বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

মিসির আলির অমীমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

Misir Alir Amimangsito Rahasya By Humayun Ahmed

সত্যি জানতে চান?

হ্যাঁ, জানতে চাই।

আপনার ভয়াবহ ধরনের ইনসমনিয়া আছে। রাতের পর রাত আপনি জেগে। থাকেন। এই সময় আপনি নিঃসঙ্গ বোধ করেন এবং আমার ধারণা খানিকটা ভয়ও পান। রাতে কেউ টেলিফোন করলে আপনার এ-কারণেই ভালো লাগে। কারো সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো লাগে। আপনার শুচিবাইর মতো আছে। রাতে কয়েকবার আপনি গোসল করেন। কিছুক্ষণ আগে গোসল সেরেছেন। এখনো চুল শুকায় নি। আপনার বাবার মৃত্যুর পর আপনি আরো নিঃসঙ্গ হয়েছেন। কারণ তাঁরও ইনসমনিয়া ছিল। তিনিও রাত জগতেন। দু জন সঙ্গ দিতেন দু জনকে।

কী করে বুঝলেন, বাবার ইনসমনিয়া ছিল?

পত্রিকার রির্পোট অনুযায়ী। বেহালা বাজানো শোনার পর আপনি বাবার জন্যে কফি আনতে গেলেন। অর্থাৎ আপনারা আরো রাত জািগবেন! নয়তো পাট– ভর্তি করে। কফি আনতেন না। আপনার বাবারও গভীর রাতে স্নানের অভ্যাস ছিল। কারণ আপনি কফি নিয়ে এসে দেখেন-বাথরুমের দরজা বন্ধ। শাওয়ার দিয়ে পানি পড়ছে। আপনি ধরে নেন। আপনার বাবার বেরুতে দেরি হবে। কাজেই কফির পট নিয়ে ফিরে যান, এবং আবারো নতুন করে কফি বানান। বাবার গভীর রাতে স্নান আপনার কাছে মুগ্ধ স্বাভাবিক মনে হয় নি। কারণ আপনার বাবার এই অভ্যাসের সঙ্গে আপনি পরিচিত।

নাদিয়া আরেকটি সিগারেট ধরালেন। মিসির আলি বললেন, আপনি কি আমাকে বিশেষ কিছু বলতে চান? বলতে চাইলে বলতে পারেন।

কী জানতে চান?

আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনব। তবে সবার আগে জানতে চাই–আপনার কি ধারণা, আপনার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে?

ডাক্তাররা তাই বলছেন।

আপনার কী ধারণা?

নাদিয়া আধা-খাওয়া সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, আমার ধারণা বাবা আত্মহত্যা করেছেন। কেন করেছেন তা-ও আমি জানি। আমার মা আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর মৃতদেহও বাথরুমের বাথটাবে পাওয়া যায়। মা বিখ্যাত কেউ ছিলেন। না। তাঁর মৃত্যুসংবাদ পত্রিকায় আসে নি।

তিনি কত বছর আগে মারা যান?

জুন মাসের ২১ তারিখে ন বছর আগে।

আপনার বাবার ইনসমনিয়া কি আপনার মার মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয়েছে?

না, আগেও ছিল। তবে মার মৃত্যুর পর বেড়েছে।

আপনি কি চান আমি আপনার বাবার মৃত্যুসংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি?

আমি চাই না। কী ঘটছে আমি জানি। আমি খুব ভালো করে জানি। আমার বুদ্ধি অন্যের চেয়ে কম বা আপনার চেয়ে কম, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।

আমি তা মনে করছি না।

নাদিয়া হাতঘড়িতে সময় দেখলেন। হাই তুলতে-তুলতে বললেন, চারটা কুড়ি বাজে। এই সময় আমি ঘুমুতে যাই। গাড়ি তৈরি আছে, আপনাকে পৌঁছে দেবে। আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার ভালো লেগেছে। তবে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। কোনোদিনই না। দয়া করে আর কখনো আসবেন না এবং কখনো আমাকে বিরক্ত করবেন না।

মিসির আলি উঠতে-উঠতে বললেন, আপনার এমন কোনো আত্মীয়স্বজন কি আছে, যার তিনটা দাঁত সোনা দিয়ে বাঁধানো?

