.
পরিশিষ্ট
[Vincent Van Gogh]
১৮৫৩ : ৩০শে মার্চ হল্যাণ্ডের পল্লীতে ভান গখ-এর জন্ম। অনুজ তেও ভান গখ ছিলেন চার বছরের ছোট।
১৮৬৮ : হেগ শহরে গোপিল আর্ট ডীলার্স কোম্পানিতে শিক্ষানবিশ হিসাবে প্রথম চাকরিতে প্রবেশ। পাঁচ বছর পরে ভঁার্স হেগ থেকে লণ্ডন অফিসে বদলি হয়ে যান এবং হেগ অফিসে তার শূন্য পদে অনুজ তেও বহাল হন। তেও ঐ কোম্পানিতে সারা জীবন চাকরি করেন।
১৮৭৩-৭৪ : লণ্ডনে যে বাড়িতে ভ্যাস থাকতেন সেই ল্যাণ্ড-লেডির চটুল-স্বভাবা কৌতুকময়ী কন্যা উরসুলা লায়রকে ভালবেসে ফেলেন। রহস্যময়ী উরসুলার হৃদয় জয় করেছেন বলে বিশ্বাসও করেন; কিন্তু যেদিন মেয়েটির কাছে বিবাহের প্রস্তাব করলেন সেদিন সে জানালো যে, সে বাকদত্তা। প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে ভ্যাঁসঁ ধর্ম-জগতের দিকে ঝুঁকলেন। কাজে মন নেই, ফলে চাকরি গেল।
১৮৭৬-৭৯ : ভান গখ নানান জীবিকার সন্ধানে ফেরেন–স্কুলে শিক্ষকতা, বইয়ের দোকানে সেলসম্যানের চাকরির চেষ্টা করেন, কিন্তু মন বসে না। মনে হয় তিনি কোন মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন; সেটা কী তা বুঝতে পারেন না। ঐ সময় তিনি দিনে আঠারো ঘন্টা পড়াশুনা করতেন–বাইবেল ও সাহিত্য। আমস্টার্ডামে গিয়ে যাজক হবার চেষ্টা করেন এবং গ্রীক ও ল্যাটিন শিক্ষা করেন। ১৮৭৮ সালে শিক্ষানবিশী ঈভানজেলিস্ট হিসাবে ছয় মাসের জন্য নিযুক্ত হন। বেলজিয়ামের বরিনেজ বা কয়লাখনি অঞ্চলে ধর্মপ্রচারের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রেরিত হন। দুর্ভাগ্যক্রমে কয়লাকুঠির কর্তৃপক্ষ এবং চার্চ-সম্প্রদায় উভয়পক্ষের কাছেই তিনি বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। অপরাধ–মালকাটাদের তিনি নিজ বিবেকের নির্দেশ অনুসারে সেবা করতে চেয়েছিলেন। কোলিয়ারির একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত মজদুরদের আত্মার সদ্গতি কামনায় যখন তিনি ফিউনারাল সার্ভিসে রত তখন নাটকীয়ভাবে চার্চ-সম্প্রদায়ের কর্মকর্তারা আসেন, তাঁকে পদচ্যুত ও চার্চ থেকে বিতাড়িত করেন।
১৮৮০ : মালকাটাদের প্রতিকারহীন দুর্দশায় ঈশ্বরের ঔদাসীন্যে মর্মাহত হয়ে ভান গখ ঈশ্বরে বিশ্বাস হারান। হঠাৎ ছবি-আঁকা শুরু করেন। শিল্পগুরু রেভারেণ্ড পিটারসন ছিলেন ব্রাসেল্স-এ। আশি কিলোমিটার হেঁটে তাঁকে ছবি গুলি দেখাতে আসেন। পিটারসন তাঁর ছবিগুলি প্রথম দেখে হতাশ হন। পরে ঐ স্কেচগুলির ভিতরেই তার প্রতিভার সন্ধান পেয়ে তাকে শেখাতে শুরু করেন। ভান গখ কিন্তু প্রাথমিক পাঠ শেষ করে পুনরায় কয়লাকুঠিতে ফিরে আসেন। নিদারুণ অর্থাভাবে অনশনে যখন তিনি মৃত্যুমুখে, সহসা তেও এসে তাকে উদ্ধার করেন। এই বছরই তিনি তার বিধবা ফার্স্ট কাসিন বা ভগ্নী (মতান্তরে ভাগ্নি) কী ভস্-এর প্রেমে পড়েন; কিন্তু কী তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর্স কী-এর পিতার সম্মুখে তার প্রেমের একনিষ্ঠার প্রমাণ দিতে নিজ দক্ষিণ হস্ত প্রদীপ শিখায় বাড়িয়ে ধরেন। এ দহন চিহ্ন তাঁর বাকি জীবনের সঙ্গী হয়ে ছিল।
