ক্যাটস অ্যান্ড ডগস, মুষলধারে?
হ্যাঁ, মুষলধারে।
আপনাদের ওদিকে ইলেকট্রসিটি চলে গেছে না আছে?
মিসির আলি জবাব দিলেন না। টেলিফোনে একজন পুরুষ কথা বলছে। সে তার গলার স্বর বদলানোর চেষ্টা করছে। গলা ভূগরী করে কথা বলছে। এটা কোনো জরুরি কল না। লুইসেন্স কল। মানুষকে বিরক্ত করে আনন্দ পাওয়ার জন্য এ ধরনের টেলিফোন করা হয়। টেলিফোনের এক পর্যায়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা থাকে।
মিসির আলি সাহেব?
জি।
আমি আপনার খুবই পরিচিত একজন।
ভালো।
আপনি কি আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন?
বিরক্ত হচ্ছি। আপনি অকারণে কথা বলে যাচ্ছেন। মূল কথাটা বলুন।
মূল কথা অবশ্যই বলব। কথাটা ভয়াবহ বলে সামান্য সময় নিচ্ছি। আচ্ছা আপনি কি অপরিচিত মানুষের কথা বিশ্বাস করেন?
কী বলতে চাচ্ছেন বলুন। আমি টেলিফোন রেখে দেব।
আমি টেলিফোন করেছি আপনাকে সাবধান করার জন্য। আপনি একটা ভয়ঙ্কর বাড়িতে বাস করছেন।
ও আচ্ছা।
রেবু নামের একটা মেয়ের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে না? অল্পবয়সী মেয়ে তার মামার বাসায় থাকতে এসেছে। এই মেয়ে একটা ভয়ঙ্কর মেয়ে।
কোন অৰ্থে?
সৰ্বঅর্থে। মেয়েটা খুনি।
ও
আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না?
মিসির আলি বললেন, আপনার কথা কি শেষ হয়েছে?
প্রায় শেষ। মেয়েটা তার স্বামীকে আর তিন মাস বয়সী মেয়েকে খুন করেছে। পুলিশি মামলা হয়। অবশ্য মেয়েটা ছাড়া পায়। মেয়েটা তার মাকেও খুন করেছে। এখন যে বাড়িতে আছে সে বাড়ির কেউ না কেউ অবশ্যই খুন হবে। কিন্তু কেউ কিছু ধরতে পারবে না। আপনি এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেন। আপনাকে এই কারণেই জানালাম।
আচ্ছা।
মেয়েটি যে তার স্বামী-সন্তানকে খুন করেছে সেটি নিয়ে কাগজে নিউজ হয়েছিল তার কাটিং আমি পোষ্ট করে আপনার ঠিকানায় পাঠিয়েছি। দু-একদিনের মধ্যে পাবেন। স্যার, আমার কথা কি আপনার কাছে মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে?
মানুষের কথা আমি চট করে বিশ্বাস করি না। আবার অবিশ্বাসও করি না।
স্যার, আপনি কি আমাকে এখনো চিনতে পারেন নি?
চিনতে পেরেছি। তুমি মনসুর।
জি। কে খুন হবে বলব স্যার?
মিসির আলি রিসিভার নামিয়ে রাখলেন। ভিসিআর দর্শকদের মধ্যে রেবু বসে আছে। সে তাকিয়ে আছে মিসির আলির দিকে। মিসির আলির চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ ফিরিয়ে নিল। মেয়েটি তাকে চিনতে না পারার ভঙ্গি করছে। কিংবা এও হতে পারে খুব ভালো কোনো ছবি চলছে। মেয়েটা ছবি থেকে চোখ সরাতে পারছে। না। তার সমস্ত মনোযোগ টিভি পর্দায়। মানুষ একসঙ্গে দুজায়গায় মনোযোগ দিতে পারে না। মেয়েটিকে ভয়াবহ খুনি বলে মনে হচ্ছে না। সহজ-সরল মুখ। যে ভঙ্গিতে বসে আছে তার মধ্যেও আরামদায়ক আলস্য আছে।
মিসির আলি উঠে দাঁড়ালেন। আজমল সাহেব বললেন, চা খেয়ে যান। চা দিতে বলেছি। রাতের খানা কি হয়েছে?
