–ইউ নিডন্ট ব্লাশ, মাই বয়। আমি অস্বাভাবিক কিন্তু তোমরা দুজনে যা করেছ তাই তো স্বাভাবিক। টেক ইট ইজি।
তাই কি নেওয়া যায়? দু-হাতে মুখ ঢেকে বসে থাকে ফুকস।
প্রফেসর অন্যমনস্কের মতো বলেন, রোনাটাকে আমি ভালোবাসতাম। প্রয়োজনে প্রটেস্টান্ট হয়েও তার মুখ চেয়েই তাকে ডিভোর্স করবার সংকল্প করেছিলাম। কথাটা তাকে বলা হয়নি। তোমাদের মন জানাজানির একটা সুযোগ করে দেবার জন্যই এভাবে একা পালিয়ে এসেছিলাম পারি থেকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না–
ফুকস্ এবার মুখ থেকে হাতটা সরায়। আর্তকণ্ঠে বলে, প্লিজ প্রফেসর। আমি একটু একা থাকতে চাই।
তৎক্ষণাৎ উঠে পড়েন অধ্যাপক। পকেট থেকে একটি দেশলাই বার করে জ্বালেন। এক মিনিটের ভিতরেই রোনাটার শেষ পত্রখানি অঙ্গারে পরিণত হল।
***
এর পরের অধ্যায়টা করুণ।
ক্লাউস ফুকস-এর পরিবারে একাধিক লোক যে পাগল হয়ে গিয়েছিল, এতদিন পরে সে কথা মনে পড়ল তার। ওও কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? কারা যেন ওর চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তারা কথা বলে। কী বলে তাও বুঝতে পারে না। ও তাদের সঙ্গে তর্ক করে। বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না। কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলে না। আর্নল্ড মাঝে মাঝে আসে। বিরক্ত করে। একদিন এসে বললে, আমি নিশ্চিন্তভাবে জানি, প্রফেসর কার্ল আপনাকে রোনাটার শেষ পত্রখানা। দেখিয়েছিলেন। অস্বীকার করতে পারেন?
চীৎকার করে ওঠে ফুকস, হা, দেখিয়েছিলেন। কী হয়েছে তাতে?
–হয়নি কিছু। কী ছিল সেই চিঠিতে? বিশ্বাসঘাতক কে? কীসের? কেন?
–বলব না। প্রফেসর কার্ল ইংল্যান্ড ছেড়ে যাবার পাসপোর্ট পেলেন না। সব কথা খুলে না বলা পর্যন্ত তাকে নজরবন্দি করে রাখা হল সমুদ্র-মেখলা গ্রেট ব্রিটেনের মুক্ত কারাগারে। ছায়ার মতো গুপ্তচর ঘুরছে তার পিছনে দিবারাত্র। আর একটি প্রমাণ, একটি ইঙ্গিত পেলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। ডেক্সটাররূপে তাঁকে শনাক্ত করা যাবে। তার আর দেরি নেই। ইলেকট্রিক-চেয়ার আর প্রফেসর কার্ল-এর মধ্যে বৈদ্যুতিক তারের সামান্য একটু ফাঁক। তবু উনি অনমিত। কোনো জবানবন্দি দেবেন না, কোনো স্বীকৃতি জানাবেন না। না, ডেক্সটার কে তা উনি জানেন না। অ্যাটমিক-এনার্জির গুপ্তচরদলের কোনো সংবাদই তিনি রাখেন না। তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হল অবশ্য। এখন ব্যাঙ্কের জমানো অর্থই বাকি জীবনের পাথেয়। এ অবস্থায় কে তাকে নতুন চাকরি দেবে?
