আসাদমাকে দেখে কলল, আম্মা কিছুটাকা দাও তো, নাদিমের বৌয়ের মুখ দেখব।
নাদিম বলল, কি পাগলামি করছিস? না চাচী আম্মা টাকা দেয়া লাগবে না। তারপর আসাদকে বলল, তোকে চিনে না তাই মুখে নেকাব দিয়েছে। তুই তো একদিনও আমাদের বাড়িতে গিয়ে ওর সঙ্গে পরিচয় করলি না।
আনোয়ারা বলল, নাদিম ঠিক কথা বলেছে। তারপর তাদেরকে নাশতা করতে বলে রোজীকে বলল, নাশতা খাওয়ানো হয়ে গেলে রান্নাঘরে আসবি।
আনোয়ারা চলে যাওয়ার পর সাজেদা মুখের নেকাব সরিয়ে আসাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনার বন্ধুর কাছে আপনার অনেক গুণগান শুনেছি। আরও শুনেছি। আপনাদেরকে বিয়ের কথা জানায়নি বলে মনে কষ্ট পেয়েছেন।
আসাদ হেসে উঠে বলল, ওর কথা বিশ্বাস করবেন না, সব বাজে কথা।
এখানে আসার সময় নাদিম সাজেদাকে বলেছিল, তুমি কথায় কথায় মমতাজকে বিয়ে করার ব্যাপারে আসাদের মতামত জেনে নিও। তাই আমাদের কথা শুনে বলল, বাজে কথাও অনেক সময় সত্য হয়। যাক গে, আমি কিন্তু আপনার জন্য একটা বিয়ের পয়গাম নিয়ে এসেছি। যদি মনে কিছু না করেন এবং বলার অনুমতি দেন, তা হলে বলব। নচেৎ…..
সাজেদাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আসাদ বলে উঠল, এতবড় সুসংবাদ শুনে মনে কিছু করব কেন? আপনি নিঃসংকোচে বলুন।
আমার ননদ মমতাজকে আপনার হাতে দিতে চাই।
কথাটা শুনে আসাদ বন্ধুর সামনে খুব লজ্জা পেল। কিন্তু মনে তখন তার আনন্দের জোয়ার বইছে। সে নাদিমের বাড়িতে অনেকবার গেছে। তার সাথে খাওয়া-দাওয়া। করেছে। ঢাকাতে চাকরি পাওয়ার খবরটা জানাতে গেলে নাদিম ও তার মা না খাইয়ে ছাড়েনি। খাওয়ার সময় মমতাজ বলেছিল, আসাদ ভাই, ঢাকায় গিয়ে আমাদের কথা ভুলে যাবে। ঐ যে কথায় বলে চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল। আসাদ তখন কিছু বলার জন্য তার মুখের দিক চাইতে গিয়ে দেখল, মমতাজের চোখ দুটো পানিতে ভরা। তাড়াতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নাদিমের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, তুই কি মমতাজের কথাটা বিশ্বাস করিস?
