশে ধ্বংস করতে পারি। আমরা তাদের সমস্ত বন্দর ধ্বংস করে ছাড়ব। তাদের সমস্ত শিল্প ধ্বংস করব আমরা! ছিন্ন-ভিন্ন করে দেব তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা, জাপানের যুদ্ধ করার সমস্ত শক্তি ধ্বংস করব!
জাপানি জনগণকে এই অনিবার্য ধ্বংস থেকে রেহাই দেবার জন্য পোস্টডামে ২৬ জুলাই-এর চরমপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের নেতারা এই চরমপত্র খারিজ করে দিয়েছে। যদি তারা এখনও এই চরমপত্রে দেওয়া আমাদের শর্তাবলী মেনে না নেয়, তাহলে আকাশ থেকে তাদের ওপর ধ্বংসের বর্ষণধারা বর্ষিত হবে। তারজন্য তারা প্রস্তুত থাকুক। পৃথিবী এর আগে এ ধরনের ধ্বংস দেখেনি। শুধু আকাশ থেকেই নয়। এর অনুগামী হবে। আমাদের নৌবহর এবং স্থলবাহিনী! এত বিপুল পরিমাণে এত বিশাল শক্তি নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে যে অতীতে পৃথিবী তা দেখেনি, এর সঙ্গে আছে ইতিমধ্যে প্রমাণিত তাদের লড়াই করার দক্ষতা! যুদ্ধ বিষয়ক সচিব, যিনি এই পরিকল্পনার প্রতিটি স্তরের সঙ্গে জীবন্ত সম্পর্ক রেখে চলেছেন, খুব শীঘ্রই জনগণের কাছে এই বিষয়ে বিস্তারিত বিবৃতি দেবেন। তার বিবৃতিতে নক্সভাইলের সন্নিকটে ওক রিজ এবং পাসকোর কাছে রিচল্যান্ড সাইট সম্পর্কে বিশদভাবে থাকবে। যদিও শ্রমিকরা ইতিহাসের এই সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক শক্তির কিছু বস্তুগত দিকই মাত্র করেছেন। তবুও তাদের নিরাপত্তা অন্যান্য পেশার তুলনায় এমন কিছু বেশি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করেনি। তাদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।