ওসমান গনি প্রসঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
বলুন।
আমার কথা। আপনি কতটুক গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবেন, সেটা ভেবেই কথা বলতে সংকোচ বোধ করছি।
সংকোচ বোধ করবেন না, বলুন। আপনার কথা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আপনি কে আমি জানি। আপনার কর্মপদ্ধতি সম্পর্কেও জানি। আমার জানামতে পুলিশের কিছু জটিল মামলায় আপনি সাহায্য করেছেন। আমার আগে যিনি হোম মিনিস্টার ছিলেন তিনি আপনার প্রসঙ্গে একটা নোটও রেখে গেছেন। ওলিয়ুর রহমান সাহেব-চেনেন তাঁকে?
জ্বি, চিনি।
কীভাবে চেনেন?
একটা খুনের মামলার ব্যাপারে উনি আমার সাহায্য চেয়েছিলেন। আমি সাহায্য করেছিলাম।
এখন আপনার বক্তব্য বলুন–
ওসমান গনির মৃত্যুরহস্য সমাধানে আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই।
বাক্যটা আবার বলুন। ভালোমতো শুনি নি।
মিসির আলি বাক্যটি দ্বিতীয় বার বললেন। হোম মিনিস্টার খাওয়া বন্ধ রেখে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন। যখন কথা বললেন তখন তাঁর গলার স্বরে বিরক্তি চাপা রইল–
ওসমান গনির মৃত্যুতে কোনো রহস্য নেই। কাজেই আপনি কী ধরনের সমাধানের কথা বলছেন বুঝতে পারছি না। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু। ডাক্তারদের তাই ধারণা। ডাক্তারদের ডেথ সার্টিফিকেটে এ-কথা পরিষ্কার লেখা আছে।
আমার ধারণা এটা হত্যাকাণ্ড।
একটা হাস্যকর ধারণা করার তো কোনো অর্থ হয় না।
আপনার মনে হচ্ছে ধারণাটা হাস্যকর?
অবশ্যই মনে হচ্ছে। শুধু আমার না, অনেকেরই মনে হবে। যাদের কল্পনাশক্তি অত্যন্ত উর্বর তাদের কথা অবশ্যি ভিন্ন। আপনি যদি বলতেন এটা আত্মহত্যা, তাও গ্রহণযোগ্য মনে করতাম। কিন্তু আপনি ভুলে গেছেন যে বাথরুম ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। দরজা ভেঙে তাঁকে বের করা হয়।
আমার মনে আছে।
তার পরেও আপনি বলছেন হত্যাকাণ্ড?
জ্বি, বলছি।
হোম মিনিস্টার হাসতে-হাসতে বললেন, হত্যাকারী কে তাও কি জেনে গেছেন?
অনুমান করছি।
অনুমানও করে ফেলেছেন। আপনি দেখছি খুবই ওস্তাদ লোক।
স্যার, আপনি শুরুতে বলেছিলেন, আপনি আমার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। এখন কিন্তু তা করছেন না। আমার মনে হয় আপনার উচিত আমার কথা এককথায় উড়িয়ে না-দেওয়া। আমার অনুমানক্ষমতা ভালো। অতীতে অনেক বার তার প্রমাণ দিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেব।
আপনি যেভাবে কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান সব আপনি চোখের সামনে দেখতে পান!
মিসির আলি কিছুনা-বলে খাওয়া শেষে করে উঠলেন। বাথরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসে বললেন, আমি তাহলে যাই?
বসুন, খানিকক্ষণ বসুন। পান আছে, পান খান।
আমার পান খাওয়ার অভ্যাস নেই।
পান এমন কিছু জটিল খাদ্য না যে তা খাবার জন্যে অভ্যাস করতে হয়। মুখে দিয়ে চিবোলেই পান খাওয়া হয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। দীর্ঘ সময় চিবানো হয় বলে প্রচুর জারক রস বের হয়ে হজমে সহায়তা করে। বসুন। নিজের হাতে পান বানিয়ে দেব। খেয়ে দেখুন।
হোম মিনিষ্টারের হাতে-বানানো পান চিবুতে-চিবুতে মিসির আলির মনে হল এখানে আসা ঠিক হয় নি। দিনটাই নষ্ট হয়েছে।
মিসির আলি সাহেব।
জ্বি?
