মিসির আলি বললেন, পাগলের সাক্ষ্য কোর্ট গ্রাহ্য করে না।
এই তো এখন পথে আসছেন। বড় পুত্ৰ ছক্কার ছেলে মারা গেল। কিসমত নাম। তার মধ্যে কোনো বিকার নাই। এক ফোঁটা চোখের পানি নাই। আরেকজনের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরছে।
মিসির আলি বললেন, কিসমত কার ছেলে এই নিয়ে মনে হয় বিতর্ক আছে।
মল্লিক বললেন, কোনো বিতর্ক নাই রে ভাই। বিতর্ক দুই বদ পুলার দুই বদ স্ত্রী তৈরি করেছে। কুৎসিত নোংরা কথা চালু করেছে। এইজন্যে এদের একজনরে আমি ডাকি বড়কুত্তি, আরেকজনরে ডাকি ছোটকুত্তি। আরে কুত্তি, তোদের শ্বশুর নাকি তোদের তার সাথে সেক্স করতে বলে। এ রকম ঘটনা ঘটলে তোরা কেন সোনামুখ করে তার কাছে যাবি? কেন পাবলিকরে বলবি না? পুলিশের কাছে যাবি না? মিসির আলি সাহেব, বলেন, আমার কথায় কি যুক্তি আছে?
মিসির আলি বললেন, যুক্তি আছে।
মল্লিক বললেন, বড়কুত্তিটা আবার বলে তার কোনো সন্তানাদি নাই। আরে কুত্তি, সিজারিয়ান করে তোর পেটের সন্তান বের করা হয়েছে। পেটে সিজারিয়ানের দাগ আছে।
মিসির আলি বললেন, সে তাহলে মিথ্যাটা কেন বলছে?
মল্লিক সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমি জানি না। আমি যেমন জানি না, যারা এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে তারাও জানে না। আমি ঘটনা জানার অনেক চেষ্টা নিয়েছি ভাইসাহেব। বড়কুত্তিটাকে তিন দিন খাওয়া পানি ছাড়া আটকায়ে রেখেছিলাম। ঘটনা কী বল। বললে ছাড়া পাবি।
ঘটনা বলেছে?
না, বলে নাই। তবে এই বিষয়ে আমার অনুমান একটা আছে! অনুমান সত্য কি না জানি না।
কী অনুমান শুনি?
দুই মেয়ে এই ধরনের কথা বলেছে যাতে আমার দুই পুত্র আমার উপর রাগ করে। আমাকে খুন করে। সমস্যা কি জানেন? আমার দুই পুত্রের রাগ করার ক্ষমতা নাই। একবার কী হলো ঘটনা শুনেন। বাড়ির একটা বিড়াল মটরগাড়ির চাকার নিচে পড়ে মারা গেল। আমার দুই পুত্ৰ দানাপানি বন্ধ করে দিল। দুইজনে দুইজনের গলা জড়ায়ে ধরে কাদে। আমি বললাম, বিড়াল তোদের বাপ না মা? বিড়াল মরে গেছে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস? কানে ধরে পঞ্চাশবার উঠবোস কর, তারপর খেতে বস। তারা দু’জনেই বলল, জি আচ্ছা। পঞ্চাশবার কানে ধরে উঠবোস করল, তারপর মল্লিক বিরানি হাউস থেকে দুই প্লেট বিরানি খেয়ে ঘুমাতে গেল, যেন কিছুই হয় নাই। আমি যে কথাগুলি বললাম, সেগুলি কি বিশ্বাস হচ্ছে?
হচ্ছে।
এখন আপনাকে আসল কথা বলি। এতক্ষণ যা বললাম। সবই ফালতু কথা। আসল কথা হচ্ছে, আমি বাবা-মা’র এক সন্তান। আমার কোনো যমজ ভাই নাই। আপনি এবং পুলিশ হাজার চেষ্টা করেও কোনো যমজ ভাইয়ের সন্ধান পাবেন না।
মিসির আলি বললেন, কুয়াতে যে ডেডবডি পাওয়া গেল সেটা তাহলে কার?
