১৮৮৯ : সেন্ট-রেমি উন্মাদাগারে আশ্রয় লাভ। এই সময় (১৭. ৪. ৮৯) তেও বিবাহ করেন। তাঁর্স ভবিষ্যতের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েন। বিবাহিত অনুজের উপার্জনে ভাগ বসাতে স্বতঃই তিনি কুণ্ঠা বোধ করেন। এর পর তাঁর চিত্রে সূর্যের বদলে চাঁদ ও তারার দল প্রাধান্য পেতে থাকে। বন্দীদলের চক্রাবর্তন এবং শোকাহত বৃদ্ধ এই যুগে আঁকা। প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যায়ক্রমে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন।
১৮৯০ : ২৭শে জুলাই একটি পিস্তল বুকে লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে তেও ছুটে আসেন। ২৯শে জুলাই সজ্ঞানে তার মৃত্যু হয়। শেষ বারো ঘন্টা একমাত্র তেও ছিলেন তাঁর শয্যাপার্শ্বে। ভান গখ-এর মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে তেও উন্মাদ হয়ে যান। উন্মাদ অবস্থায় তিনি স্ত্রীকে আক্রমণ করেন কারণ, ঐ সময় তাঁর ধারণা হয়েছিল স্ত্রীর আগমনেই তাঁর দাদা আত্মহত্যা করেছেন। আরও তিন মাস পরে উন্মাদ অবস্থাতেই তেও প্রাণত্যাগ করেন।
তার তেইশ বছর পরে তেও-এর বিধবা পত্নী হল্যাণ্ড থেকে স্বামীর দেহাবশেষ সংগ্রহ করে আনেন। তাঁর দাদার সমাধির পাশে স্বামীর দেহাবশেষ সমাধিস্থ করেন। পারীর অনতিদূরে দুটি কবর পাশাপাশি আছে–শিল্পরসিকদের তীর্থ। একটি আইভিলতা দুটি সমাধিকে জড়াজড়ি করে আছে!
ভ্যাস ভান গখ-এর জীবদ্দশায় তাঁর একখানি মাত্র চিত্র স্বল্পমূল্যে বিক্রীত হয়েছিল। মৃত্যুর অনতিকাল পর থেকেই তিনি বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের অন্যতম বলে স্বীকৃত!
.
য়োজেন অঁরি পল গোগ্যাঁ [Paul Gauguin]
১৮৪৮ : ৭ই জুন তারিখে পারীতে পল গোগ্যাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন একজন প্রগতিবাদী ফরাসী সাংবাদিক, মা স্পেন দেশের মেয়ে। স্পেনের লোক হলেও ওঁর দাদামশাই দীর্ঘদিন দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে ছিলেন।
১৮৫১ : গোগ্যাঁর বয়স যখন তিন তখন তৃতীয় নেপোলিয়ন ফরাসী দেশের ক্ষমতা দখল করেন। ঐ সময়ে তাঁর বাবা সপরিবারে পেরুতে যাত্রা করেন ইচ্ছা ছিল সেখানেই বাস করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই জলযাত্রায় শিল্পীর পিতৃ-বিয়োগ হয়। সন্তানদের নিয়ে ওঁর মা চার বছর পেরুর রাজধানী লিমাতে ছিলেন।
১৮৬০ : মায়ের সঙ্গে প্যারীতে ফিরে আসেন এবং ওর্লেতে স্কুলে ভর্তি হন।
১৮৬৫ : সতের বছর বয়সে সদাগরী জাহাজে কাজ নিয়ে কয়েকবার ফ্রান্স ও দক্ষিণ আমেরিকার ভিতর যাতায়াত করেন। পরে ফরাসী নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে সেকেণ্ড লেফটেনান্ট-পদে উন্নীত হন।
১৮৭১-৮২ : নৌবাহিনীর কাজ ছেড়ে দিয়ে শেয়ারের দালালীর কাজ ধরেন। স্টক ব্রোকার হিসাবে তার যথেষ্ট রোজগার হয়। ঐ সময় তিনি মেটি সোফিয়া গ্যাড নামে একটি ওলন্দাজ মহিলাকে বিবাহ করেন। অবসর সময়ে ও ছুটির দিনে, গোগ্যাঁ ছবি আঁকতেন। ১৮৭৬ সালে তার একটি ছবি সালোতে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়। গোগ্যাঁ এতে অত্যন্ত উৎসাহ বোধ করেন এবং স্টক ব্রোকার-এর কাজের ক্ষতি করেও দিবারাত্র ছবি আঁকতে থাকেন। সংসারে এজন্য স্বতঃই অশান্তির সৃষ্টি হয়। কামীল পিসারোর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।
