উত্থিত শিশ্নের আগাগোড়া স্পর্শ করেও শরীরে তার বান ডাকে না। স্তনবৃন্ত প্রেমিকের আঙুলের, ঠোঁটের, জিভের স্পর্শেও চোখ মেলে না। বেনোয়া বলে, তোমার অসুখ সারুক, তারপর না হয়।
বেনোয়াকে অনিশ্চিত অপেক্ষার মধ্যে ফেলতে নীলার আশঙ্কা হয়, যদি নীলার শরীরই একমাত্র আকর্ষণ বেনোয়ার কাছে, তবে এ শরীর সে ভোগ করুক, করেও তাকে ভালবাসুক। নীলা তার শরীর মেলে দেয় বেনোয়ার তৃপ্তির জন্য। বেনোয়া সে শরীরে রোপণ করে জ্যাকলিনের স্বপ্নের বীজ। রোপন করার সময় অবশ্য দুবার বিছানায় লাফিয়ে উঠেছে ওয়ান্ডা, লেজ নাড়তে নাড়তে ন্যাংটো মনিবের চাষ দেখেছে।
লজ্জার মুখ লুকিয়ে নীলার বুকে বেনোয়া বলে, দুঃখিত, তাড়াতাড়ি এসে গেলাম!
না, ঠিক আছে।
তুমি রাগ করোনি?
কেন?
তুমি যে পাওনি!
একদিন না হয় না পেলাম। নীলা মধুর হেসে বলে।
নীলা শীর্ষসুখে পৌঁছয়নি বলে অপরাধী মুখ করে অনেক রাত অব্দি বসে রইল বেনোয়া আর বারবারই ব্যাখ্যা দিতে লাগল, খুব ধকল গেছে আপিসে, মোটে বিশ্রাম নেওয়া হয়নি, সে কারণেই সম্ভবত, অথবা অনেক দিন বাদে বলে।
বেনোয়ার শেষোক্ত ধারণাটি নীলাকে স্বস্তি দেয়, অন্তত সে ভাবতে পারছে, জ্যাকলিনকে ঘুম পাড়িয়ে পাসকালের সঙ্গে সে সঙ্গম সেরে আসেনি। কেবল স্বস্তি নয় চমকিত হয় দেখে যে, পুরুষ নিজের তৃপ্তির চেয়ে সঙ্গিনীর যৌনতৃপ্তির ব্যাপারে সচেতন। অন্তত ভারতবর্ষে এমন সচেতনতার খবর সে শোনেনি। নীলার প্রেমিকপ্রবর সেই সুশান্তর সঙ্গে প্রথম মিলন হওয়ার পর একবারও সে জিজ্ঞেস করেনি সারা শরীরে আমি যেমন অদ্ভুত এক আনন্দ পেয়েছি, তুমিও পেয়েছ তা। ভারতবর্ষের বেশির ভাগ মানুষ, নীলার বিশ্বাস, মনে করে ব্যাপারটি পুরুষের, পুরুষের তৃপ্তির পর যে জিনিসটি মিলবে মেয়েদের, সে হল সন্তান। মাতৃত্বই যেহেতু নারীর জীবন সার্থক করে, পুরুষের অনুকম্পায় নারী তার জীবন সার্থক করার সুযোগ পায়, এ নিয়ে নারী যেমন কৃতজ্ঞ থাকে পুরুষের প্রতি, পুরুষেরও গৌরব করার সুযোগ হয়।
জ্বরে তিনদিন ভোগার পর বেনোয়া তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার নীলাকে পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দেয়, সে ওষুধ কিনে বাড়ি পৌঁছে নীলা দেখে শিশির গায়ে গাছ পাতা আঁকা। অবাক হলে বেনোয়া বুঝিয়ে বলে, এ সব গাছগাছালির ওষুধ, আজকাল কেমিকেল কেউ খায় না, বোকা ছাড়া। কৃত্রিমভাবে ফলানো জিনিস খেয়ে লোকের অসুখ করছে। গাছগাছালির ডাক্তারের কাছেই এখন সচেতন মানুষের ভিড়। ঝিমঝিম করে নীলার মাথা, জ্বরের কারণে নয়, গাছগাছালির কারণে। এ সব ওষুধ সে খেতে দেখেছে কলকাতার অশিক্ষিত অজ্ঞান লোকদের, যারা প্রতারকের খপ্পরে হামেশা