নীলা মাঝপথে বলে, আঙুল গুনো না, এই তোমাদের একটি বিচিত্র স্বভাব, আঙুলে গোনা। এত হিসেবি তোমরা, এটা জানো না কেন? নীলা দু হাত চোখের সামনে তুলে বলে, আঙুলে গুনলে মাত্র দশটি সুযোগ পাবে, আর কড়ায় গুনলে দু হাতে চল্লিশটি পাবে। তোমাদের হিসেবে সুবিধে হবে।
বেনোয়া ধমকে থামায় নীলাকে, তোমাকে আমি আমার বাবা মার বাড়িতে নিয়ে গেছি। তোমার জন্য পাসকালকে ছেড়ে আমার ছোট্ট সুন্দরের আদরের বাচ্চাকে ফেলে তোমার সঙ্গে জীবনযাপন শুরু করেছি। পাসকালকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে বিয়ে করার কথা ভেবেছি। পাসকালকে আঘাত দিয়েছি, জ্যাকলিনকে বাবার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত করেছি। ইতালি যেতে ইচ্ছে করেছ, ইতালি গেছি। যেখানে যেখানে যেতে চেয়েছ, নিয়ে গেছি।
নীলা বলে, আমি জানি, বেনোয়া তুমি আমার জন্য অনেক করেছ।
তা হলে কেন স্বীকার করতে চাও না যে আমি তোমাকে ভালবাসি!
নীলা হাসে।
তুমি কি অন্য কারও প্রেমে পড়েছ?
নীলা আবারও হাসে।
বলো সেই দিনের ওই লোকগুলোর সঙ্গে যে সারারাত ফুসুর ফুসুর করলে, ওদের কারও সঙ্গে কি তোমার কিছু হয়েছ? বলো, কাউকে কি ভাল লেগেছে?
নীলা হেসে বলে, ওই মডিবোকে লেগেছে ভাল।
ও তুমি ভেবেছ কালো লোকদের শিশ্ন তো বেশ বড় হয়, তাই আরও বড় পাবার লোভ করছ? ও ব্যাটার ওটা ধরে দেখেছ নাকি? নীলার হাত টেনে নিজের উরুর মাঝখানে রেখে বলে, দেখো তো এর চেয়ে বড়। আমারটির চেয়ে বড়? এর দশ ইঞ্চি দৈর্ঘ, আট ইঞ্চি ঘের, এটির চেয়ে বড়? আমি যত সুখ দিই তোমাকে, ও ব্যাটা কোথাকার কোন জঙ্গল থেকে আসা, ও দিতে পারবে? ওই বনমানুষটি কোনও শিল্প জানে?
নীলা হাত টেনে নেয় বেনোয়ার শক্ত মুঠো থেকে।
ধীর শান্ত কণ্ঠে বলে, বেনোয়া, এ বাড়িতে তোমার যা কিছু আছে নিয়ে এক্ষুনি চলে যাও।
তুমি মন থেকে বলছ এ কথা?
হ্যাঁ। মন থেকে বলছি।
তুমি খুব বড় একটি ভুল করছ তা জানো?
আমি কোনও ভুল করছি না।
আমাকে ভালবাসো না?
না।
ভেবে বলছ? বুঝে বলছ?
হ্যাঁ।
আমাদের সম্পর্ক তুমি আজ এখানে শেষ করে দিচ্ছ?