নাদিম বলল, এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই লোকে বলে। তবে কথাটা অনেক ক্ষেত্রে ঘটে থাকলেও সব ক্ষেত্রে ঘটে না। অনেক সময় দেখা গেছে, চোখের আড়াল হলে আরো বেশি মনে পড়ে।
ঢাকায় চাকরি হওয়ার পর আসাদের বিয়ের অনেক সম্বন্ধ এসেছে। কিন্তু সে মমতাজের কথা ভেবে এখন বিয়ে করবে না বলে কাটিয়ে দিয়েছে। রোজীর জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে। আসাদের মায়ের খুব ইচ্ছা, ছেলে ও মেয়ের বিয়ে একসঙ্গে দেয়ার। গতকাল এক জায়গা থেকে ছেলের তিন চারজন গার্জেন এসে রোজীকে দেখে পছন্দ করে গেছে। কথাবার্তাও প্রায় পাকা। শুধু বিয়ের দিনটা বাকি। আসাদের জন্য মেয়ে পছন্দ হলে দিন ঠিক হবে।
আজ নাদিমের স্ত্রীর কথা শুনে আসাদ লজ্জায় কিছু বলতে না পেরে মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।
নাদিম আসাদের অবস্থা বুঝতে পেরে তার লজ্জা কাটাবার জন্য বলল, কি রে, তোর ভাবির কথায় উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
আসাদ নাদিম বলে তাকে জড়িয়ে ধরে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, ভাবিকে মায়ের কাছে প্রস্তাব দিতে বল।
সাজেদা বলল, আরে ভাই তা তো দেবই। কিন্তু তুমি অত লজ্জা পাচ্ছ কেন? লজ্জা তো মেয়েদের ব্যাপার। তারপর বলল, এই যা, আপনাকে তুমি করে বলে ফেললাম।
আসাদ নাদিমকে ছেড়ে দিয়ে বলল, তাতে কি হয়েছে বরং এটাই তো স্বাবাভিক। এতক্ষণ আপনি করে বলে দূরে রেখেছিলেন, এখন কাছে টেনে নিলেন।
সাজেদা বলল, কাছে টানার জন্যই তো এসেছি, তাই হঠাৎ করে ঐ রকম বলে ফেললাম।
নাদিম বলল, জানিস কর্তারা মমতাজের জন্য ছেলের সন্ধান করছে জানতে পেরে তোর কথা মনে পড়ল। তাই সে কথা আব্বা-আম্মাকে বললাম। বন্ধুর বোনকে তুই বিয়ে করবি কিনা তারা আমাকে জানতে বলল। তোর মনের খবর আমি অনেক আগেই একটু বুঝতে পেরেছিলাম। আমি বললে তুই লজ্জা পাবি, তাই ভাবলাম তোর ভাবিকে সঙ্গে নিয়ে যাই। তাতে এক কাজে দুকাজ হবে। তোর ভাবি তোর মতামত জানবে আর তোদের সঙ্গে ওর পরিচয়ও হবে।
আসাদ বলল, রোজীরও বিয়ের সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। আম্মার ইচ্ছা, আমাদের দুজনের বিয়ে একসঙ্গে দেবে। সেই জন্যে শুধু বিয়ের দিন ঠিক হতে বাকি আছে।
নাদিম স্ত্রীকে বলল, সবই তো শুনলে, আর দেরি করছ কেন? যাও চাচি আম্মার কাছে গিয়ে প্রস্তাবটা দাও।
সাজেদা রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলে আনোয়ারা বলল, বৌমা তুমি এখানে এলে কেন? ঘরে যাও, আমরা আসছি। তারপর আচ্ছা ঠিক আছে বলে রোজীকে বলল, তুই তরকারীটা দেখ, অল্প একটু বাকি আছে। আমি বৌমাকে নিয়ে ঘরে যাচ্ছি। আর শোন তরকারী নামিয়ে আমাকে ডাকবি, ওদেরকে খেতে দেব।
সাজেদাকে নিজের রুমে নিয়ে এসে আনোয়ারা তার বাপের বাড়ির সব খবরাখবর নিতে লাগল।
সাজেদা সে সবের উত্তর দিতে দিতে এক সময় প্রস্তাবটা দিল।
আনোয়ারা আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল, এটা তো খুব ভালো কথা। আমি মমতাজকে দেখেছি। সে আগে কয়েকবার নাদিমের সঙ্গে এসেছে। আমার কোনো অমত নেই। আসাদকে জিজ্ঞেস করে তোমাদের জানাব।
সাজেদা বলল, চাচি আম্মা, আমি আসাদ ভাইয়ের মতামত নিয়ে আপনাকে প্রস্তাব দিয়েছি।
আনোয়ারা বলল, ওমা, তাই নাকি? তা হলে তো কোনো কথাই নেই। এমন সময় রোজী তরকারীর হাঁড়ি চুলো থেমে নামিয়ে রেখে মাকে ডাকতে এসে সাজেদার কথা শুজে জিজ্ঞেস করল, কিসের প্রস্তাব মা?