ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙা উপজেলার টিকিরাপাড়া গ্রামে উনআশি সালের মে মাসের তিন ও চার তারিখে হিন্দুদের ওপর নিযাতন চালানো হয়, এলাকার হিন্দুরা প্রাণভয়ে নিজের বসতভিটে ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রাহাতপুর গ্রামের অধিবাসী হরেন বিশ্বাসের স্ত্রী, নাবালিকা মেয়ে এবং তার ছেলের বউকে একই এলাকার প্রভাবশালী নজীর মৃধা ধর্ষণ করেছে। এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের হলে নজীর নায়েব এবং তার সাঙ্গাপাঙ্গদের অত্যাচারে হরেন বিশ্বাস তার পরিবার পরিজনসহ দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
উনিশে ও বিশে মে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার দেবগ্রামের পুলিশ বঙ্গভূমি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকবার অভিযোগে ওই গ্রামের অনিল কুমার বাগচী, সুশীল কুমার পাণ্ডে, মাখন লাল গাঙ্গুলিকে আটক করে, এবং প্রচুর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি উপজেলার মিরাকাঠি গ্রামের অপ্রকৃতিস্থ রমেশ চন্দ্ৰ ওঝাকে জোর করে ধমন্তিরিত করা হয়। রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী মিনতি রানী ও তার বড় ভাই নীরদ ওঝাকে ধমন্তিরিত করবার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। মিনতি রানী এ ব্যাপারে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানালে তাকে বরং উল্টে পাশবিক নিযািতনের হুমকি দেওয়া হয়। মিনতি রানী এখন প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
গোপালগঞ্জের কচুয়া উপজেলার জোবাই গ্রামের সুধীর বৈদ্যের স্ত্রীকে সুলতান নামের একজন চাকুরিচ্যুত পুলিশ ধর্ষণ করে। লোকলজ্জায় তিনি আত্মগোপন করেছেন। সুধীর বৈদ্যকে প্ৰাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। একই গ্রামের উপেন্দ্র মালোর একটি গরু জবাই করে খেয়ে ফেলা হয়, উপেন্দ্র প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে বরং লাঞ্ছিত। হয়েছেন।
গোপালগঞ্জের বীেলতলি ইউনিয়নের বৌলতলি গ্রামের কার্তিক রায় নিজের জমির ধান রক্ষা করতে গিয়ে পাড়ার মুসলমানদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন। স্ত্রী রেণুকাকে এই নিৰ্মম হত্যাকাণ্ডকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলতে বাধ্য করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার দক্ষিণ চাঁদপুরের প্রেমানন্দ শীলের নাইনে পড়া মেয়ে মঞ্জুরানী শীলকে অষ্ট আশির চার ডিসেম্বর তারিখে রাত আটটার দিকে আবদুর রহিম তার শিষ্যদের নিয়ে অপহরণ করে। পরদিন সকালে লাকসাম থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মঞ্জু রানীর এখনও কোনও খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। অপহরণকারীদের লোকেরা প্রেমানন্দ শীল ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এই এলাকার হিন্দু অভিভাবকেরা মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সাহস পাচ্ছে না।
পাঁচিশে এপ্রিল তারিখে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার গুটিয়া গ্রামে পুলিশ কীর্তনরত অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ষোলজনকে গ্রেফতার করে। এরা ছিল দিনমজুর। পানের বরজে কাজ করত।
রাষ্ট্রধর্ম বিল পাশ হবার পর যশোর জেলার অভয় নগর উপজেলার সিদ্ধিরপাশা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ হাজার টাকা বিঘার জমি সাত-আট হাজারে বিক্রি করে ভারত চলে যাচ্ছিল, কারন ওখানের কিছু লোক বলছিল হিন্দুদের সম্পত্তি আর বিক্রি করা যাবে না। গ্রামের মাধব নন্দী হিন্দুদের বোঝাতে চেষ্টা করেন এদের কথায় জমি বিক্রি করা ঠিক নয়। এর কয়েক দিন পর মাধব নদীর বাড়িতে গভীর রাতে বারো-চৌদ্দজন লোক দা বল্লম নিয়ে হামলা চালায় আর সাত মাসের গর্ভবতী মাধব নন্দীর পুত্রবধু ও যুবতী কন্যাকে ধর্ষণ করে।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার দেবেন বিশ্বাস পনেরো মে তারিখে কারও গুলিতে নিহত হন। মামলা দায়ের করা হলেও এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
অষ্ট আশি সালের বারোই ও ষোলই আগস্ট পুলিশ সশস্ত্র যুবকদের নিয়ে বাগেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলার গরীবপুর গ্রামে হামলা চালায়। তারা মন্দিরের দেবমূর্তি ভেঙে ফেলে, নারীদের ধর্ষণ করে। বিশ-একুশজনকে ধরে বেদম মারের পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। নারায়ণ বৈরাগী, সুশান্ত ঢালী, অনুকুল বাড়ৈ, রঞ্জন ঢালী, জগদীশ বৈরাগী অনেকদিন পর্যন্ত হাজতে ছিলেন। চরবালিয়াড়ি গ্রামেও একই রকম হামলা চালালো হয়, পনেরো-ষোলজনকে আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হিজলা ও বড়বাড়িয়া গ্রামেও আট-নজনকে আটকে রেখে নিৰ্য্যতন করা হয়, পরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পারকুমির গ্রামের রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কিশোরী মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছন্দাকে গ্রামের স্কুল শিক্ষক ধর্ষণ করেছে। উনআশির ষোলই মে তারিখে ঘটনাটি ঘটে। সেদিন রাতে ছন্দা ঘুমিয়েছিল বাড়ির বারান্দায় পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে। গভীর রাতে তার স্কুল শিক্ষক নাছিমউদ্দিন কিছু লোক নিয়ে জোর করে ধরে নিয়ে যায় ছন্দাকে। তারপর পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরদিন সকগলৈ ছন্দোকে রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়, তাকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তালা থানায় মামলা দায়ের করলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা গ্রামের উজ্জ্বলা রানীকে তার বাবার সম্পত্তি দখলকারী পাঁচজন লোক ধর্ষণ করে। উজ্জ্বলা রানীর অভিভাবকেরা মুকসুদপুর থালায় এ ব্যাপারে জানাতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ কোনও এফ আই আর গ্রহণ করেনি।