নাদিয়া গলার স্বর একটু তীক্ষ্ণ করে বললেন, সোনা দিয়ে দাঁত বাঁধানো কেউ কি এসে আপনাকে বলেছিল—আমি ওসমান গান?

জ্বি।

সোনা দিয়ে দাঁত বাঁধানো এমন কাউকে আমি চিনি না। আমার ধারণা, বাবা কাউকে পাঠিয়েছিলেন। বাবার মধ্যে একধরনের অভিনয় প্রবণতা ছিল। আমি যখন খুব ছোট, তখন একবার তিনি রাক্ষস সেজে আমাদের ভয় দেখিয়ে- ছিলেন। এই রকম কিছু হবে। সব মানুষের মধ্যেই কিছু পরিমাণ ইনসেনিটি থাকে।

আচ্ছা, আমি তাহলে উঠি।

পুলিশের লোক কি এখনো আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে?

থাকে।

আর যেন না থাকে। আমি সেই ব্যবস্থা করব। আসুন, আপনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।

গাড়িতে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তে মিসির আলি বললেন, শেষবার বেহালায় আপনার বাবা কী বাজিয়েছিলেন—অর্থাৎ কোন রাগ?

উনি একটা ঘুমপাড়ানি গানের সুর বাজিয়েছিলেন–ওঁর নিজের খুব প্রিয় সুর, আমারো প্রিয়-একটি চেক লোকগীতির সুরে লালাবাই। লাইনগুলি হচ্ছে–

Precious baby, Sueetly sleep
Sleep in peace
Sleep in comfort, slumber deep.
I will rock you, rock you, rock you.
I will rock you, rock you, rock you.

বলতে-বলতে নাদিয়ার চোখ ভিজে উঠল। মিসির আলি বললেন, আপনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। আপনি পড়াশোনা কতদূর করেছেন? নাদিয়া বললেন আমি আপনার আর কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেব না।

অম্বিকাবাবুর বাড়ি

এটা কি অম্বিকাবাবুর বাড়ি?

দরজা ধরে যে-মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে, সে জবাব দিল না। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইল। মেয়েটির বয়স উনিশ-কুড়ি। হালকা-পাতলা গড়নের শ্যামলা মেয়ে। চোখ দুটি অপূর্ব। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার চোখ নয়। কিন্তু মেয়েটি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিসির আলি বললেন, অম্বিকাবাবুর সঙ্গে আমার খুব প্রয়োজন। আমার নাম মিসির আলি।

আমি আপনাকে চিনি।

তাই বুঝি? তাহলে তো ভালোই হল। লোকজন আমাকে চিনতে শুরু করেছে এটাই সমস্যা। তোমার নাম কি?

অতসী।

অতসী, তোমার বাবা কি আছেন?

মেয়েটি জবাব দিল না। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। মিসির আলি নিশ্চিত হলেন অম্বিকাবাবু বাড়িতেই আছেন। তবে অতসী হয়তো তা স্বীকার করবে না। মিথ্যা করে বলবে, বাবা বাড়ি নেই। তবে মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে মিথ্যা বলার অভ্যাস এখনো হয় নি। মিথ্যা বলার আগে তাকে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মিসির আলি মেয়েটিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন। হাসিমুখে বললেন, উনি বোধহয় বাড়ি নেই।

Page 10 of 29
Prev1...91011...29Next
Previous Post

বৃহন্নলা – হুমায়ূন আহমেদ

Next Post

আলোকে আঁধারে – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

Next Post

আলোকে আঁধারে - নীহাররঞ্জন গুপ্ত

আলোকলতা - নীহাররঞ্জন গুপ্ত

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In