বালাজির মুকুটে আছে আঠাশ হাজার হিরে। একটা নয়, আঠাশ হাজার হিরের সন্নিবেশ সম্ভব হয় কি কবে, আমি (যাকে আমার প্রিয় লেখকবন্ধু মৃগাঙ্ক রায় বলে হীরক চক্ষু) যখন তাই নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছি আমার খুদে মগজের মধ্যে,তখন রবি রে ফের শুরু করেছিল বালাজির অন্য অন্য হিরের সম্ভাব প্রসঙ্গ। বলেছিল–
ইন্দ্র, আমার চিত্ত চমৎকৃত হয়েছিল যখন শুনলাম আঠাশ হাজার হিবে সমেত বালাজির মুকুটের ওজন…কত হতে পারে? আচ্ছা, আচ্ছা, আমিই বলছি…ষাট পাউণ্ড! প্রায় সোয়া সাতাশ কিলোগ্রাম! ভাবা যায়? সোয়া সাতাশ কেজি ওজনের হিরে বসানোর মুকুট মাথায় নিয়ে সিবে রয়েছেন বালাজি! তিনি কি নারায়ণ? কেন না, তার হাতে আছে শঙ্খ আর চক্র। দুটো হাতিয়ারকেই ঝকমকে করে তোলা হয়েছে হিরের পর হিরে বসিয়ে। হাত দুটোতেই শুধু হিরে আর হিরে বসিয়ে যেন নক্ষত্র আঁকালো দু’টো ছায়াপথ বানানো হয়েছে। কানের লতিতে ঝুলছে প্রকাণ্ড কর্ণ-অলঙ্কার—হীরকম। ইন্দ্র, ইন্দ্র, থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল আমাকে এত হিরের একত্র সমাবেশ দেখে। এক অঙ্গে এত হিরে! জড়োয়ার জেল্লা যে কি পরিমাণে চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে, চোখের রঙ্কু দিয়ে রোশনাই মগজে ঢুকে চিন্তা বুদ্ধিকে অসাড় করে দিতে পারে, ব্রেনকে বিকল করে দিয়ে আঙুলের ডগা পর্যন্ত অসাড় করে দিতে পারে–বালাজির বিগ্রহ তার সেরা নিদর্শন—এই পৃথিবীতে…মাত্র ন’হাজার মাইল ব্যাসের এই পৃথিবীতে বুঝি থরহরিকম্প জাগাতে পারে শুধু এই বালাজি বিগ্রহ তার শ্রীঅঙ্গের এত হিরের অলৌকিক প্রতাপ বিকীর্ণ করে।
ইন্দ্র… সেই থেকে… সেই মুহূর্ত থেকে… হিরে আমাকে টেনেছিল, হিরে আমাকে জাদু করেছিল…, হিরে আমাকে হিপনোটাইজ করেছিল… হিরে… হিরে… হিরে… এই হিরে কোত্থেকে আসছে… কোথায় যাচ্ছে… কত কি কাণ্ড করে চলেছে… তা আমাকে জানতে হবে… জানতেই হবে… সে ভাবেই হোক।
বলতে পারিস আমি অলৌকিকভাবে আচ্ছন্ন হয়ে গেছিলাম। হিরের মধ্যে নিশ্চয় একটা অতিপ্রাকৃত আকর্ষণ আছে… ম্যাগনেটিক আকর্ষণ সে তুলনায় কিছুই নয়… এই টান… হিরের এই আকর্ষণ নিয়ে গবেষণা করা দরকার। ব্যাপারটা আমার মাথার মধ্যে আছে।
ব্যাবিলনীয়, মিশরীয়, বৈদিক যুগ থেকে হিরে কেন বিস্তর বিস্ময়কর কেন্দ্রবিন্দু দখল করে রয়েছে… কী শক্তির মহিমায়… তা নিয়ে গবেষণা একদিন আমি করবই… তার আগে গড়ে তুলব নিজের হিরের কারখানা। ইন্দ্র, ব্যাঙ্গালোরের জহর কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছি এই প্রেরণা নিয়েই। হয়তো বালাজি’র মহিমায়… হয়তো!
