মায়মুনা বিয়ের পর থেকে একইভাবে স্বামীর সেবাযত্ন ও আল্লাহপাকের কাছে ঐভাবে ফরিয়াদ করে আসছে।
একদিন নওশেরের ঘুম ভেঙে যেতে দেখল, মায়মুনা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ঐসব মোনাজাত করছে। নওশের বেশ রেগে গিয়ে বলল, অত কান্নাকাটি কিসের, আমার পিয়াস লেগেছে, পানি খাব।
স্বামীর গলা শুনতে পেয়ে মায়মুনা তাড়াতাড়ি মোনাজাত শেষ করে জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে এনে দিল।
নওশের ঢকঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস দেবার সময় বলল, আমার নিষেধ সত্ত্বেও নামায-রোযা কর, আমি কিছু বলি না। কিন্তু রাতে না ঘুমিয়ে যে সারারাত এইসব কর তাতে কি লাভ হচ্ছে?রং নিজের শরীর নষ্ট করছ। কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
মায়মুনা বলল, হলে আর কি হবে, মরে যাব-এই তো? তাতে কি হয়েছে, মরতে তো একদিন সবাইকে হবে।
নওশের বলল, আচ্ছা বল তো, আজ কত বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে?
চার বছর।
সেই থেকে তো রাত জেগে জেগে নামায পড়ে কুরআন পড়ে কতরকম দোয়া কর। কই তোমার একটা দোয়াও কি আল্লাহরুল করেছে? করেনি। তবু কেন ঐসব কর?
তুমি কুরআন-হাদিস বা ধর্মীয় কোন বই পড়নি, তাই ঐ রকম বলছ। হাদিসে আছে, হযরত নবী পাক (দঃ) বলেছেন, আল্লাহপাক ঈমানদার বান্দাদের কোন ইবাদত যেমন বিফল করেন না, তেমনি তাদের দোয়াও বিফল করেন না। তবে বান্দারা যা চায়, তা তার জন্যে অমঙ্গল হবে জেনে তৎক্ষণাৎ কিছু দেন না। তিনি যখন দোয়াটা ভাল মনে করেন তখন দেন। সেটা ইহকালেও হতে পারে অথবা পরকালেও হতে পারে।
নওশের বলল, তুমি তোমার কুরআন-হাদিস নিয়ে থাক, আমার ওসব দরকার নেই। কথা শেষ করে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
আল্লাহপাক কাকে কখন কোন অসিলায় হেদায়েত করেন তা মানুষের বোঝার অসাধ্য। একদিন নওশেররা কয়েকজন মিলিত হল এক হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে। খাওয়া দাওয়ার পর নেশা করার জন্য সিদ্ধি বেঁটে ঘোলের সঙ্গে মিশিয়ে খেল। তারপর বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে তাস খেলে বাসায় ফিরল। ঐভাবে সিদ্ধি খেয়ে বন্ধুর বাড়িতেই নেশা ধরেছিল। এতক্ষণে সেটা আরো বেশি ধরেছে।
বাসায় এলে মায়মুনা বলল, আজ তোমাকে যেন অন্য রকম দেখাচ্ছে, তোমার কি শরীর খারাপ?
নওশের মাঝে মধ্যে মদ খেলেও বাসায় এসে কোনদিন মাতলামি করে না। চুপচাপ শুয়ে পড়ে। সে আজ প্রথম মদ না খেয়ে সিদ্ধি খেয়েছে। সিদ্ধি যারা শখ করে। খায়, তারা পানের সঙ্গে চিবিয়ে খায়। তাতে অল্প নেশা হয়। আর বেঁটে শরবত করে খেলে ভীষণ নেশা হয়। তাই সবার মতো নওশেরেরও তাই হয়েছে। সিদ্ধি খেয়ে নেশা হলে চুপচাপ থাকে। কিন্তু একবার যদি কোন কারনে কথা বলতে আরম্ভ করে, তা হলে শুধু হাসতেই থাকবে। কেউ কেউ হাসতে হাসতে হার্টফেল করে। অবশ্য যাদের হার্ট খুব দুর্বল থাকে তারাই হার্টফেল করে। আবার অনেকে বমি করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
বাসায় ফিরে নওশের স্ত্রীর কথা শুনে নেশার ঘোরে বলল, আমার শরীর খারাপ। হয়নি প্রিয়তমা। এস, তোমাকে নিয়ে আজ ফুর্তি করি। এই কথা বলে সে মায়মুনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল।
মায়মুনা বুঝতে পারল, সে নেশার ঘোরে এরকম বলছে। কারন আজ চার বছরের মধ্যে সুস্থ অবস্থায় কোনদিন এভাবে কথাও বলেনি আর আদরও করেনি। বলল, ঠিক আছে অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? আগে জামা-কাপড় পাল্টাও।
নওশের সব সময় ইস্ত্রিকরা দামী জামা-কাপড় পরে। কোন জামা-কাপড় একবারের বেশি দুবার পরে না। স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি লুঙ্গি দাও। সেদিন সে সাদা পাজামা-পাঞ্জামীর উপর উলের জ্যাকেট পরেছিল। মায়মুনা আলনা থেকে লুঙ্গি আনতে গেলে নওশের জ্যাকেট খুলে আলনার দিকে ছুঁড়ে দিল। তারপর প্রথমে পাঞ্জাবীটা ও পরে গেঞ্জীটা টান দিয়ে ফড়ফড় করে ছিঁড়ে গা থেকে খুলে মেঝেয়। ছুঁড়ে দিয়ে খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলল, কই-লুঙ্গি দাও।
মায়মুনা বেশ অবাক হয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলল, এত হাসছ কেন?
নওশের বলল, হাসব না তো কি কাঁদব? তারপর মায়মুনার শাড়ী ধরে ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল, কি দারুণ আনন্দ লাগছে। তোমার শাড়ি-ব্লাউজও ছিঁড়ে দিই, তুমিও আনন্দ পাবে।
মায়মুনা ভয় পেয়ে তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলল, না-না ছিড়ো। এগুলো তো আজ কিনে এনেছ।
নওশের তার বাধা মানল না। জোর করে শাড়ি-ব্লাউজ খুলে হাসতে হাসতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।
মায়মুনা বিবস্ত্র হয়ে লজ্জায় ও ভয়ে তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে আলনা থেকে অন্য একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে খাটের কাছে যখন এল তখন নওশের বমি করতে শুরু করল। মায়মুনা স্বামীকে ধরে খাটের কিনারে এনে দুহাতে মাথাটা ধরে রাখল। নওশের অনেকটা বমি করে নেতিয়ে শুয়ে পড়ল। মায়মুনা শাড়িটা ভালো করে পরে প্রথমে স্বামীর মুখ ও শরীর পরিষ্কার করল। তারপর বিছানা ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে হাত পাখা দিয়ে তার মাথায় বাতাস করতে লাগল। তখন শীতকাল। তাই বৈদ্যুতিক পাখা চালাল না। ফজরের আযান হতে নামায পড়ে এসে পাশে বসে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করতে লাগল। এক সময় তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে নওশেরের গালে কয়েক ফোঁটা পড়ল। মায়মুনা তাড়াতাড়ি আঁচল দিয়ে মুছে দিল।