• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
সোমবার, জুন 9, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

মৃত্যুক্ষুধা – কাজী নজরুল ইসলাম

Mrityukhudha by Kazi Nazrul Islam

মৃত্যুক্ষুধা – ১৪

পরদিন সকালে কেউ উঠবার আগেই মেজোবউ তার ছেলেমেয়েকে নিয় মিস জোন্সের কাছে চলে গেল। যাওয়ার আগে শুধু বড়োবউকে চুপি চুপি বলে গেল, “শাশুড়ি বিশেষ পীড়াপীড়ি করলে বাপের বাড়ি গেছি বোলো!” বড়োবউ ক্ষুণ্ণ হয়ে চুপ করে রইল। মেজোবউ এতটা বাড়াবাড়ি তার ভালো লাগছিল না। তবু সে মেজোবউকে একটু বেশিরকম ভালোবাসে বলেই কিছু না বলে অভিমানে গুম হয়ে রইল। কত বড়ো দুঃখে পড়ে মেজোবউ আজ মিস-বাবাদের কাছে সরে যাচ্ছে, তাও তার অজানা ছিল না। তাই আঁচলের খুঁটে চোখের জল মুছে সে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়েই রইল।

দিনকয়েক আগে থেকে তার শাশুড়িও কাঠুরে-পাড়ার সাব-ডেপুটি সাহেবের বাড়িতে চাকুরি নিয়েছিল, তাই সকালে উঠেই সেও চলে গেল, কারুর খোঁজখবর নেওয়ার আর গরজ করলে না। নইলে সকালেই হয়তো একটা কাণ্ড বেধে যেত!

পাড়ার অল্প দূরেই রোম্যান ক্যাথলিক গির্জা-ঘর। মেজোবউ গির্জার দ্বারে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তখন গির্জার ভিতরে খ্রিস্টের স্তব-গান গীত হচ্ছিল সববেত নারী-কণ্ঠে। গানের কথা সে বিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারছিল না, তার কাছে অপূর্ব মিষ্টি লাগছিল শুধু তার সুর আর প্রকাণ্ড হলে প্রতিধ্বনিত অর্গ্যানের গম্ভীর মধুর আওয়াজ। তার মন শ্রদ্ধায়, খুশিতে ভরে উঠছিল।

হঠাৎ তার মনে পড়ল তারই বাড়ির পাশের মসজিদের আজান-ধ্বনি। তার মন কী এক অব্যক্ত বেদনায় কেবলই আলোড়িত হয়ে উঠতে লাগল। তার মন যেন কেবলই শাসাতে লাগল, সে পাপ করছে – অতি বড়ো অন্যায় করছে, এর ক্ষমা নাই, এর ফল ভীষণ, তাকে অনন্তকালের জন্য…।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কার ছোঁয়ায় চমকে উঠে দেখল, মিস জোন্স মধুর হাসিতে মুখ উজ্জ্বল করে পিছনে দাঁড়িয়ে। মেজোবউকে ইঙ্গিতে পিছনে আসতে বলে মিস জোন্স গির্জার পাশের বাড়ির একটা কামরায় গিয়ে ঢুকল। মেজোবউ কামরার বাইরে দাঁড়িয়ে রইল দেখে মিস জোন্স ভিতর হতে বললে, ‘ভিটরে এসো।’মেজোবউ স-সংকোচে ভিতর গিয়ে দেখলে, সামনের টেবিলে চা-বিস্কুট প্রভৃতি খাবার। মিস জোন্স মেজোবউকে তার বিছানার জোর করে বসিয়ে বললে, “একটু চা খাও আমার সাটে, টারপর কঠা হবে।”