জি হয়েছে।
নিজেই রেঁধেছেন?
জি।
আপনার জন্য একটা কাজের মেয়ে আনতে বলেছি। ময়মনসিংহের দিকে আমার কর্মচারীরা যায়। ওদের বলেছি। একজন আনতে। ময়মনসিংহের কাজের মেয়ে ভালো হয়।
তাই নাকি?
জি একেকটার জন্য একেক জায়গা। মাটিকাটা লেবারের জন্য ভালো ফরিদপুর। অফিসের পিয়ান-দারোয়ানের জন্য রংপুর। আর কাজের মেয়ের জন্য ময়মনসিংহ।
আমি এইভাবে কখনো বিবেচনা করি মা।
টেলিফোনে কোনো দুঃসংবাদ পেয়েছেন নাকি?
জি না।
যেভাবে আপনাকে চেয়েছিল, ভাবলাম দুঃসংবাদ।
মিসির আলি চা খেলেন। পান খেলেন। পানে প্রচুর জুর্দা ছিল বলে মাথা ঘুরতে লাগল। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ভাই সাহেব আজ যাই।
আজমল সাহেব বললেন, যাই-যাই করছেন কেন? ইলেকট্রসিটি আসুক তারপর যাবেন! বসেন ছবি দেখেন। নতুন ইউপিএস লাগিয়েছি। কারেন্ট চলে গেলে দুইতিন ঘণ্টা টিভি চলে, ফ্যান ঘোরে। সায়েন্স ধাই—ধাই করে কোথায় যে চলে যাচ্ছে! পয়সা খরচ করে ইউপিএস লাগিয়ে ভালো করেছি না?
জি, ভালো।
পয়সা থাকলে সবই করা যায়। আমার এক বন্ধু গাজীপুর জঙ্গলে বাড়ি বানিয়েছে। সেখানেও সে সোলার এনার্জির ব্যবস্থা করেছে। সূর্যের আলো থেকে সোলার প্যানেল দিয়ে ইলেকট্রসিটি।
তাই নাকি?
আপনাকে একদিন নিয়ে যাব, অবশ্য আপনাকে কোথাও যেতে দেখি না। যখনই দেখি-হাতে বই! এত পড়লে চোখের তো বারোটা বেজে যাবে। চোখের ক্ষতি যখন হয়েছে, আরেকটু হোক। আসুন ছবি দেখি।
মাঝখান থেকে দেখলে কি ভালো লাগবে?
হিন্দি ছবি যে কোনো জায়গা থেকে দেখা যায়। হিন্দি ছবির আগা-মাথা বলে কিছু নেই।
মিসির আলিকে ছবি দেখতে হল। মনে হচ্ছে ভ্ৰাতৃপ্ৰেম বিষয়ক কাহিনী। দুই ভাইয়ের একজন পুলিশ অফিসার, অন্যজন দুর্ধর্ষ খুনি। তবে খুনি হলেও সে সমাজসেবক। দুষ্ট লোকের যম। পুলিশ তাই ধরতে চেষ্টা করছে দুর্ধর্ষ ভাইকে। এদিকে আবার একই মেয়ে দুই ভাইকে ভালবাসে। কাউকে বেশি বা কাউকে কম না। দুজনকেই সমান সমান। দুজনকেই সে বিয়ে করতে চায়।
আজমল সাহেব বললেন, গল্পটা কোনো সমস্যাই না। দুই ভাইয়ের একজন মারা যাবে। যে বেঁচে থাকবে মেয়েটার বিয়ে হবে তার সঙ্গে। সবই ফর্মুলা।
মিসির আলি এখন আগ্রহ নিয়েই ছবি দেখছেন-ফর্মুলা ব্যাপারটা সত্যি কি না। জানতে চান। সবই ফর্মুলা এই বাক্যটি তাঁর পছন্দ হয়েছে। আসলে তো সবই ফর্মুলা। পৃথিবী ফর্মুলা মতো তার উপর ঘুরছে। ফর্মুলা মতোই আসছে শীত গ্ৰীষ্ম বর্ষা হেমন্ত। তরুণ-তরুণী বিয়ে করছে। ফর্মুলা মতো তাদের ঘরে সন্তান আসছে। সবই ফর্মুলা।