বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

গণদেবতা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Gonodebota by Tarasankar Bandyopadhyay

অমরকুণ্ডার ক্ষেতে এখনও জল রহিয়াছে, জলের মধ্যে প্রচুর মাছ জন্মায়; আল কাটিয়া দিয়া মুখে ঝুড়ি পাতিয়া হাড়ি, বাউরি, ডোম ও বায়েনদের মেয়েরা মাছ ধরিতেছে। ক্ষেতের মধ্যেও অনেকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, তাহাদের দেখা যায় না—কেবল ধানগাছগুলি চিরিয়া একটা চলন্ত। রেখা দেখা যায়, যেমন অগভীর জলের ভিতর মাছ চলিয়া গেলে জলের উপর একটা রেখা জাগিয়া ওঠে ঠিক তেমনি। অনেকে ঘাস কাটিতেছে; কাহারও গরু আছে কেহ ঘাস বেচিয়া দুই-চার পয়সা রোজগার করে। এই এখানকার জীবন।

অমরকুণ্ডার মাঠের ঠিক মাঝামাঝি একটি প্রশস্ত আলের উপর দিয়া যাওয়া-আসার পথ। প্রশস্ত অর্থে এক জন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলিতে পারে, দুই জন হইলে গা ঘেঁষাঘেঁষি হয়। এই পথ। ধরিয়া গ্রামের গরুবাছুর নদীর ধারে চরিতে যায়। ধান খাইবে বলিয়া তখন তাদের মুখে একটি করিয়া দড়ির জাল বাঁধিয়া দেওয়া হয়। প্রৌঢ় চৌধুরী একটু হতাশার হাসি হাসিল—গরুগুলির মুখের জাল খুলিবার মত গোচরও আর রহিল না।

বন্যারোধী বাঁধের ওপারে নদীর চর ভাঙিয়া রবি ফসলের চাষের একটা ধুম পড়িয়া গিয়াছে। চাষীদের অবশ্য আর উপায়ও ছিল না। অমরকুণ্ডার মাঠের অর্ধেকের উপর জমি কঙ্কণার বিভিন্ন ভদ্রলোকের মালিকানিতে চলিয়া গিয়াছে। অনেক চাষীর আর জমি বলিতে কিছুই নাই। এই তাহারাই প্রথম নদীর ধারে গো-চর ভাঙিয়া রবি ফসলের চাষ আরম্ভ করিয়াছিল। এখন দেখাদেখি সবাই আরম্ভ করিয়াছে। কারণ চরের জমি খুবই উর্বর। সারা বর্ষাটাই নদীর জলে ড়ুবিয়া থাকিয়া পলিতে পলিতে মাটি যেন সোনা হইয়া থাকে। সেই সোনা, ফসলের কাও বাহিয়া শীষ ভরিয়া দানা হইয়া ফলিয়া ওঠে। গম যব সরিষা প্রচুর হয়; সকলের চেয়ে ভাল হয় ছোলা। ওই চরটার নামই ছোলাকুড়ি বা ছোলাকুণ্ড। এখন অবশ্য আলুর চাষেরই রেওয়াজ বেশি। আলু প্রচুর হয় এবং খুব মোটাও হয়। নদীর ওপারের জংশনে আলুর বাজারও ভাল। কলিকাতা হইতে মহাজনেরা ওখানে আলু কিনিতে আসে; এ কয় মাসের জন্য তাহাদের এক-একজন লোক আড়ত খুলিয়া বসিয়াই আছে–আলু লইয়া গেলেই নগদটাকা। বড় চাষী যাহারা তাহারা বিশ-পঞ্চাশ টাকা দানও পায়।

সকলের টানে চৌধুরীকেও গো-চর ভাঙিয়া আলু-গম-ছোলার চাষ করিতে হইতেছে। চারিপাশে ফসলের মধ্যে তাহার গোচরে গরু চরানো চলে না; অবুঝ অবোলা পশু কখন যে ছুটিয়া গিয়া অন্য লোকের ফসলের উপর পড়িবে—সে কি বলা যায়। তাহার উপর অমরকুণ্ডার মাঠে উৎকৃষ্ট দোয়েম জমিতে রবি ফসলের চাষও অসম্ভব হইয়া উঠিয়াছে। কঙ্কণার ভদ্রলোকের জমি সব পড়িয়া থাকে, তাহারা রবি ফসলের হাঙ্গামা পোহাইতে চায় না, আর খইল-সারেও। টাকা খরচ তাহারা করিবে না। কাজেই তাহাদের জমি ধান কাটার পর পড়িয়াই থাকে। অধিকাংশ জমি চাষ হইলে—সেখানে কতকটা জমি পতিত রাখিয়া গরু চরানো যেমন অসম্ভব, আবার অধিকাংশ জমি পতিত থাকিলে—সেখানে কতকটা জমি চাষ করাও তেমনি অসম্ভব। তবু তো গরু ছাগলকে আগলাইয়া পারা যায়; কিন্তু মানুষ ও বানরকে পারা যায় না। তাহারা খাইয়াই শেষ করিয়া দিবে। কালীপুরের দোয়েম–সোনার দোয়েম!…