মেজোবউ কিছুতেই রাজি হয় না খেতে। অনেক পীড়াপীড়ির পর বললে, “মিস-বাবা আমাদের জাত যায় তোমাদের সাথে খেলে।” মিস জোন্স চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ে বললে, “ও ঘড! আমিও টো টা জানটুম।” বলে মুখ ম্লান করে কী যেন ভাবতে লাগল। তারপর বললে, “কিন্টু টোমাডের মুসলমান ধর্মের অনেক কিছু আমি জানি, টাটে কারুর সঙ্গে খেটে নিষেড নেই।” মেজোবউ হেসে বলল, “তা তো আমি জানি না, আমাদের মউলবি সায়েব আর মোড়ল তো অনেক জরিমানা করেছে খেরেস্তানদের ছোঁয়া খাওয়ার জন্যে।”

মেম সায়েব আর কিছু না বলে মেজোবউয়ের ছেলেমেয়ে দুটিকে কাছে টেনে নিয়ে বিস্কুট হাতে দিয়ে বললে, “এদের আমি চা খাওয়ালে ডোষ হবে না টো?” মেজো-বু হেসে বললে, ‘হবে।’ মেম সাহেব এইবার একটু জোরের সঙ্গে বললে, “নিশ্চয় হবে না। ওরা এখনও মুসলমান-ক্রিশ্চান কিছু নয় – ওরা শিশু।”

মেজোবউ চুপ করে রইল। সে তখন অন্য কথা ভাবছিল।

ক্ষুধার্ত শিশু বিস্কুট হাতে করে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল। মেজোবউ অস্ফুটস্বরে বলল, “খা।”

ছেলেমেয়েদের চা খাওয়া হলে মিস জোন্স নিজে চা খেয়ে বললে, “টোমায় জোর করে খাওয়াব না। টবে টুমি কিছু না খেয়ে অমনি রইলে। যাক, টোমাকে ডাকব কী বলে? টোমার নাম টো একটা আছে।”

মেজোবউ হেসে বললে, “নাম একটা ছিল হয়তো বিয়ের আগে। তা এখন ভুলে গিয়েছি। এখন আমি ‘মেজোবউ’।”

মিস জোন্স হেসে বললে, “আচ্ছা, আমি টোমায় মেজোবউই বলব।”

বলেই মিস জোন্স কী ভাবলে অনেকক্ষণ ধরে। তারপর আস্তে আস্তে বললে, “ডেখ মেজোবউ, আমি টোমায় ভালোবেসেছি। কেন টোমায় এট ভালো লাগে জানি না। আমি টোমাকে আপন সিস্টারে মটো করে লেখাপড়া শেখাব।”

মেজোবউয়ের চোখ জলে টলমল করে উঠল।

প্রায় এগারোটার সময় যখন সে ছেলেমেয়ের হাত ধরে বাড়ি ঢুকল আবার এসে, তখন তার শাশুড়ি শিলাবৃষ্টির মেঘের মতো মুখ করে রান্নাঘরের সামনে বসে বোধহয় মেজোবউয়েরই প্রতীক্ষা করছিল।

মেজোবউ কিছু না বলে সোজা ঘরে ঢুকল গিয়ে। শুধু তার খোকা দৌড়ে তার দাদির কোলে উঠে বললে, “বল তো দিদি, কোথায় গিয়েছিলুম।” ভিতর থেকে মেজোবউ চিৎকার করে উঠল, “খোকা, এদিকে আয়!” ছেলে ভয়ে ভয়ে মায়ের কাছে চলে গেল। শাশুড়িও এইবার শতধারে ফেটে পড়ল। ঝড়, বজ্র ও শিলাবৃষ্টির মতোই বেগে চিৎকার, কান্না ও গালি চলতে লাগল। মেজোবউ চুপ করে শুনে যেতে লাগল।

মৃত্যুক্ষুধা – ১৫

চাঁদ-সড়কে সেদিন বেশ একটু চাঞ্চল্যের সাড়া পড়ে গেল। লক্ষীছাড়া-মতো চেহারার লম্বা-চওড়া একজন মুসলমান যুবক কোত্থেকে এসে সোজা নাজির সাহেবের বাসায় উঠল। নাজির সাহেব কৃষ্ণনগরে সবে বদলি হয়ে এসে চাঁদ-সড়কেই বাসা নিয়েছেন।

