মিসির আলি বললেন, আপনার ছেলে বক্কা এই দা নিয়ে আমাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিল। সে বলেছে—দা খারাপ জিনিস। তার কথা থেকে বুঝেছি।
মল্লিক বললেন, হারামজাদাটা আমাকে ধরায়ে দিয়েছে। দুই হারামজাদা ভাব ধরে থাকে যে এরা কিছুই বুঝে না। তলে তলে বিরাট বুদ্ধি।
মিসির আলি সিগারেট ধরালেন। তৃপ্তির সঙ্গে দুটা টান দিয়ে বললেন, আপনার সম্পর্কে আপনার দুই পুত্ৰবধু যা বলে তা ঠিক না। আপনি এই কাজ কখনো করেন নি। করলে এদের কুত্তি ডাকতেন না। আপনার রুচি নিম্নমুখী কাজের মেয়ে বা আপনার হাসপাতালের নার্সে সীমাবদ্ধ।
মল্লিক সাহেব বললেন, নার্স হারামজাদিও মুখ খুলেছে। আফসোস। বিরাট আফসোস। আপনি এত কিছু বের করে ফেলেছেন। এখন বলেন, আমার স্ত্রী সুরমাকে কে মেরেছে? আমি?
মিসির আলি বললেন, আপনি না। আপনার স্ত্রী নিজেই কুয়াতে ঝাপ দিয়েছেন। আমার ধারণা, আপনার পুত্রবধূরা আপনার বিষয়ে তাঁর কানে কথা তুলেছে। তিনি এই দুঃখ নিতে পারেন নি।
মল্লিক আনন্দিত গলায় বললেন, আপনার বিরাট বুদ্ধি। কিন্তু আপনিও শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়েছেন। আমার স্ত্রীকে আমিই মেরেছি। সে স্বেচ্ছায় কুয়াতে ঝাপ দেয় নাই। কেন মেরেছি, সেটা একটা ইতিহাস। আপনাকে বলার প্রয়োজন নাই। খানা কি দিতে বলব? খানা খাবেন?
মিসির আলি হাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। মল্লিক সাহেব বললেন, আপনাকে দেখে কখনো বুঝি নাই। একজন চিকন-চাকান মানুষের পেটে এত বুদ্ধি। জানলে কোনোদিন বাড়ি ভাড়া দিতাম না। লাত্থি দিয়ে বের করতাম।
মল্লিক কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে শান্ত গলায় বললেন, ছোটকুত্তি, আমাদের খানা দাও। পুলিশ আজ রাতেই আমাকে থানায় নিয়ে যাবে। বাড়ির চারদিকে পুলিশ। খালি পেটে থানায় যাওয়া ঠিক না।
বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। চম্পা খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। আজ তার সারা শরীর বোরকায় ঢাকা না। অতি রূপবতী এই মেয়েকে দেখে মিসির আলি মুগ্ধ হলেন। তার কাছে মনে হলো, হেলেন অব ট্রয়, ক্লিওপেট্রা কিংবা কুইন অব সেবা কখনোই দুইবোন চম্পা-পারুলের চেয়ে রূপবতী না। বাঙালি প্রাচীন কবির মতো মিসির আলি মনে মনে আওড়ালেন–
‘কে বলে শারদ শশি সে মুখের তুলা
পদনখে পড়ে আছে তার কতগুলা।”