১৮৮১-৮৩ : কী-এর কাছে পুনর্বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে শিল্পী সর্বতোভাবে চিত্রশিল্পে আত্মনিয়োগ করেন। তেও প্রতি মাসে তাঁকে মাসোহারা পাঠাতেন। তাতেই তার গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা হত। এই সময়ে ক্রিস্টিন হুর্নিক নামে একটি গর্ভবতী বারাঙ্গনাকে একদিন তার বাসায় নিয়ে আসেন। অভিশপ্ত জীবনের ফলশ্রুতি হিসাবে ক্রিস্টিনের একটি সন্তান হয়। শিল্পী ক্রিস্টিনকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন, সমাজে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দু বছরের মাথায় ক্রিস্টিন তাকে ত্যাগ করে অভ্যস্ত জীবনে ফিরে যায়। গার্হস্থ্য জীবনের মাধুর্য, রমণীর স্নেহ-ভালবাসা এই দু বছরই পেয়েছিলেন শিল্পী।
১৮৮৩-৮৬ : পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। শিল্পদর্শনে নূতন চিন্তাধারা জাগে। সৌন্দর্যের প্রতি সভ্যজগৎ-স্বীকৃত তথাকথিত বুর্জোয়া মনোভাব তিনি অস্বীকার করেন দুঃখ, দারিদ্র্য, অবহেলিত মনুষ্য-সমাজের যন্ত্রণার চিত্র তার শিল্পে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। কুৎসিত কদাকার বিষয়বস্তুও যে শিল্প-পদবাচ্য হতে পারে এই নূতন সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন। ফলে তাঁর সৃষ্টি স্বীকৃতি পায় না। এমিল জোলার সাহিত্য এবং দেলাক্রোয়ের শিল্পদর্শন তার উপর প্রভাব বিস্তার শুরু করে। Potato Eaters এই যুগে আঁকা।
১৮৮৬-৮৭ : আন্টওয়ার্পে এসে রুবেন্স-এর শিল্প দেখে আকৃষ্ট হন। এই সময়ে অনেকগুলি জাপানী উডকাট দেখেন। সেগুলি প্রচণ্ড ভাল লাগে। তার পরবর্তী জীবনে চিত্রের পশ্চাৎপটে প্রায়ই জাপানী ছবির নক্সা দেখা যায়। পারী আগমন। তুলোজ-লুত্রেক, গুইলমিন, বার্নার্ড, লাভাল, গোগ্যাঁ, রাসেল, পিসারো প্রভৃতি শিল্পীবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। উচ্চবিত্তের তথাকথিত বিশুদ্ধ-আর্টের বন্ধন থেকে চিত্রশিল্পকে মুক্ত করতে এই সময়ে ঐ শিল্পীবৃন্দ একটি কম্যুনিস্ট আর্ট কলোনি স্থাপন করার পরিকল্পনা করেন, যা বাস্তবায়িত হয়নি।
১৮৮৮ : পারী অসহ্য লাগে। ভান গখ আর্সেতে চলে যান। সেখানে প্রখর রৌদ্র। সূরয হয়ে উঠল শিল্পীর মূল কেন্দ্রবিন্দু। রোলিন নামে একজন প্রতিবেশী ডাকপিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। রোলিন ও তার পুত্রের পোর্ট্রেট আঁকেন। সূরযমুখী ও সাঁকো এই যুগের সৃষ্টি। বন্ধু পল গোগ্যাঁর নিরতিশয় দারিদ্র্যের কথা জানতে পেরে ঐ সময় তাঁকে নিজের কাছে এনে রাখবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। গোগ্যাঁর কাছে ট্রেনভাড়া ছিল না। তেও শেষ পর্যন্ত গোগ্যাঁকে দাদার কাছে পাঠিয়ে দেন। গোগার আর্লে আগমন। দুই শিল্পীর মতান্তর থেকে মনান্তর। একদিন ক্ষুর দিয়ে উন্মাদ অবস্থায় ভান গখ বন্ধুকে আক্রমণ করেন। গোগ্যাঁ তৎক্ষণাৎ পারীতে পালিয়ে যান। সেই রাত্রেই ভান গখ ঐ ক্ষুর দিয়ে নিজের দক্ষিণ কর্ণ ছেদন করেন এবং সেটি একটি বার-মেড এর কাছে পাঠিয়ে দেন। মেয়েটি নাকি তার কানের প্রশংসা করেছিল এবং ঠাট্টার ছলে কানটা উপহার চায়।