এ কোনও ব্যাপার হল, আমার কাছে আছে তো।
তা হলে তুমি যাও।
আমি একা যাব তুমি ভাবলে কী করে?
বেনোয়া বিষণ্ণ গলায় বলে, আমার যে দিন টাকা হবে সে দিন যাব।
সে তো আর একসঙ্গে যাওয়া হল না!
এ আমার স্বপ্ন, জানো নীলা, আমরা দুজন কোথাও দূর দেশে হারিয়ে যাব, কেবল দুজন আমরা, চেনা কেউ নেই আশেপাশে, আমরা দুজন দুজনে ডুবে থাকব দিন রাত, এর চেয়ে কাঙ্ক্ষিত কিছু নেই আমার জীবনে, কিন্তু স্বপ্ন অনেক সময় স্বপ্নই থাকে।
বেনোয়ার স্বপ্নালু চোখে তাকিয়ে নীলা বলে, আমাকে কি তুমি আপন ভাবো না? এ তোমার টাকা ও আমার টাকা, এমন করে ভাবো কেন? আমি তো ভাবতে পারি না। আমি তো হিসেব করি না এ ভাবে।
বেনোয়া ম্লান হেসে বলে, ঠিক আছে তুমি এত যখন চাচ্ছ যেতে, চলো।
পত্রিকায় ডগসিটারের বিজ্ঞাপন খুঁজে ওয়ান্ডাকে রু দালেসিয়ায় এক ডগসিটারের কাছে দিনে পঞ্চাশ ফ্রাঁ দরে রাখা হল। এই পুরো মাসটি প্যারিসে কুকুর বেড়াল সিটারের ব্যবসা রীতিমতো রমরমা হয়ে ওঠে।
নীলার হাতে কার্তে ব্লু। বাড়ির পাশে ম্যাগিক্লার্ন। বেনোয়ার দুপাটি হলুদ দাঁত বিকশিত হয় হাতে যখন প্যারিস রোম ফ্লোরেন্স ভেনিসের টিকিট পড়ে।
ইতালি ইতালি ব্লু ব্লু।
ও নীলা, তুমি আমাকে সত্যিই এত ভালবাসো। এ আমার সৌভাগ্য যে আমি তোমার ভালবাসা পেয়েছি।
ফরাসি চুমুর ধকল যায় নীলার ওপর।
.
বিমানবন্দর থেকে পুরনো রোমের পাঁচতারা হোটেল গালিওর স্যুট। কুজিনো ইতালিয়ানোতে খেয়ে, কলুসিয়ামে ঘুরে, রোমান সভ্যতা বা অসভ্যতার নিদর্শন দেখে, ফন্তানা দ্য ত্রেভির জলে পয়সা ছুড়ে, স্প্যানিশ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছোটবেলার সেই দাঁড়িয়ে থাকাটি এই সিঁড়ির কাছে কি না ভেবে, ভ্যাটিকেন সিটির গির্জায় মাথা নত করে বুকে ক্রশ করে বেনোয়া। সিসটিন চ্যাপেল থেকে বিমোহিত নীলাকে সরিয়ে নিয়ে শহরের আরও কিছু ভেঙে পড়া রোমান সভ্যতা দেখে চোখ জুড়িয়ে হোটেলে ফিরে শাতো মার্গোর স্বাদগন্ধসৌন্দর্য পান করতে করতে সদ্যস্নাত স্নিগ্ধ নীলাকে বলে, তোমাকে মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক অক্ষতযোনি সুন্দরী।
নীলা বলে, আমি এই মর্তলোকের এক ক্ষতযোনি অসুন্দরী।
বেনোয়া নীলাকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে, ও রূপসি মেয়ে, তুমি কি একটু পান করবে না এই স্বর্গীয় সুধা। তুমি যে কী হারাচ্ছ, সে যদি বুঝতে।
শাতো মার্গো হারালে আমার কিছু যায় আসে না, তোমাকে যেন না হারাই।
মদির নীল চোখের সুধা পান করতে করতে বলে নীলা।
বেনোয়া চুমু খায় নীলার ঠোঁটে চিবুকে, স্তনে, স্তনবৃন্তে। এক হাতে শাতো মার্গোর গেলাস, আরেক হাতে নীলা। অসম্ভব সুখী দেখায় বেনোয়াকে।
.