ফুকস্ আবার অনুভব করে তার চতুর্দিকে অদৃশ্য চক্ষুর মিছিল এসে জুটেছে। দিবারাত্রি কারা যেন তাকে পাহারা দিচ্ছে। দিক। সে ক্ষেপ করে না। সে কোনো কথা স্বীকার করবে না। কারও কাছে নয়। কিন্তু রোনাটা? তার কাছে যে একটা কৈফিয়ৎ আজও দেওয়া হয়নি।
স্লিপিং পিল আর মদের মাত্রা বাড়ল। তবু ঘুম আসে না। জীবনের উদ্দেশ্যটাই বুঝি হারিয়ে গেছে। কী হবে বেঁচে থেকে? এভাবে বেঁচে থেকে? ঈশ্বরে তার। বিশ্বাস নেই। রোনাটার ছিল, ওর বাবার ছিল। তারা সুখী। রোনাটা বলেছিল যিসাস একদিন ওকে মেষশাবকের মতো বুকে টেনে নেবেন। যত সব বুজরুকি। যিসাস কে? দু-হাজার বছর আগেকার একটা বদ্ধ পাগল। পাগলামির ফলও পেয়েছে। ঝুলতে হয়েছে ক্র থেকে। তার চেয়ে অনেক কাজের লোক প্রমিথিউস, জিয়ুসের কজা থেকে সে আগুনটাকে চুরি করে এনেছিল। অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়েছিল সেই। ঈগলে টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিল তার নাড়িভুড়ি। দূর! এসব কী আবোলতাবল ভাবছে সে পাগলের মতো? পাগলের মতো। সে কি তবে পাগল হতে বসেছে?
***
-আমি নিশ্চিতভাবে জানি, প্রফেসর কার্ল আপনাকে রোনাটার শেষ পত্রখানা দেখিয়েছেন। কী ছিল তাতে? বিশ্বাসঘাতক কে? কীসের? কেন?
-বলব না! বলব না! বলব না! এবং বেশ করব বলব না।
***
কেন বলবে? সে যে নিদারুণ লজ্জার কথা। তার, রোনাটার আর প্রফেসর কার্ল-এর। কী নির্লজ্জ অশ্লীলভাষায় খোলাখুলি লিখেছিল রোনাটা ওই চিঠিখানা। যেন বটতলার উপন্যাস লিখেছে। বের হলেই হু হু করে বিক্রি। কিন্তু রোনাটাকে যে সেই কৈফিয়তটা দেওয়া হয়নি। কেন সে তার প্রথম প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। রোনাটা কি একবার সামনে এসে দাঁড়াতে পারে না? মন উজাড় করে ওকে সব কথা বলে ফেলার একটা সুযোগ দিতে পারে না? আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে–বাস্তবে পরলোক আছে। আত্মা অবিনশ্বর। হয়তো রোনাটা শুনতে পাবে তার কথা।
–আমি নিশ্চিন্তভাবে জানি, আপনি প্রফেসর কার্ল-এর গুপ্তরহস্যটা জেনে ফেলেছেন।
–হ্যাঁ ফেলেছি।
তবে স্বীকার করুন–তিনিই ডেক্সটার।
–আঃ। কী বিড়ম্বনা। তা কেন হবে? হতে পারে তার যমজ ভাই রাশিয়ান গুপ্তচর। তাই তার পিছনে গুপ্ত-আততায়ী ঘুরছে। তার মানে এ নয় যে, তিনিই সেই ডেক্সটার।
-তবে কে? তুমি জান। বল খুলে সব কথা।
–হ্যাঁ জানি। কিন্তু আমি বলব না।
–জান? তুমি জান–ডেক্সটার কে?
–বলছি তো, জানি। তবে বলব না আমি, এবং বেশ করব বলব না।
–বলবে। বলতে তোমাকে হবেই। আমাদের না বলো রোনাটাকে বলে দাও। বি এ ট্রু ক্রিশ্চিয়ান। নিজের ক্র নিজেকেই বইতে হবে যে তোমাকে।
***
মধ্যরাত্রে একদিন উন্মাদের মতো এসে হাজির হল ফুকস জেমস আর্নল্ডের অ্যাপার্টমেন্টে। দ্বার খুলে ওকে দেখতে পেয়ে বিন্দুমাত্র বিস্মিত হল না আর্নল্ড। বললে, আসুন, আপনার জন্যই জেগে বসেছিলাম। আমি জানতাম, আপনি আসবেন।