পড়ছে, হামেশা নিঃস্বান্ত হচ্ছে, রোগে শোকে নিঃশব্দে মরে যাচ্ছে। দেখেছে তাদের, যারা চোখে ঠুলি এঁটে, কুসংস্কারের কালো চাদরে ঢেকে রেখেছে আপাদমস্তক। প্রাচ্যদেশে যুক্তি আর বিজ্ঞানের পক্ষে দাঁড়ানো নীলা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দেখে পাশ্চাত্যের সভ্য শিক্ষিত উচ্চ সমাজের মুখ অন্ধকারের দিকে অযুক্তির দিকে ফেরানো। চোখে হেথা নয়, হোথা নয়, অন্য কোথার আকুলতা। গাছের শেকড় আর বাকল বেটে রস বানানো ওষুধের শিশি বেনোয়াকে লুকিয়ে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। পাশের বাড়ির ছাদের ওপর শিশি দুটো ভেঙে শত টুকরো হয়ে প্যারিসের শত ফোয়ারার মতো ছলকে ওঠে।
নীলার জ্বর এমনিতেই সাত দিন পর সেরে যায়।
.
জ্বর সারার পর নীলা নতুন উদ্যমে নতুন সংসারে মন ঢেলে দেয়। অর্ধেক দিন ধরে সপ্তব্যঞ্জন রেঁধে, স্নান করে সেজেগুজে বেনোয়ার অপেক্ষায় ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে চোখের মণি আর মন আটকে যায় যখন, বেনোয়া জানায়, পাসকাল আজ রাতে তাকে নেমন্তন্ন করেছে, আজ তার বাড়ি ফিরতে রাত হবে, নীলা যেন খেয়ে নেয়।
কিন্তু আমি যে এত কিছু রান্না করলাম তোমার জন্য।
আগে বলবে তো। কিন্তু পাসকালকে তো কথা দিয়ে ফেলেছি, যেতে হবে আমার।
নীলার মেনে নিতে হয়, যত হোক পাসকাল তার স্ত্রী। বেনোয়ার ওপর পাসকালের দাবি নীলার চেয়ে বেশি।
নীলা একা একা এ ঘর ও ঘর করে। কম্পিউটারের টেবিলটি বেনোয়া নিজের জন্য সাজিয়ে নিয়েছে, দু এক ফাইল কাগজপত্র, আর টেবিলের ওপর দুটো ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, একটি পাসকালের, আরেকটি জ্যাকলিনের। পাসকালের ছবিটি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নীলা। কোনও কোণ থেকে পাসকালকে তার অসুন্দরী ঠেকে না, ঘাড় অব্দি লাল চুল, পাতলা গোলাপি ঠোঁট, টিকোলো নাক, বসা গালের, সবুজাভ চোখের সুন্দরী পাসকালকে না ভালবাসার কোনও কারণ, নীলার মনে হয়, বেনোয়ার থাকতে পারে না।
সারাদিন চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করেছে ওয়ান্ডা। তার মনিব অনেক রাতে ফিরে ওয়ান্ডাকে কোলে তুলে ওরে সোনারে, ওরে পুতুলরে বলে আদর করে কুকুর ছোঁয়া গন্ধ হাতে নীলার গায়ে হাত বুলোতে থাকে।
নীলা ঘুমোয়নি, কিন্তু ভঙ্গি ঘুমেরই করে।
ঘুমিয়ে গেছ। তা হলে ঘুমোও, বিরক্ত করব না।
হঠাৎ শব্দ শুনে ঘুম ভেঙেছে ধরনে উঠে নীলা বলে, ও তুমি! এই মাত্র ফিরলে?
অনেকক্ষণ ফিরেছি। তুমি ঘুমিয়েছ বলে জাগাইনি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে হাই তোলে, অনেক দেরি করে ফিরলে, অপেক্ষা আর কতক্ষণ করা যায়…