–স্বামীর কি ইরেকশান হয়?
ডাক্তারের কথায় কোনও উত্তর দিতে পারি না। উত্তর দেব কী, ইরেকশান মানেই আমি বুঝতে পারি না। নিরুত্তর আমাকে ডাক্তার বুঝিয়ে বললেন ইরেকশান মানে কী। আমি বললাম আমি জানি না ওর এসব হয় কি না।
ডাক্তার প্রেসকিপশান লিখবার জন্য কলম খুলেছিলেন, বন্ধ করে বললেন স্বামীকে আসতে হবে।
–ও যে আসতে চায় না!
–রোগী না এলে ট্রিটমেন্ট হবে কী করে! আমাদের তো দু’জনকে পরীক্ষা করে বুঝতে হবে।
আমি মাথা নেড়ে চলে এলাম। বাড়ি ফিরতেই শাশুড়ি বললেন–একা একা কোথায় গিয়েছিলে?
–ডাক্তারের কাছে।
–কেন?
–একটু অসুবিধে ছিল।
–অসুখ বিসুখ হলে আলতাফ তোমাকে নেবে। তুমি বাড়ির বউ একা যাবে কেন? আর আমাকেই বা বলে গেলে না কেন?
–আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।
–ঘুমিয়ে থাকলে একা চলে যাবে এ কেমন কথা? আমার কি চিন্তা হয় না? কোথায় গেলে, কী হল না হল।
–আমি তো বলেই গিয়েছি রমজানের কাছে, যে, জরুরী কাজে বাইরে গেলাম।
–তুমি বলে গেলেই তো হবে না। আমাদের বুঝতে হবে আদৌ তোমার বাইরে যাওয়া দরকার কি না। ডাক্তারের কাছেই বা কেন যাবে।
আমি কোনও কথা না বলে শোবার ঘরে চলে যাই। কোলের কাছে বালিশ আঁকড়ে নিয়ে শুয়ে থাকি। আলতাফ বিকেলে ফিরলেই খবরটি তাকে পরিবেশন করা হয়, আমি একা বাইরে গিয়েছিলাম। শাশুড়ি এও বললেন-বউমার নাকি শরীর খারাপ। শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে তুই কি নিয়ে যেতে পারিস না? বাড়ির বউ সে, তার কি একা যেতে হবে ডাক্তারের কাছে? লোকে বলবে কী। আলতাফ একটি কথা না বলে ঘরে আসে। এসেই তার জিজ্ঞাসা, কোথায় গিয়েছিলে?
–নয়াপল্টন।
–কেন?
–ডাক্তারের কাছে।
আলতাফের মুখচোখ লাল হয়ে ওঠে। বলে–ডাক্তারের কাছে মানে? অসুখ হয়েছে নাকি তোমার?
আমি কোনও উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে থাকি আলতাফের চেপে রাখা চোয়ালের দিকে। আলতাফ একসময় চোখ নামিয়ে নেয় তার। সে রাতে সেও পাশ ফিরে ঘুমোয়। আমিই তাকে আলতো পর্শে জাগাই। বলি–তুমি কি রাগ করেছ?
কথা বলে না আলতাফ। রাগ তো করেছেই সে। ভাবি, তাকে আদর করে বোঝাই। এ যদি কোনও রোগ হয়, রোগের তো চিকিৎসা প্রয়োজন। কণ্ঠে মমতা এনে বলি–আমি তো আমাদের ভালর জন্যই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।
আলতাফ হঠাৎ চিৎকার করে বলে–তুমি তোমার রোগ সারাতে গিয়েছিলে। আমার রোগের কথা বল কেন? আমাদের শব্দটা দয়া করে উচ্চারণ করো না।
কথাগুলো সে এমন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে যে তার গা থেকে আমার হাত সরে যায়। আমার উৎসাহ উবে যায়।
০৭. বাইরে বের হওয়া নিয়ে
আমার বাইরে বের হওয়া নিয়ে আলতাফ কখনও আপত্তি করেনি। কিন্তু আজ যখন বলি–আমি গুলশান মার্কেটে যাব। আলতাফ বলে–আমি বিকেলে এসে নিয়ে যাব।
–কেন, আমি কি একা যেতে পারি না?
