কথা পেচাবি না, আমার খুবই বিরক্তি লাগে। কী বলতে চাচ্ছিস বল।
ওস্তাদ শমসের উদ্দিন খাঁ সাহেব তোমাকে সালাম জানিয়েছেন।
কে?
ওস্তাদ শমসের উদ্দিন খাঁ। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ব্যাঞ্জো বাদক। ব্যাঞ্জো জগতের রাজা। তাকে আমরা আদর করে ব্যাঞ্জো-রাজও বলতে পারি।
কী বলছিস তুই আবোলতাবোল?
ব্যাঞ্জো-রাজ ওস্তাদ শমসের উদ্দিন খাঁ সাহেবকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে তোমার সঙ্গে চা খেতে রাজি করিয়েছি। তিনি অটোগ্রাফ দেবেন এবং ছবি তুলতেও দেবেন। তবে জাস্ট একবার। তুমি পুরো এক রোল ছবি তাকে নিয়ে তুলবে তা হবে না। উনার এত ধৈর্য নেই। খুবই খিটখিটে স্বভাবের মানুষ। খালা, আমি তোমার ভাগ্য দেখে রীতিমতো ঈর্ষান্বিত।
ভ্যাজর ভ্যাজর না করে আসল ঘটনা বল। খুবই বিরক্ত লাগছে। ওস্তাদ শমসের উদ্দিন খাঁ কে?
একটু আগে না বললাম— এই উপমহাদেশের জীবন্ত ব্যাঞ্জো কিংবদন্তি।
আমার সঙ্গে তার কী? তাঁর নামও কোনোদিন শুনি নি। চোখেও দেখি নি।
তার নাম না শুনলেও অবশ্যই তাকে দেখেছি। তার সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছে।
কোথায় দেখা হয়েছে?
ভূমিকম্পের রাতে। উনি তোমার মশারির ভেতর ঘাপটি মেরে বসেছিলেন। মনে করে দেখ। টাক মাথা বুড়ো। হিজ মাস্টার্স ভয়েসের কুকুরের মতো বসন্তি মানে বসা।
কী বলছিস হাবিজাবি? তোর কি মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে?
তুমি ভুলে গেছ ভূমিকম্পের রাতে তোমার খাটের ওপর মশারি ফেলে ঘাপটি মেরে এক বুড়ো বসে ছিল না? উনিই ওস্তাদ শমসের উদ্দিন খাঁ সাহেব। ব্যাঞ্জো জগতে অপবিত্র অবস্থায় তার নাম নেয়া পর্যন্ত নিষেধ।
হিমু শোন, ঐ রাতে ভয়ে আর টেনশনে মাথা ছিল এলোমেলো। চোখে ধান্ধার মতো লেগেছে।
ধান্ধা ফান্ধা কিছু না, যা দেখেছি ঠিকই দেখেছি। বুড়োর মাথায় কোনো চুল ছিল না। মাথা ভর্তি টাকা। ঠিক না?
তা ঠিক।
গায়ের রঙ দুধে আলতায়?
মনে পড়ছে না।
মনে করে দেখ।
হ্যাঁ ফর্সাঁই, পায়ের পাতা দেখা যাচ্ছিল। ফর্সা পা। লম্বা। বাঁশপাতার মতো লম্বা।
পয়েন্টে পয়েন্টে মিলে যাচ্ছে। তুমি মহা ভাগ্যবতী। খাঁ সাহেবকেই দেখেছি।
উনাকে কেন দেখাব?
উনাকে কেন দেখবে তা তো বলতে পারছি না। কোনো একটা খেলা হচ্ছে। তুমি এবং খাঁ সাহেব তোমরা দুজনই খেলার পুতুল।
হিমু, তোর কথাবার্তা শুনে কেমন জানি লাগছে।
উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাও?
কী জিজ্ঞেস করব?