এদিকে যুদ্ধ বাঁধিয়া সব যেন উল্টাইয়া গেল (প্রথম মহাযুদ্ধ)। কি কাল যুদ্ধই না ইংরেজরা করিল জার্মানদের সঙ্গে। সমস্ত একেবারে লণ্ডভণ্ড করিয়া দিল। দুঃখ-দুর্দশা সবকালেই আছে, কিন্তু যুদ্ধের পর এই কালটির মত দুর্দশা আর কখনও হয় নাই। কাপড়ের জোড়া ছ-টাকা সাতটাকা, ওষুধ অগ্নিমূল্যমায় পেরেক ও সুচের দাম চারগুণ হইয়া গিয়াছে। ধানচালের দরও প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়াছে; কিন্তু কাপড়চোপড়ের দর বাড়িয়াছে তিনগুণ। জমির দামও ডবল হইয়া গিয়াছে। দর পাইয়া হতগাভা মূর্খের দল জমিগুলা কঙ্কণার বাবুদের পেটে ভরিয়া দিল। ফলে এই অবস্থা, আজ আফসোস করিলে কি হইবে।

মরুক, হতভাগারা মরুক! আঃ, সেই তেরোশো একুশ সালে যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছিল, যুদ্ধ শেষ হইয়া গিয়াছে পঁচিশ সালে; আজ তেরোশো উনত্রিশ সাল-আজও বাজারের আগুন নিবিল না। কঙ্কণার বাবুরা ধুলামুঠা সোনার দরে বেচিয়া কাড়ি কাড়ি টাকা আনিতেছে আর কালীপুরের জমি কিনিতেছে মোটা দামে। ধুলা বৈকি! মাটি কাটিয়া কয়লা ওঠে—সেই কয়লা বেচিয়া তো তাহাদের পয়সা। যে-কয়লার মন ছিল তিন আনা, চোদ্দ পয়সা, আজ সেই কয়লার দর কিনা চোদ্দ আনা। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত এই বাজারে আবার প্রেসিডেন্ট পঞ্চায়েতি ঘুচাইয়া ট্যাক্স বাড়াইয়া বসাইল ইউনিয়ন বোর্ড। বাবুরা সব বোর্ডের মেম্বর সাজিয়া দণ্ডমুণ্ডের মালিক হইয়া বসিল—আর, দাও তোমরা এখন ট্যাক্স! ট্যাক্স আদায়ের ধুম কি! চৌকিদার দফাদার সঙ্গে লইয়া বাঁধানো খাত বগলে বোর্ডের কেরানি দুর্গই মিশ্ৰ যেন একটা লাটসাহেব!

সহসা চৌধুরী চকিত হইয়া থমকাইয়া দাঁড়াইল। কে কোথায় তারস্বরে চিৎকার করিয়া কাঁদিতেছে না? লাঠিটি বগলে পুরিয়া রৌদ্রনিবারণের ভঙ্গিতে জ্বর উপরে হাতের আড়াল দিয়া এপাশ-ওপাশ দেখিয়া চৌধুরী পিছন ফিরিয়া দাঁড়াইল। হ্যাঁ, পিছনেই বটে। ওই গ্রাম হইতে কয়জন লোক আসিতেছে, উহাদের ভিতরেই কেহ কাঁদিতেছে, সে স্ত্রীলোক, তাহাকে দেখা যাইতেছে না, সামনে পুরুষটির আড়ালে সে ঢাকা পড়িয়াছে। আ-হা-হা! পুরুষটা! পুরুষটা কেউটে সাপের মত ফিরিয়া মেয়েটার চুলের মুঠি ধরিয়া দুমদাম করিয়া প্রহার আরম্ভ করিয়া দিল। চৌধুরী এখান হইতেই চিৎকার করিয়া ওঠে—এই, এই; আ-হা-হা! ওই!

Page 9 of 120
Prev1...8910...120Next
Previous Post

রাজপাট – তিলোত্তমা মজুমদার

Next Post

কবি – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Next Post

কবি - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

আরোগ্য-নিকেতন - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In