যুবকের গায়ে খেলাফতি ভলান্টিয়ারের পোশাক। কিন্তু এত ময়লা যে চিমটি কাটলে ময়লা ওঠে। খদ্দরেই জামা-কাপড়–কিন্তু এত মোটা যে, বস্তা বলে ভ্রম হয়। মাথায় সৈনিকদের ‘ফেটিগ-ক্যাপের’ মতো টুপি, তাতে কিন্তু অর্ধচন্দ্রের বদলে পিতলের ক্ষুদ্র তরবারি-ক্রস। তরবারি-ক্রসের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানের মিলনাত্মক একটা লোহার ছোট্ট ত্রিশূল। হাতে দরবেশি ধরনের অষ্টাবক্রীয় দীর্ঘ যষ্ঠি। সৈনিকদের ইউনিফর্মের মতো কোট-প্যান্ট। পায়ে নৌকার মতো এক জোড়া বিরাট বুট, চড়ে অনায়াসে নদী পার হওয়া যায়। পিঠে একটা বোম্বাই কিটব্যাগ। শরীরের রং যেমন ফরসা তেমনি নাক-চোখের গড়ন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত যেন মাপ করে তৈরি –গ্রিক-ভাস্করের অ্যাপোলো মূর্তির মতো – নিখুঁত সুন্দর।

কিন্তু এমন চেহারাকে লোকটা অবহেলা করে পরিত্যক্ত প্রাসাদের মর্মর-মূর্তির মতো কেমন ম্লান করে ফেলেছে। সর্বাঙ্গে ইচ্চাকৃত অবহেলার, অযত্নের ছাপ। গায়ে মুখে এত ময়লা যে, মনে হয় এই মাত্র ইঞ্জিন চালিয়ে এল। দাড়ি সে রাখে না, কিন্তু বোধহয় হপ্তাখানেক ক্ষৌরি না করার দরুন খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়ে মুখটা বঁইচিকন্টকাকীর্ণ বাগিচার মতো বিশ্রী দেখাচ্ছে।

কিন্তু এ-সবে ওর নিজের কোনোরূপ অসোয়াস্তি হচ্ছে বলে মনে হয় না। সে স্টেশন থেকে পায়দল হেঁটে এসে পিঠের কিটব্যাগটা সশব্দে মাটিতে ফেলে দিয়ে নাজির সাহেবের বাইরের ঘরের ইজি-চেয়ারটাতে এমন আরামের সঙ্গে পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল, যেন এ তার নিজেরই বাড়ি এবং সে এইমাত্র বাথরুম থেকে ‘ফ্রেশ’ হয়ে বেরিয়ে আসছে।

তখন সবেমাত্র সকাল হয়েছে এবং নাজির সাহেব তখনও ওঠেননি।

ইজিচেয়ারে শোওয়ার একটু পরেই যুবকের নাক ডাকতে লাগল।

গোটা-আটেকের সময় নাজির সাহেব দহ্‌লিজে এসে যুবক দেখে একটু হকচকিয়ে গেলেন। মনে করলেন, কোনো কাবুলিওয়ালা কাপড়ের গাঁটরি রেখে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নাজির সাহেব অতিমাত্রায় ভালোমানুষ। কাজেই একজন কাবুলিওয়ালা তাঁর ইজি-চেয়ারে ঘুমোচ্ছে মনে করেও তিনি কিছু না বলে বাড়ির ভিতর চলে গেলেন ; এবং যাতে বেচারার ঘুমের ব্যাঘাত না হয়, তজ্জন্য তাঁর দুরন্ত ছেলেমেয়ে কটিকে বাইরের ঘরে যেতে নিষেধ করলেন।

ছেলেরা এ খবর জানত না। তার মনে করল, মানা যখন করছে, তখন নিশ্চয়ই কোনো একটা মজার জিনিস এসে থাকবে সেখানে। ওদের দলের সর্দার আমিরের বয়স খুব জোর বছর আটেক হবে। বাকি সব তার জুনিয়র। সিঁড়ি-ভাঙা অঙ্কের মতো এক ধাপা করে নীচে।