রোম থেকে ফ্লোরেন্সে গিয়ে নীলা বিষম উত্তেজিত। ডেভিডকে সাধ মিটিয়ে দেখবে সে, তার স্বপ্নের ডেভিড।
মিউজি উফিজি সেরে, মিকেলেঞ্জেলোর ডেভিডের চারপাশ ঘোরে নীলা, ঘণ্টা পার করে ডেভিডে।
এত কী দেখো! চলো বেরোই। বেনোয়া তাড়া দেয়।
একটা ব্যাপার লক্ষ করেছ, ডেভিড কিন্তু নিখুঁত নয়। ডান হাতটা দেখো, অতিরিক্ত বড়। নীলা ডেভিড থেকে চোখ না সরিয়ে বলে।
বেনোয়া বলে, এ থাকেই কারও কারও, আমার পুরুষাঙ্গও তো তুলনায় বড়। তুমি তো বলো, ওটির কারণে আমাকে নাকি সাংঘাতিক ভাল লাগে তোমার!
নীলা হেসে বলে, বলেছিলাম।
জাদুঘর থেকে বেরিয়ে বেনোয়া বলে, তুমি খামোকাই এখানে সারা দিনটাই নষ্ট করলে।
ভাড়া গাড়ির চালকের গদিতে বসে, বেনোয়া শব্দ করে শ্বাস ছাড়ে, তা মাদাম কোথায় যাবেন এখন?
তুমি চলো, যেখানে খুশি।
আমার খুশিমতো কিছু কি আর হয়? তুমি বলো।
তোমার খুশিমতো কিছু হয় না? তুমি কি জাদুঘরে যাওয়া পছন্দ করোনি।
আমার এ সব জাদুঘর টাদুঘর ভাল লাগে না। তুমি পছন্দ করো, তাই গিয়েছি।
তা হলে কোথায় যেতে চাও, চলো।
না সময় নেই।
সময় থাকলে কোথায় যেতে?
সে আর বলে লাভ কী? আচ্ছা নীলা তুমি গাড়ি চালাও না কেন?
আমি চালাতে জানি না।
তুমি না বলেছ, কলকাতায় তোমাদের গাড়ি আছে।
আছে, সে ড্রাইভার চালায়।
বেশ ধনী তোমরা, তাই না?
গরিব দেশ, যাদের গাড়ি আছে, প্রায় সবাই চালক রাখে। খুব একটা খরচ না।
তুমি বলেছিলে, কাজের লোকও আছে তোমাদের বাড়িতে। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক ধনী।
ওই একই উত্তর। কাজের লোক রাখতে খুব একটা পয়সা খরচ হয় না। ওখানে সবই সস্তায় পাওয়া যায়।
মানুষও সম্ভবত! আচ্ছা ওখানে ক্রীতদাসপ্রথা আছে, তাই না?
না।
গাড়িচালকের চাকরি দিয়েছ আমাকে। কোথায় যেতে হবে বলো, নিয়ে যাই। ম্যাপ আছে হাতের কাছে, দেখে খুঁজে বার করব ঠিকানা।
নীলা উত্তর দেয় না।
তুমি টাকা দিয়ে ভালবাসা কিনতে চাও নীলা। বেনোয়া উদ্দেশ্যহীন গাড়ি চালাতে চালাতে বলল।
কী জানি! হয়তো আমি তোমাকে জিগোলো ভাবছি!
অসভ্যের মতো কথা বলো না।
টাকা খরচা করছি তোমাকে ভালবেসে। তুমি কি ভয় পাচ্ছ ভেবে যে তোমার হয়তো কোনও বিনিময় দিতে হবে? ভয় পেও না, তোমার কিছু দিতে হবে না।
বেনোয়া চোয়াল শক্ত করে বলে, তুমি খুব স্বার্থপর। ইতালিতে বেড়াতে এসেছ, আমাকে এনেছ তোমার স্বার্থে। আমাকে তোমায় গাড়ির চালক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এনেছ। তুমি আমাকে ভালবাসো না নীলা, তুমি আমাকে ব্যবহার করছ। কেবল আমিই তোমাকে ভালবাসি, উন্মাদের মতো ভালবাসি।