মল্লিক সাহেব হাই তুলতে তুলতে বললেন, খুঁজে বের করেন কার। সিআইডি মিআইডি কী কী যেন আছে, সবে মিলে খুঁজুক। বার করুক ডেডবডি কার। ইন্সপেক্টর রকিব সাহেব যদি প্রমাণ করতে পারেন ডেডবডি আমার যমজ ভাইয়ের, তাহলে আমি উনার পিশাব গ্রাসে ভর্তি করে চুমুক দিয়ে খাব। এক হাজার বার কানে ধরে উঠবোস করব। এখন ভাই আমি বিদায় নিব। আপনাকে একটা শেষ কথা বলি। আমার উপর কোনো রাগ রাখবেন না। আমি আপনাকে আটকাই নাই। বড়কুত্তি আটকায়েছে। সে ভালো সাজার জন্যে পরদিনই পুলিশকে টেলিফোন করেছে। এমনভাবে করেছে যে, পুলিশ তার কথা পাগলের প্রলাপ ভেবেছে। আমি যখন টের পেলাম ঘরে কেউ আটক আছে তখন থানা থেকে পুলিশ নিয়ে এলাম। রকিব সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেই আমার কথার সত্যতা পাবেন। ভাইসাহেব, ইজাজত দেন। বিদায় নেই। আসসালামু আলায়কুম।
ব্যক্তিগত কথামালায় মিসির আলির সর্বশেষ লেখা
বিষয় : মল্লিক সাহেব
পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান করেও মল্লিক সাহেবের কোনো যমজ ভাই আছে তা প্ৰমাণ করতে পারে নি। আমি অনেক চেষ্টা করেও পুলিশকে DNA পরীক্ষায় রাজি করাতে পারি নি। মৃত মানুষ এবং মল্লিক সাহেবের DNA পরীক্ষার ফলাফল তদন্তে সাহায্য করত।
আমার কাছে মনে হচ্ছে, পুলিশ তদন্তের বিষয়েও আগ্রহী না। ছক্কা-বক্কাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। তারা আগের মতোই আছে। দুই ভাই বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরছে। একসঙ্গে স্নান করছে। সময় পেলেই কানে ধরে উঠবোস করে খাতায় হিসাব জমা করছে। মন্ত্রিক সাহেব নিয়ম করে হোমিও ক্লিনিকে বসছেন। রোগী দেখছেন। সব আগের মতো চলছে।
মল্লিক পরিবারের রহস্য সমাধানের চেষ্টা আমি করেছি। সমাধান করতে পারি নি। মন্ত্রিক সাহেব সহায়তা করলে হয়তো কিছু হতো। তিনি সহযোগিতার ধারে কাছেও নাই। তিনি আমার কাছে যে একেবারেই আসেন না, তা না। মাঝে মধ্যেই আসেন, নানান বিষয়ে কথা বলেন, একটি বিষয় ছাড়া। অবিকল তাঁর মতো দেখতে যে মানুষটির মৃতদেহ কুয়া থেকে তোলা হলো সে কে? তার সঙ্গে মল্লিক, সাহেবের সম্পর্ক কী?
মাল্টিপল পার্সোনালিটি মনোবিজ্ঞানের স্বীকৃত বিষয়। একজন ভালো মানুষ এবং একজন মন্দ মানুষ একজনের মধ্যে বিকশিত হতে পারে। ভালো মানুষ মল্লিক এবং মন্দ মানুষ মল্লিক-একই ব্যক্তি। এটি মনোবিজ্ঞানে গ্রাহ্য। কিন্তু দু’জন আলাদা দুই মানুষ, যাদের একজনকে খুন করা যায়, তা কী করে হয়?
আমি চেষ্টা করেছি চম্পা ও পারুলের সঙ্গে কথা বলতে। তারা রাজি হয় নি।
এই দুই মেয়ে মল্লিককে খুন করেছে বলে যে দাবি করছে তা মিথ্যা। অ্যান্টাসি নামে কোনো ইঁদুর মারা বিষ নেই। অ্যান্টাসি নামটাও হঠাৎ করে তাদের মাথায় এসেছে। অ্যান্টাসিড থেকে ‘ড’ বাদ দিয়ে অ্যান্টাসি। মন্ত্রিক সাহেবের বাড়িতে গোটাচারেক বিড়াল আছে। যে বাড়িতে বিড়াল থাকে সে বাড়িতে ইঁদুর থাকে না।