আমির তার ‘গ্যাং’কে চুপিচুপি কী বললে। সকলের চোখে-মুখে খুশির একটা তীব্র হিল্লোল বয়ে গেল– হঠাৎ বিদুৎ-ঝলসানির মতো। চুনীবিল্লির মতো মুখ করে সকলে বেড়িয়ে গেল। তারপর বাইরের দিক থেকে এসে ঈষৎ দরজা ফাঁক করে দেখতে লাগল। কিন্তু লোকটার চেহারা দেখে অনেকটা উৎসাহ কমে গেল। ওর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদে যেটি, সে প্রায় কেঁদে ফেলে বললে, “ওঁ বাঁবাঁ! জুঁ জুঁ!” তার একধাপ উঁচু সিনিয়র ছেলেটি ভয়ে ভয়ে বললে, “উঁহু, ছেলেধরা, ওই দেখ ঝুলি!” বলেই কিটব্যাগটা দেখিয়ে দিলে। বাস আর যায় কোথা! সঙ্গে সঙ্গে আমির ছাড়া আর সকলে “মার মার না পগার পার”করে দৌড় দিলে।

আমির কিন্তু হটবার ছেলে নয়। তার উপর সে দলপতি। ভয় যতই করুক, পালিয়ে গেলে তার প্রেস্টিজ থাকে না। কাজেই সে কিছুই না বলে গম্ভীরভাবে একটা লম্বা খড় এনে সোজা নিদ্রিত যুবকটির নাকের ভিতর প্রবেশ করিয়ে দিল; যুবকটি একেবারে লাফিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠল। আমিরের স্ফূর্তি দেখে কে! সে তখন হেসে একেবারে গড়িয়ে পড়েছে!

যুবকটি কিছু না বলে পকেট থেকে একটি রিভলবার বের করে আমিরের দিকে লক্ষ করে শট করলে। ভীষণ শব্দে নাজির সাহেব মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটে এলেন। আরও অনেক এ ছুটে এল। আমির ভয়ে জড়পিণ্ডবৎ হয়ে গেছে, কান্না পর্যন্ত যেন আসছে না! তার বাবাকে আসতে দেখে সে একেবারে চিৎকার করে তাঁকে জড়িয়ে ধরল গিয়ে। তিনি কিছু বলবার আগেই যুবকটি হাসতে হাসতে তার রিভলবারটা নিয়ে আমিরের হাতে গুঁজে দিতে দিতে বলতে লাগল, “এটা তোমায় দিলাম।” নাজির সাহেবের দিকে ফিরে বললে, “এটা নকল রিভলবার। এটা দিয়ে অনেক পুলিশকে অনেকবার ঠকিয়েছি।”

নাজির সাহেব ও উপস্থিত সকলে যুবককে উন্মাদ মনে করে হতভম্ব হয়ে তার কার্যকলাপ দেখছিলেন। এইবার অনেকেই হেসে ফেললে। কিন্তু কারুর কিছু বলবার আগেই আমির তার বাবার কোল থেকে নেমে যুবকটির দিকে রিভলবার লক্ষ করে বলে উঠল, “এইবার হাম তোমাকে গুলি করেগা।”

নাজির সাহেব যুবকটির মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছিলেন । একে কোথায় দেখেছেন যেন। অথচ ঠিক স্মরণও করতে পারছিলেন না। হঠাৎ পেছন থেকে ‘কড়াফোন’হল, অর্থাৎ অন্দর মহলের দিককার দরজাটার কড়ার শব্দ হল। নাজির সাহেব দোরের ফাঁকে মুখ দিয়ে জিজ্ঞেস করবার আগেই ভিতর থেকে মৃদু শব্দ এল, “চিনতে পারছে না? ও যে আমাদের আনসার ভাই!