ধরনা দিয়েছিলাম নন্দিতা কৃষ্ণা’র কাছে। তুই তো জানিস, অনেক রঙ্গ রসের গল্প করেছি তোকে আমার এই মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ লাইনের বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে। ডাক্তারদের সঙ্গে দহরম মহরম বাখতে গিয়ে আপনা থেকে অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠতে যে সব ডাক্তাররা মহিলা সেবিকা রাখেন-তাদের সঙ্গে। নার্স… নার্স… মেট্রন… সেবিকা বললে হয়তো মাথায় ঢুকবে না, তাই ইংলিশ। করে দিলাম। ডাক্তারি একটা বিজনেস… উকিল ব্যবসার মতো… অনেক উকিল যেমন লে িজুনিয়র রাখেন, অনেক ডাক্তারও তেমনি লেডি সাগরেদ রাখেন… মহিলা পেসেন্ট এলে যাতে অসুবিধা না হয়… ডাক্তার ভিজিট করতে গিয়ে এই সব অ্যাট্রাকটিভ নাস-মেট্রনদের সঙ্গে অটোমেটিক্যালি আমার একটা হৃদ্যতা গড়ে উঠত… নো, ম্যান, নো… অন্য সম্পর্ক গড়ে তোলার চান্স দিতাম না… তাহলে তো শ্রীকৃষ্ণের মতো হাজার যোল গোপিনী গড়ে উঠত এতদিনে… ওই একটা ব্যাপারে আমি খুব সজাগ… এমন কি নন্দিতা কৃষ্ণা নাম্নী সেই মেট্রনটির ক্ষেত্রেও… ভদ্রমহিলা যুবতী, রূপসী, টান-টান শরীরের অধিকারিনী, কিন্তু নিয়মিত রতিতৃপ্তি দিয়ে যেত ইহুদি ডাক্তার মহাশয়কে… বয়স যাঁর সত্তর… ইন্দ্রিয় ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে ইয়োহিমবাইন হাইড্রোক্লোরাইড ইঞ্জেকশনটা নিতেন আমার কাছ থেকে…তখন তো ভায়াগ্রা বাজারে আসেনি… ভুরু কুঁচকোসনি… মূল কথা থেকে অমূল কথায় যেতে গেলে একটু-আধটু রসেব কথা এসে যাবেই…
চেন্নাই… মানে, মাদ্রাজের এই নন্দিতা কৃষ্ণা যে কি টেরিফিক ব্ল্যাক বিউটি, তা তোকে ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। মিশমিশে পাথর কুঁদে গড়া বললেই চলে। বালাজি বিগ্রহ যে পাথর থেকে তৈরি, অনেকটা সেই রকম পাথরের মতো। কিন্তু পাথরের জেল্লার জন্যে তার সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তুলেনি। ভদ্রমহিলা ব্যক্তিগত জীবনে কি ছিল, তা নিয়ে মস্তিষ্ক ঘর্মাক্ত করিনি—আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম তার জহর জ্ঞানের জন্যে।
নিছক জহর নয়, হিরে নামক পাথরটা সম্বন্ধে নন্দিতা একটা লিভিং এনসাইক্লোপিডিয়া বললেই চলে। জীবন্ত বিশ্বকোষ। একদিকে বালাজির প্রায় সেবাদাসী। অষ্টপ্রহর বালাজির নাম সংকীর্তন করত বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। আর ঠিক এই একটা কারণেই আমি নিবিড় নৈকট্য রচনা করেছিলাম নন্দিতার সঙ্গে।
ইন্দ্র, কল্পনার সঙ্গে ভাব হওয়ার পর কথায় কথায় নন্দিতা প্রসঙ্গ এসে যেত। ঈর্ষার ফুলকি দেখতে পেতাম কল্পনার ফিকে সবুজ চোখের তারায়। এই মেয়েরা একটা জাত বটে। বিশেষ জীব। এদের ছাড়া গত অচল। অথচ এরা এত। ঈর্ষাকাতর যে কহতব্য নয়।
উল্টোপাল্টা বকছি? মেয়েদের ম্যাটার এলেই আমি একটু টলে যাই, মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড…আফটার অল, আই অ্যাম আ হিম্যান …
যাকগে… যাগগে…নন্দিতা… নন্দিতা নাটকে আসা যাক। নন্দিতা… কৃষ্ণা কামিন নন্দিত… হিরে নিয়ে গুলে খাওয়া কন্যা নন্দিতা… আমার ভেতর পর্যন্ত গুলিয়ে ছেড়েছিল শেষ পর্যন্ত, স্রেফ হীরক শক্তির ব্যাখ্যা শুনিয়ে…