দিচ্ছি।
বেনোয়া উঠে দাঁড়ায়। ঘৃণা উপচে পড়ে তার দুচোখে।
নীলা পিঠের পেছনে দুটো বালিশ দিয়ে হাঁটু তুলে বসে।
তুমি আমার সঙ্গে এতদিন খেলেছ নীলা। আমাকে নিয়ে তুমি মজা করেছ। তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। তুমি এই করে বেড়াও। তুমি একটা লোভী, একটা স্বার্থপর, একটা ইতর, নীচ, নষ্ট, নিকৃষ্ট মেয়েমানুষ। তুমি পাসকালের কথা বলো, পাসকালের নখের যোগ্য হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। তুমি আগাগোড়া শূন্য, একটা ফাঁকা, ফাঁপা জিনিস। পৃথিবীতে অনেক মানুষ দেখেছি, এত জঘন্য কাউকে দেখিনি। তুমি আমাকে সর্বস্বান্ত করেছ। তুমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছ। আমাকে ধ্বংস করেছ। আমার সংসার ধ্বংস করেছ। আমি কী ভীষণ বোকা ছিলাম, তোমার মতো একটা বাজে মেয়েকে আমি ভালবাসতে গেছি ছি ছি। তুমি অধমেরও অধম। তোমার মুখের দিকে তাকাতে আমার ঘৃণা হচ্ছে। তুমি একটা কুৎসিৎ কুশ্রী মেয়ে। নিকৃষ্টেরও নিকৃষ্ট। তোমাকে ভালবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ। আমার নিজের ওপরই ঘেন্না হচ্ছে আমার। তুমি একটা খুনি, তুমি আমার বাচ্চাকে খুন করছ। তুমি একটা নিষ্পাপ শিশুকে খুন করছ। তোমার মতো এত বড় খুনি আমি সচক্ষে দেখিনি।
বেনোয়া থুতু ছোড় নীলার দিকে।
নীলা হাসে। বলে, আবারও বলছি আঙুলের কড়া গুনে হিসেব করো। এতে সুবিধে হবে। লম্বা লিস্টি তো।
বেনোয়া বলে যায়, মিমিজঁতে লাথি খেয়েছিলে না, বেশ করেছিল ওরা, এ দেশের সহজ সরল মানুষদের তোমার নিশ্বাসের বিষে মারতে চাচ্ছ, তোমার লাথি খাওয়াই উচিত। নিজেকে কী ভাবো? সবজান্তা কিছু একটা হয়ে গেছ। কিছু জানো না তুমি। কিচ্ছু না। তোমার কীসের এত অহংকার? অহংকারের কিছু নেই তোমার। আমার জ্যাকলিনও তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে। তোমার মাথায় থাক থাক পচা গোবর ছাড়া আর কিছু নেই। আমি তোমাকে করুণা করেছি, তা না হলে কে তোমার দিকে ফিরে তাকাত! কেউ না। নর্দমার কোনও কীটও না। তুমি ভাবো যে তুমি বিছানায় বেশ ভাল। হা। তাও তো জানো না। তুমি একটা মরা কাঠ, তুমি একটা হাস্যকর বস্তু নীলা, স্রেফ একটা হাস্যকর বস্তু। তুমি একটা সমকামী। বাজে চরিত্রের মেয়ে। তোমাকে নিয়ে কেউ সংসার করতে পারবে না, তোমার স্বামী তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তুমি যোগ্য নও কারও সঙ্গে বাস করার, তাই। সুনীল তোমাকে ধর্ষণ করেছিল? মিথ্যে কথা, তুমিই সুনীলের সঙ্গে শুয়েছ, আমাকে মিথ্যে বলেছ। আমার মতিভ্রম হয়েছিল, তাই তোমার আসল চেহারা দেখতে পারিনি। তোমার জগৎ হচ্ছে ওই তলপেটের নীচে তিন ইঞ্চি জায়গা। ও ছাড়া আর কিছু জানো না তুমি, একটা বেশ্যা তুমি, আমার আর কত বড় ক্ষতি তুমি করেছ জানি না। সম্ভবত এইডস ছড়িয়েছ আমার শরীরে। কে জানে। কত মানুষকে তোমার যৌনরোগ ছড়িয়েছ এ অব্দি, বলো। আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করার ফন্দি এঁটেছিলে। ভাগ্যিস তোমার মুখোশখানা আগেই খুলতে পেরেছি।
নীলা কোনও শব্দ উচ্চারণ করে না। বেনোয়া তার কাপড়চোপড় জুতো, ছবির ফ্রেম, উপহারসামগ্রী সুটকেসে ভরে নিল, এরামিস, কাপ অব টি। ব্রুট, নট কাপ অব টি। দুটোই।
দরজার দিকে যেতে নিলে নীলা বলে, বাড়ির চাবিটা রেখে যাও।