সাজেদাকে দেখে বাড়ির ছোট বড় সবাই অবাক। এত সুন্দর মেয়ে তারা এর আগে দেখেনি। এক কথায় অপরূপা। শালওয়ার-কামিজের উপর বোরখা পরে এসেছিল। বোরখা খুলতে যারা সেখানে ছিল সবাই চমকে উটল। সাজেদাকে নাশতা খাইয়ে বাতেনের স্ত্রী জোহরা তাকে সাথে করে কবিরন বিবির কাছে নিয়ে এসে সাজেদার পরিচয় দিল। তারপর সাজেদাকে বলল, কদমবুসি কর-ইনি আমার ছোট শাশুড়ী।
সাদেজা কদমবুসি করতে কবিরন বিবি তার হাত ধরে পাশে বসালেন। তারপর দোয়া করে সাজেদার আপাদমস্তক দেখে আলহামদু লিল্লাহ বলে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি?
মোসাম্মৎ সাজেদা বেগম।
লেখাপড়া কতদূর করেছ।
গত বছর ম্যাট্রিক পাস করেছি।
শুনে খুশি হলাম। তারপর জোহরাকে বললেন, বড়মার কাছে নিয়ে যাও।
জোহরা আসবার সময় সাজেদাকে বলল, এবার যার কাছে নিয়ে যাচ্ছি তাকেও কদমবুসি করবে।
আফ্রিদা রান্নাঘরে রান্না করছিল। জোহরা সাজেদাকে তার ঘরে নিয়ে এসে একটা মেয়েকে দিয়ে আফ্রিদাকে ডেকে পাঠাল। সে ঘরে এলে জোহরা বলল, তোমার ভাসুরের বন্ধু শিহাব ভাইয়ের মেয়ে সাজেদা।
আফ্রিদা সাজেদাকে দেখে খুব খুশি হল। সে কদমবুসি করতে এলে জড়িয়ে ধরে মাথায় ও মুখে চুমো খেয়ে বলল, থাক মা থাক, বেঁচে থাক সুখী হও। তারপর জোহরাকে বলল, বুবু, তুমি একে নিয়ে একটু বস, আমি কিছু নাশতা নিয়ে আসি।
জোহরা বলল, আমি এখন কিছু খাব না। আর সাজেদাকেও নাশতা খাইয়ে নিয়ে এলাম। তোর পছন্দ হয়েছে কিনা বল।
আফ্রিদা বলল, এমন মেয়ে কার না পছন্দ হবে? আল্লাহ আল্লাহ করে কাজটা মিটে গেলে হয়।
জোহরা সাজেদাকে নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এল।
বাতেনের চার ছেলে দুমেয়ে। বড় মেয়ে আয়েশা ও বড় ছেলে রফিকের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজ ছেলে রিয়াজুলের সঙ্গে নাদিমের খুব ভাব, এক সঙ্গেই বি.এ. পাশ করেছে। রিয়াজুল বাজারে কাপড়ের দোকান দিয়েছে। ইন্টারে পড়ার সময় ছোট ফুপুর মেয়ে হালিমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। হালিমা তখন ক্লাস টেনে পড়ত। সেজ ছেলে রেজাউল ক্লাস টেনে আর ছোট ছেলে রশিদুল সেভেনে পড়ে। ছোট বোন আমেনা ক্লাস ফোরের ছাত্রী।
পরের দিন বৃহস্পতিবার। নাদিম স্কুল ছুটির পর ঘরে এসে ভাত খেয়ে বিছানায় কাত হতে তন্দ্রামতো এসেছিল। কারো ডাকে তন্দ্রাভাব কেটে যেতে তাকিয়ে দেখল, রফিক ভাইয়ের স্ত্রী জুলেখা দাঁড়িয়ে। বলল কি ব্যাপার ভাবি, ডাকাডাকি করছ কেন?
