‘এই খেদ আমার মনে—
ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে।
হায়-জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?’
রাজা তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল—হায় হায় হায় রে! বল ওস্তাদ, জীবন এত ছোট কেনে? হায় হায় হায়।
নিতাই বলিল—তাই যদি জানব রাজন! —আবার তাহার চোখ হইতে জল ঝরিতে শুরু হইল। আবার কাঁদিল। নিতাইয়ের চোখ হইতে আবার অনর্গল ধারায় জল পড়িতে আরম্ভ হইল।
কান্নার মধ্যেই আবার তাহার মুখে হাসি ফুটিয়া উঠিল। না—ঠাকুরঝি মরে নাই, সে যে স্পষ্ট দেখিতেছে, ওই যেখানে রেলের লাইন দুটি একটি বিস্মৃত মিলিয়া বাঁকিয়া চলিয়া গিয়াছে দক্ষিণ মুখে নদী পার হইয়া, সেইখানে মাথায় সোনার টোপর দেওয়া একটি কাশ ফুল হিল-হিল করিয়া দুলিতেছে, আগাইয়া আসিতেছে যেন! সে আছে, আছে। এখানকার সমস্ত কিছুর সঙ্গে সে মিশিয়া আছে। এই কৃষ্ণচূড়ার গাছ। হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল—এইখানে বসন আসিয়া প্রথম দিন শুইয়া বলিয়াছিল—কই হে! ওস্তাদ না—ফোস্তাদ! চকিতের মত মনেও হইল— বসনও যেন শুইয়া আছে! আঃ! ঠাকুরঝি, বসন—দুইজনে যেন পাশাপাশি দাঁড়াইয়া আছে। মিশিয়া একাকার হইয়া যাইতেছে।
নিতাই উঠিল, বলিল—চল।
—কাঁহা ভাইয়া?
—চণ্ডীতলায়। চল, মাকে প্রণাম করে আসি।
রাজার মুখের দিকে চাহিয়। সে বলিল—গড়াগড়ি দিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্ৰণিপাত করব মাকে।
তাহার সর্বাঙ্গ যেন এখানকার ধূলামাটির স্পর্শের জন্য লালায়িত হইয়া উঠিয়াছে। মায়ের দরবারে মাকে গিয়া শুধইবে—মাগো—জীবন এত ছোট কেনে?