কঠিন গলায় চার্জ করতে পোর। জিজ্ঞেস করতে পোর— ভূমিকম্পের রাতে আপনি কী মনে করে আমার শোবার ঘরের খাটে বসেছিলেন? দেখি ব্যাটা কী বলে। ওস্তাদ হোক আর যাই হোক এত সহজে তো আমরা তাকে ছাড়ব না।
তুই এমনভাবে বলছিস যেন ঘটনাটা সত্যি ঘটেছে।
অবশ্যই ঘটেছে। আর না ঘটলেও সুষ্ঠ। তদন্ত হওয়া দরকার না? আসামি যখন হাতের কাছে আছে।
আসামি বলছিস কেন? উনি নিশ্চয়ই জানেন না যে উনি আমার খাটে বসেছিলেন।
তদন্ত কমিশনে এইসব প্রশ্নই জিজ্ঞেস করা হবে।
নিতান্ত অপরিচিত একজন মানুষকে এ ধরনের প্রশ্ন করবি কীভাবে?
অপরিচিত মানুষকে আগে পরিচিত করে নেব। বাসায় ডেকে একদিন চা খাওয়াব।
বাসায় ডাকতে উপলক্ষ লাগবে না?
উপলক্ষ একটা কিছু তৈরি করব। উনাকে বলব— মাজেদা সঙ্গীত বিতানের ডিরেক্টর মিসেস মাজেদা আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। উনি খুবই খুশি হবেন যদি আপনি তাঁর সঙ্গে এককাপ চা খান।
মাজেদা সঙ্গীত বিতানটা কী?
এটা একটা সিডি কোম্পানি। এরা প্ৰতিভাধর সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গীত সংগ্রহ করে। দেশে বিদেশে প্রচার করে। এই একাডেমী শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রসার চায়।
একটা লোককে মিথ্যা কথা বলে নিয়ে আসবি? সত্য উদঘাটনের জন্যেই আমাদের মিথ্যার ভিতর দিয়ে যেতে হবে, উপায় কী? উনাকে বলব, মাজেদা সঙ্গীত একাডেমী আপনার একটা সিডি প্ৰকাশ করতে চায়। চা খেতে খেতে টার্মস এন্ড কন্ডিশন্স নিয়ে একাডেমীর ডিরেক্টর মিসেস মাজেদা কথা বলবেন।
তারপর উনি যখন দেখবেন সবই ভুয়া, তখন কী হবে?
সবই ভুয়া হবে কেন? প্রয়োজনে আমরা উনার একটা সিডি বের করব। কত টাকা আর লাগবে! খালু সাহেব তো বিপথে প্রচুর টাকা কামাচ্ছেন। সেই টাকা যত নষ্ট করা যায় ততই ভালো। খালা কী বলো, ভদ্রলোককে বলব। চা খেতে?
সিডি বের করতে কত টাকা লাগে?
আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নেব। তার আগে আমরা মাজেদা সঙ্গীত একাডেমী গঠন করে ফেলি। ট্রেড লাইসেন্স বের করি। সিডি যদি ভালো চলে ঘরে বসে ব্যবসা। আমি দোকানে দোকানে সিডি দিয়ে আসব। মাসের শেষে টাকা নিয়ে আসব।
তোর খালু শুনলে রাগ করবে।
রাগ করার কিছু নেই। এটা তোমার বাতেনি ব্যবসা।
বাতেনি মানে কী? বাতেনি মানে গোপন, অপ্ৰকাশ্য। সঙ্গীত হবে তোমার গোপন ব্যবসা। রাজি?
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথা আউল লাগছে। তোর যা ভালো মনে হয়। করা। তোর খালুর সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।
তুমি পরামর্শ করতে যেও না। পরামর্শ যা করার আমি করব।
তুই কথা বলতে যাবি না। তোর ওপর সে ভয়ঙ্কর রেগে আছে। বললাম না, কেইস করেছে। তোর নামে ওয়ারেন্ট বের হয়ে গেছে। তোকে যে-কোনো দিন পুলিশ ধরবে।
ধরলে ধরুক। আপাতত আমি খালু সাহেবকে ধরব। উনার গোপন মোবাইল নাম্বারটা আমাকে দাও তো। ভয় নেই, আমি নাম্বার কোত্থেকে পেয়েছি বলব না।
খালার কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়ে আমি খালু সাহেবকে টেলিফোন করলাম। মাইডিয়ার টাইপ গলার আওয়াজে বললাম, খালু সাহেব কেমন আছেন?