মিসির আলি : জি ক্লিয়ার।
ইন্সপেক্টর রকিব এবং মিসির আলির কথোপকথন
মিসির আলি : আপনারা কি মল্লিক সাহেবের কেইসটা কোজ করে দিয়েছেন?
রকিব : জি-না। কেইস চালু আছে। গোপনে গোপনে তদন্ত চলছে। মাঝে মাঝে আমরা এ রকম করি। ভাব দেখাই যে মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। তখন সাসপেক্টরা গা ছেড়ে দেয়। এতে আমাদের সুবিধা হয়।
মিসির আলি : আপনি বলছেন তদন্ত চলছে–তাহলে মল্লিক সাহেব এখন কোথায় বলতে পারবেন?
রকিব : বলতে পারব। তিনি আগামসি লেনের এক বাড়িতে আছেন। মাঝে মাঝে এই বাড়িতে থাকেন।
মিসির আলি : আমি যে ঘরে বন্দি ছিলাম, ওই ঘরে একটা লাল টেলিফোন আছে। টেলিফোনের নম্বরটা কি আমাকে জোগাড় করে দিতে পারবেন?
রকিব : স্যার, আপনার সঙ্গে যদি কাগজ-কলম থাকে তাহলে নম্বরটা লিখুন।
মিসির আলি : এই নম্বর তাহলে আপনারা জানেন?
রকিব : কেন জানিব না? বিস্ময়কর একটা ঘটনা ঘটেছে। একই মানুষএকজন জীবিত আরেকজন মৃত। আর আমরা ঠিকমতো তদন্ত করব না, তা কি হয়? আপনি দু’জনের DNA টেস্টের কথা বিশেষভাবে বলেছিলেন। আপনি শুনে খুশি হবেন যে, DNA টেস্ট হয়েছে। রেজাল্ট আমাদের কাছে আছে।
মিসির আলি : আমাকে কি DNA টেষ্টের রিপোর্টটা দেখানো যায় না?
রকিব (হাসতে হাসতে) আপনি বিখ্যাত মিসির আলি। আপনাকে কেন দেখাব না! ফটোকপি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
মিসির আলি : আরেকটা ছোট্ট সাহায্য চাচ্ছি। আমি মল্লিক সাহেবের যে ঘরে বন্দি ছিলাম, সেখানে আরেক রাত থাকতে চাই।
রকিব : কেন?
মিসির আলি : আছে একটা বিষয়। তবে আমি ভয় পাচ্ছি, ওরা না আবার আমাকে আটকে ফেলে।
রকিব : আপনি কবে থাকতে চান বলবেন। সব ব্যবস্থা হবে। বাড়ির চারদিকে পুলিশ থাকবে। স্যার, এখন লাল টেলিফোনের নম্বরটা লিখুন।
মিসির আলি : নম্বর নিয়েই টেলিফোন করলেন। চারবার রিং হওয়ার পর তরুণীর গলা শোনা গেল, হ্যালো কে বলছেন?
মিসির আলি বললেন, চম্পা, আমি তোমার চাচাজি। মিসির আলি। তুমি ভালো আছ?
তরুণী জবাব দিল না। তবে সে টেলিফোন নামিয়েও রাখল না।
মিসির আলি বললেন, আগামী কাল রাতে আমি তোমাদের ওই ঘরে থাকব। ব্যবস্থা করতে পারবে?
তরুণী জবাব দিল না।
মিসির আলি বললেন, চম্পা, তুমি যে টেলিফোন কানে ধরে আছ তা আমি জানি। আগামীকাল রাত আটটার দিকে আমি চলে আসব। রাতে কি খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবে?
তরুণী এইবার কথা বলল। প্রায় ফিসফিস করে বলল, কেন আসতে চাচ্ছেন?