১৮৮৩ : এতদিনে গোগ্যাঁ তিনটি সন্তানের জনক। এই বছর তিনি সর্বক্ষণ ছবি আঁকার জন্য দালালী সম্পূর্ণ ছেড়ে দেন। পুত্রকন্যাসহ স্ত্রীকে তাঁর পিত্রালয়ে কোপেনহেগেন-এ পাঠিয়ে দিয়ে পারীতে স্টুডিও খুলে দিবারাত্র আঁকতে শুরু করেন। নিতান্ত দারিদ্র্যে মাঝে মাঝে তাকে রাস্তায় পোস্টার সাঁটার কাজ করতে হত। ঐ সময় তাঁর বড় ছেলে ক্লোভিস্ তাঁর সঙ্গে ছিল।
১৮৮৬ : চালর্স লাভাল নামে একজন চিত্রকরের সঙ্গে পানামা যাত্রা করেন। সেখানে লাভালের একজন ধনী ভগ্নীপতি ছিলেন। তাঁর কাছে বিশেষ সাহায্য পাওয়া গেল না। গোগ্যাঁ পানামা খালে মাটি কেটেও গ্রাসাচ্ছাদন করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি য়ুরোপ ফিরে আসেন।
১৮৮৮ : আর্সেতে ভ্যাঁসঁর সঙ্গে বাস ও ভ্যাঁসঁর কাছ থেকে পলায়ন। প্রায় এই সময়েই তেও ভান গখ-এর আগ্রহে ও ব্যবস্থাপনায় গোগ্যাঁর একটি চিত্র প্রদর্শনী হয়; তাতে ছবি কিন্তু বিশেষ বিক্রী হয়নি। শিল্পী তখন ব্রিটানিতে বসবাস করেন।
১৮৯০ : ভ্যাঁসঁর আত্মহত্যা ও তেওর মৃত্যুতে গোগ্যাঁ হতাশ হয়ে পড়েন। শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আশা সুদূরপরাহত মনে হয়।
১৮৯১ : ৪ঠা এপ্রিল গোগ্যাঁ এক দুঃসাহসিক অভিযান করেন। পৃথিবীর অপর প্রান্তে প্রশান্ত মহাসাগরের একান্তে তাহিতি দ্বীপের আদিম অধিবাসীদের ছবি আঁকবার অভিপ্রায়ে যাত্রা করেন। প্রায় কপর্দকহীন অবস্থায় তিনি তাহিতির রাজধানী পাপীতিতে পৌঁছান। এই যুগে তিনি তার জীবনের কয়েকটি শ্রেষ্ঠ চিত্র আঁকেন, যার ভিতর Ta Mateti অন্যতম। ঐ সময়ে শিল্পী য়ামায়া নামে একটি নিরক্ষর আদিবাসীকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন। য়ামায়া নিরলস নিষ্ঠায় তাঁর সেবা করেছে। সে জানত শিল্পী বিপত্নীক। অথচ তখন ঐ কুটির থেকেই গোগ্যাঁ কোপেনহেগেনে তার স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত পত্রালাপ করতেন। তাঁর য়ুরোপীয় স্ত্রী য়ামায়ার কথা কোনদিন জানতে পারেননি। বছর দুয়েকের মধ্যেই তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন। য়ামায়াকে ফেলে।
১৮৯৪ : মার্সেলএ আন্না নামে একটি জাভা-দেশীয় স্ত্রীলোকের সঙ্গে গোগ্যাঁ বাস করতে থাকেন। আন্নার অনেকগুলি ছবি তিনি এঁকেছেন। এডগার দেগার সঙ্গে এসময়ে বন্ধুত্ব গাঢ়তর হয়। গোগ্যাঁ এই বছরই শেষবারের মত স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ডেনমার্কে আসেন। কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় ফ্রান্সের ব্রিটানিতে ফিরে আসেন ও আন্নার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। এই সময়ে আন্নাকে কেন্দ্র করে একবার তিনি কয়েকজন মদ্যপ নাবিকদের সঙ্গে রাস্তায় মারামারি করেন। ফলে তাঁর পা ভেঙে যায়। এর কিছুদিন পরে আন্না তাঁর স্টুডিও থেকে অনেক জিনিস নিয়ে পালায়। ভাঙা পা ও যৌনব্যাধিগ্রস্ত গোগ্যাঁর অবস্থা চরমে ওঠে।