আপনার অনুমানশক্তি তো প্রবল। এখন বলুন দেখি আমার সম্পর্কে আপনার কী অনুমান? সংক্ষেপে বলুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে উঠতে হবে। নিন, সিগারেট টানতে-টানতে বলুন। আপনার সিগারেটের অভ্যাস আছে তো?
আছে।
মিনিস্টার সাহেব নিজেই লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরিয়ে দিলেন। মিসির আলি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললেন, স্যার, আপনি ভান করতে পছন্দ করেন। শুধু পছন্দ না, ভান করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন, আপনি অতি সাধারণ খাবারের ব্যবস্থা দুপুরে করেন। এবং একজনকে সঙ্গে নিয়ে খান, যাতে সে প্রচার করতে পারে মিনিস্টার সাহেব কী রকম ভালোমানুষ এবং কত সাধারণ খাবার খায়। অর্থের অভাবে আপনি ভালো খাবার খেতে পারছেন না। অথচ বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেট ক্রমাগত টানছেন। আপনি খদ্দরের পাঞ্জাবি পরেছেন। কিন্তু যে-ঘড়িটি আপনার হাতে আছে তার নাম রোলেক্স। আমি যতদূর জানি, পৃথিবীর দামী ঘড়ির মধ্যে এটি একটি। প্রায় লাখখানেক টাকা দাম। যিনি খদ্দরের পাঞ্জাবি পরবেন, তিনি হাতে দেবেন দুশ তিন শ টাকা দামের ঘড়ি। এটাই স্বাভাবিক। তবে এই ঘড়ি আপনি নিজের টাকায় কেনেন নি। উপহার হিসেবে পেয়েছেন। এই একটা ব্যাপার অবশ্যি আছে। উপহার হিসেবে পেয়েছেন এটা কী করে অনুমান করেছি, ব্যাখ্যা করব?
মিনিস্টার সাহেব আরেকটি সিগারেট ধরাতে-ধরাতে বললেন, তার প্রয়োজন নেই। আপনার অনুমানশক্তি ভালো, স্বীকার করছি।
তাহলে কি আমি ধরে নিতে পারি আপনি আমাকে ওসমান গনি হত্যারহস্য নিয়ে কাজ করবার অনুমতি দেবেন?
আপনার অতিরিক্ত আগ্রহের কারণ কী?
আমার আগ্রহের কারণ হচ্ছে-আমি এই রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। কিংবা বলা যায় আমাকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সেই অংশ আপনার অজানা নয়। ওসমান গনি সাহেবকে আমি একটি চিরকুট লিখি। তিনি ঐ চিরকুট পাওয়ার পর আপনাকে টেলিফোন করেন।
হোম মিনিষ্টির শুকনো গলায় বললেন, ঠিক আছে-আপনি রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা করুন। কেস সিআইডি-র হাতে দিয়ে দিচ্ছি। ওদের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনি কাজ করবেন। পুলিশ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারে, সেই হিসেবেই সাহায্য চাওয়া হবে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মিসির আলি উঠে দাঁড়ালেন। হোম মিনিস্টার তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন বিরক্ত চোখে। মিসির আলি সেই বিরক্তি অগ্রাহ্য করে হাসিমুখে বললেন, স্যার, যাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
নাদিয়া অবাক হয়ে বললেন
নাদিয়া অবাক হয়ে বললেন, মিসির আলি সাহেব, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না। আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চালাতে? পুলিশ আপনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে?জ্বি, হোম ডিপার্টমেন্টের চিঠি আছে। আপনি কি পড়তে চান?