–তা পারবে না কেন? তুমি অনেক কিছুই পার।
–তবে একা যেতে না করছ কেন?
–আমার ইচ্ছে।
–তোমার ইচ্ছে হলেই হবে? আমার কি একটুও ইচ্ছে থাকতে নেই?
–তোমার ইচ্ছের কমতি হচ্ছে কোথায় শুনি! শাড়ি গয়না সব দিয়ে ভ তোমাকে?
–শাড়ি গয়না দাও কেন? আমি তো বলছি না আমার জন্য এইসব নিয়ে এস। এগুলো না হলে আমি মরে যাব।
–মুখে না বললেও মনে মনে ইচ্ছে আছে জানি।
–ভুল জানো। ও তোমার ভুল একটা ধারণা। ভাবো মেয়ে মাত্রই শাড়ি গয়নার পাগল। দাও বলেই মেতে থাকি এসব নিয়ে। তি;
–মেতে থাকার জন্য আর কী আছে মেয়েদের? বাড়ি ঘর সামলাবে। বাচ্চা বাচ্চা মানুষ করবে আর সাজগোজ তো করতেই হবে।
–কেন করতে হবে? না সাজলে আমি যে হীরা সেই হীরা কি আর থাকব না?
–তা হয়ত থাকবে। তবে রূপেরও তো দাম আছে। রূপের জন্যই তো…..
–রূপ মানে?
–রূপ ঠিক রাখতে হবে না। মেয়ে হয়েছ, বোঝ না?
–রূপ ঠিক না রাখলে কী হবে?
–বিয়ে হবে না। লোকে পছন্দ করবে না।
–লোকের পছন্দের জন্যই বুঝি মেয়েরা?
–আমি পছন্দ না করলে কী গতি হত তোমার?
–কিছু একটা হত নিশ্চয়ই।
–হত। ওরকমই হত। এত আরাম আয়েশ হত না। সারাদিন চুলোর পাড়ে থাকতে হত। স্বামী শাশুড়ির মার খেতে হত।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি–হ্যাঁ, এখন তো স্বামী শাশুড়ির আদর পেয়ে একেবারে মরে যাচ্ছি। তোমরা খুব সুখ দিচ্ছো আমাকে। এত সুখী আমি, তারপরও আমার দুঃখ করা মানায় না। আমি খুব বাজে মেয়ে। খুব লোভী মেয়ে। তাই না?
এ কথায় আলতাফ চুপ হয়ে যায়।
আমি আবার কথা পাড়ি–তুমি কি চাও না আমি একা কোথাও যাই!
–না।
–ঠিক আছে আমাকে বাবার বাড়ি রেখে এস।
–কেন, ও বাড়িতে যাবে কেন শুনি!
–ওখানে আমি থাকব কদিন।
–সারাজীবন তো থাকলেই ওখানে। আবার ওখানে থাকার কী আছে!
–সেটা আমি জানি কী আছে। তুমি তো আর নিজের বাড়ির বাইরে থাকছ না, তুমি কী বুঝবে।
–কদিন থাকতে চাও?
–আমার যতদিন ইচ্ছে। আমি একটু রাগ দেখিয়েই বলি।
–তোমার যা ইচ্ছে, তাই করতে চাও?
–যা ইচ্ছে তাই করা কি খুব খারাপ জিনিস? আমার ইচ্ছে গুলো তো এত খারাপ নয়।
–ভাল আর দেখি কোথায়?
আলতাফ বলে আর এদিক ওদিক ঘটে। শাশুড়ির ঘরে যায়। ওখানে তাদের গোপন শলাপরামর্শ হয়। একসময় কখন অফিসে চলে যায়। আমাকে বলেও যায় না। বিকেলে ফিরলে বলি–আজ রুবিনা ভাবীর বাসায় যাব।
-কেন?
–ইচ্ছে হচ্ছে।
–বাজে ইচ্ছে যেন আর না হয়। ওই ম হলা তোমাকে খারাপ বানাচ্ছে।
–ওর কোনও দোষ নেই।