মিসির আলি বললেন, স্মৃতি রোমন্থনের জন্যে। মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি হাতড়াতে হয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো।
শারদ শশি
রাত আটটা। সারা দিন ঝলমলে রোদ ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মিসির আলি ছাতা মাথায় মল্লিক সাহেবের বাড়িতে এসে উঠেছেন। দেখে মনে হচ্ছে মল্লিক সাহেবের বাড়ি শশানপুরী। কেউ বাস করে না। বিড়ালের মিউ মিউ শব্দ ছাড়া কোনো শব্দ নেই। মিসির আলি দোতলায় ওঠার সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে বললেন, বাড়িতে কেউ আছেন?
কেউ জবাব দিল না। দারোয়ান আক্কাস মিয়াকে এক ঝলক দেখা গেল। সে দ্রুত ঘরে ঢুকে গেল। মিসির আলি দোতলায় উঠে গেলেন। যে ঘরে বন্দি ছিলেন, সেই ঘর খুঁজে বের করতে তার বেগ পেতে হলো না। মূল দরজা পুলিশ ভেঙেছে। দরজা ঠিক করা হয় নি। মিসির আলি ঘরে ঢুকে দেখেন ঘরের ভেতর কাঠের চেয়ারে মল্লিক সাহেব বসে আছেন। তার হাতে সিগারেটের প্যাকেট। মিসির আলি অবাক হলেন না। মল্লিক সাহেব এখানে থাকবেন, মিসির আলি তা ধরেই নিয়েছিলেন।
মল্লিক মিসির আলির দিকে না তাকিয়ে বললেন, ছোটকুত্তির কাছে শুনলাম রাতে আপনি খানা খেতে চেয়েছেন। সে আপনার জন্যে খানা পাকিয়েছে। মোরগপোলাও আর খাসির বটি কাবাব। তবে আমার উপদেশ, ছোটকুত্তির রান্না খাবার খাবেন না। খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে।
মিসির আলিকে দেখে মনে হচ্ছে না। তিনি মল্লিক সাহেবের কথা শুনছেন। তিন খাটে বসলেন। পরিচিত খাট। পরিচিত বিছানা। বালিশ-চাদর কিছুই বদলানো হয় নি। তিনি বালিশ নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকলেন।
মল্লিক বললেন, আপনার ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হয় কিছু বলতে চান। বলতে চাইলে বলেন। বালিশ শুকাগুকির প্রয়োজন নাই। বালিশের মধ্যে হিসটরি’ লেখা নাই।
মিসির আলি বললেন, আপনার দুই ছেলে যে দু’জন বাবা দেখত সেই রহস্য ভেদ করেছি। তারা আসলেই ছোটবেলা থেকে দু’জন বাবা দেখত।
মল্লিক সাহেব বললেন, আপনাকে অনেকবার বলেছি-আমার কোনো যমজ ভাই নাই।
মিসির আলি বললেন, যমজ ভাই না, সে আপনার সৎ ভাই। আপনার বাবা তারও বাবা। DNA টেস্টে তা-ই পাওয়া গেছে। আপনার এই সৎভাইয়ের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। মনে হয় তার জন্ম কাজের মেয়ের গর্ভে। তবে আপনার বাবা তাকে পুরোপুরি বঞ্চিত করেন নি। আগামসি লেনে তাকে একটা বাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। আপনার এই ভাই সত্যিকার অর্থেই ভালো মানুষ ছিল। সে আপনার দুই ছেলেকে অসম্ভব পছন্দ করত। এই ছেলে দু’টির টানেই সে মাঝে মাঝে গোপনে আপনার বাড়িতে আসত। সে লুকিয়ে থাকত এই ঘরে। আপনি তাকে খুন করেছেন।
মল্লিক বললেন, এত কিছু বলেছেন, কীভাবে খুন করেছি সেটাও বলেন। গলা টিপে মেরেছি?
মিসির আলি বললেন, ডাব কাটা হয় এমন দা-এর পেছন দিয়ে তার মাথায় বাড়ি দিয়েছেন।
মল্লিক অবাক হয়ে বললেন, এটা কীভাবে বললেন?