জুলেখা বলল, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, আমার সঙ্গে কনে দেখতে যাবে।
নাদিম এসব ব্যাপার কিছুই জানে না। জুলেখার চাচাতো বোন সায়লা প্রায় তাদের বাড়ি বেড়াতে আসে। বেশ কিছুদিন আগে একদিন নাদিম কি-একটা দরকারে রফিক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে সায়লাকে দেখে। সায়লা দেখতে মোটামুটি সুন্দর। বি.এ. পড়ছে। নাদিমকে দেখে সায়লা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নাদিম জুলেখা ভাবিকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া কোথায়?
জুলেখা বলল, কোথায় গেছে বলে যায়নি। কেন, কোন দরকার আছে নাকি?
নাদিম বলল, হ্যাঁ, একটু দরকার ছিল। যাক পরে আসব বলে সে ফিরে আসতে লাগল।
জুলেখা বলল, নাদিম ভাই, শোন। না
দিম দরজার বাইরে চলে এসেছিল, সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, কিছু বলবে?
জুলেখা বলল, হ্যাঁ, ভিতরে এস বলছি। নাদিম ভিতরে এলে বলল, তুমি তো সায়লাকে কয়েকবার দেখেছ, পছন্দ হলে বল, বিয়ের ব্যবস্থা করব।
নাদিম বলল, আমি এখনও বিয়ে করার কথা ভাবি নি। তারপর সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
জুলেখার মনে হল সায়লাকে নাদিমের পছন্দ হয়নি।
আজ জুলেখা ভাবির মুখে কনে দেখার কথা শুনে নাদিম ভাবল, সায়লা হয়ত এসেছে, তাই ডাকতে এসেছে। বলল, কনে আমার দেখার দরকার নেই। সে কাজ মুরব্বিরা করছেন।
মুরুব্বিদের হুকুমে তাদেরই নিবার্চিত কনেকে দেখাবার জন্য আমার সঙ্গে যেতে বলছি।
নাদিম উঠে বসে বলল, তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই।
আমি আর কনে দেখে কি করব? মুরব্বিরা যখন দেখে নির্বাচিত করেছেন।
বা-রে, তাই বলে যে তোমার জীবনসঙ্গিনী হবে তাকে দেখে পছন্দ করবে না, এ কেমন কথা?
দেখে আমার যদি পছন্দ না হয়?
আগে দেখ, তারপর পছন্দ-অপছন্দের কথা। সত্যি কথা বলতে কি এত সুন্দরী মেয়ে আর দেখিনি।
অত পাম দিতে হবে না, চল যাচ্ছি।
জুলেখা তাকে সঙ্গে করে নিজের ঘরে নিয়ে এল।
বাতেন শিহাবদের বাড়িতে যাতায়াত করে বলে সাজেদা ছোটবেলায় চাচা বলে ডেকেছে। বড় হয়ে আব্বার বন্ধু জেনে তাকে আব্বার মত সম্মান করে। এবারে বাতেন চাচা গিয়ে যখন আব্বা, আম্মা ও দাদির সঙ্গে তার বিয়ের কথা বলে তখন সে আড়াল থেকে শুনেছে। তারপর এখানে আসবার সময় দাদি তাকে ঘটনাটা বলে অনেক কিছু বুঝিয়েছে। নাদিমের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য আব্বা যে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাও জানে। জুলেখা ভাবির কাছে নাদিমের নাম শুনে তাকে দেখার জন্য মনের মধ্যে তাগিদ অনুভব করেছে। তাই আজ যখন জুলেখা ভাবি বলল, কি ভাই, বিয়ের আগে বরকে একবার দেখতে ইচ্ছা করছে নাকি? তখন হ্যাঁ বলার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লজ্জায় তা বলতে পারে নি, মাথা নিচু করে ছিল। জুলেখা ভাবি তার চিবুক তুলে ধরে বলল, আরে ভাই এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? তোমাদের মতো বয়স আমাদেরও একদিন ছিল। চুপ করে থাকাটাই কিন্তু সম্মতির লক্ষণ বলে চিবুক ছেড়ে দিয়ে ছোট ননদ আমেনাকে পাশে দেখে বলল, তুই এখানে থাক, আমি নাদিম ভাইকে নিয়ে আসি।