নাজির সাহেব দৌড়ে এসে যবুকটিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আরে তৌবা! তুমি আনসার! আচ্ছা ভেক ধরেছ যা-হোক। এ কী কাবুলিওয়ালা সেজেছে, বল তো! আরে, ভিতরে এসো ভিতরে এসো।” বলতে বলতে তাকে টেনে একেবারে অন্দরে নিয়ে গেলেন।

অন্দর যেতেই নাজির সাহেবের স্ত্রী এসে তাকে সালাম করল। যুবক হেসে বললে, কী রে বুঁচি, তোর চোখের তো খুব তারিফ করতে হয়। আচ্ছা, এই দশ বছর পরে দেখে চিনতে পারবি কী করে?” –এইখানে বলে রাখা ভালো, শ্রীমতি বুঁচি – ওরফে লতিফা বেগম – আনসারের ‘খালেরা বহিন’বা মাসতুতো বোন। আনসারের চেয়ে বয়সে সে বছর পাঁচেকের ছোটো। কুড়ি বছরেই সে বুড়ি হলেও চারটি ছেলের মা হয়েছে।”

লতিফা আঁচলে চোখ মুছে বললে, ‘মেয়েরা দশ হাজার বছর পরে দেখা হলেও আপনার জনকে চিনতে পারে ভাই, ওরা তো আর পুরুষ নয়!’বলেই নাজির সাহেবের দিকে বক্রদৃষ্টি দিয়ে তাকালে।

নাজির সাহেব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “দেখ, স্ত্রীর ভাইকে দশজন ভদ্রলোকের সামনে চিনে ফেলে সম্বন্ধটা ফাঁস করে দিলে তুমি হয়তো খুশি হতে, কিন্তু আনসার হত না।”

আনসার নাজির সাহেবের কবজিটা ধরে রাম-টেপা দিয়ে বললে, “চোপ, শালা!”

তার টেপার তাড়নে নাজির সাহেব উঁহু উহুঁ করে চেঁচিয়ে উঠে বললেন, “দোলাই ভাই! ছেড়ে দে! আমিই তোর শালা!”

আনসার হেসে হাত ছেড়ে দিলে।

নাজির সাহেব কবজিতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, “উঃ! আর একটু হলেই হাতটা পাউডার হয়ে গেছিল আর কি! তুমি তেমনই গোঁয়ার আছ দেখছি!”

লতিফা হেসে বললে, “এখন তোমার এই ঝুলঝোপপুর পোশাকগুলো খুলে ফেলো দেখি! তৌবা, তৌবা! কী চেহারাই করেছ! কাপড়-চোপড় আছে সঙ্গে, না এনে দেব? আগে নেয়ে নেবে, না চা আনব?”

আনসার মেঝেতেই হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে বলে উঠল, “আঃ! কী নাম শুনালি রে বুঁচি! চা! চা! আঃ! আগে চা নিয়ে আয় তো, তারপর সব হবে!” বলেই গুন গুন করে গাইতে লাগল –

কাপ-কেটলিবাসিনী সিদ্ধিবিধায়িনী
মানস-তামসমোষিণী হে!
দুগ্ধ ও শর্করা-মিশ্র শ্বেতাম্বরা
চিনা-ট্রেবাহিনী জাড্য হরে।

লতিফা চা আনতে চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল, ‘পাগল!’

একটি ছোট্ট কথা! ওতেই মনে হল, যেন লতিফা তার প্রাণের সমস্ত সুধা দিয়ে উচ্চারণ করলে ওই কথাটি। ঘর-ছাড়া ভাইকে বহুকাল পরে কাছে পেয়ে বোনের প্রাণ বুঝি এমনই করেই তোলপাড় করে ওঠে।

চা করতে গিয়ে সেদিন একটু অতিরিক্তই দেরি হল। সেদিন উনুনের সকল ধোঁয়া বুঝি লতিফার চোখে ভিড় করে জমেছিল এসে। সেদিন চায়ের জলের অর্ধেকটা ছিল কেটলির, আর অর্ধেকটা চোখের।

Page 13 of 25
Prev1...121314...25Next
Previous Post

তেইশ নম্বর তৈলচিত্র – আলাউদ্দিন আল আজাদ

Next Post

সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে – হুমায়ুন আজাদ

Next Post

সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে - হুমায়ুন আজাদ

বেতাল পঞ্চবিংশতি – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In