সেদিন স্কুল থেকে ফিরে নাদিম স্ত্রীকে বলল, তোমাকে একদিন মমতাজের ব্যাপারে যে বন্ধুর কথা বলেছিলাম, আজ আসরের নামায পড়ে তাদের বাড়িতে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। তুমি নামায পড়ে তৈরি হয়ে থেকো, আমি আব্বা আম্মাকে বলেছি।
সাজেদা হাসিমুখে বলল, তা না হয় যাব। কিন্তু শুধু বেড়াতে যাবে, না বোনের পয়গাম নিয়ে যাবে?
নাদিমও হাসিমুখে বলল, তোমার বুদ্ধি তো দারুণ, কি করে বললে বুঝতে পারছি না।
সাজেদা হাসতে হাসতে বলল, তোমার বেতের আঘাতে যেমন বিবেকের দুয়ার খুলে গেছে, তেমনি বুদ্ধির দুয়ার খুলে গেছে।
নাদিম স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলল, প্লীজ সাজেদা, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমাকে লজ্জা দিনও না। এমনি আমার যখন সে কথা মনে পড়ে তখন নিজের কাছে নিজে খুব ছোট হয়ে যাই।
সাজেদা বলল, কসম খেয়ে বলছি, আমি এমনি কথার ছলে বলেছি। তোমাকে লজ্জা দেয়ার জন্য অথবা অন্য কোনো কারনে বলিনি।
নাদিম বলল, তা আমিও বুঝেছি, ভবিষ্যতে কথার ছলেও বলো না।
সেই মার খাবার পর থেকে সাজেদার স্বভাব-চরিত্র পাল্টে গেছে। তারপর থেকে সে স্বামীর প্রতিটা আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এর মধ্যে বহু ধর্মীয় ও অন্যান্য বই পড়ে নিজেকে স্বামীর মনের মতো করে গড়ার চেষ্টা করছে। এখন তার কথায় স্বামী মনে ব্যাথা পেয়েছে বুঝতে পেরে বসে তার দুপা বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, কথাটা কথাচ্ছলে বলে তোমার মনে ব্যথা দিয়ে অন্যায় করেছি, মাফ করে দাও।
নাদিমও সেই থেকে স্ত্রীর পরিবর্তন লক্ষ্য করে আনন্দে আপ্লুত হয়ে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করেছে, তাকে আরো গভীরভাবে ভালবাসছে। পা ধরে মাফ চাইতে দেখে তাকে তুলে বুকে চেপে ধরে মাথায় চুমো খেয়ে বলল, এই কথায় পায়ে ধরে মাফ চাইতে হয় না। তারপর কয়েকটা আদর দিয়ে বলল, আমি নামায পড়তে যাচ্ছি, ফিরে এসে তোমাকে যেন রেড়ি দেখি।
সেদিন নাদিম সাজেদাকে সঙ্গে নিয়ে যখন আসাদদের বাড়িতে পৌঁছাল তখন আসাদ ছিল না।
আসাদের বোন রোজী ছোটবেলায় নাদিমকে ভাইয়ার বন্ধু হিসাবে শ্রদ্ধা করত। বড় হয়ে সে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই নাদিম যখন ভাই যার সঙ্গে আসত তখন মুখে না বললেও আচার-ব্যবহারে ও কথাবার্তায় নিজের মনের দুর্বলতা প্রকাশ করত। তারপর নাদিম তাদের বাড়িতে এসে তাকে এড়িয়ে চলতে দেখে বুঝতে পারল, সে তাকে ভালবাসে না। তখন মনে খুব আঘাত পেলেও কখনও নাদিমকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। নিজেকে সামলে রেখে তার সাথে কথা বলত। ভাইয়া চাকরি করতে ঢাকা চলে যাওয়ার পর আজ দীর্ঘদিন সে তাদের বাড়িতে আসেনি। নাদিমের বিয়ে হয়ে গেছে শুনে গোপনে চোখের পানি ফেলেছে। আর ভাগ্যে নেই ভেবে মনকে বুঝ দিয়েছে। প্রায় বছরখানেক আগে ভাইয়ার মুখে নাদিম ও তার স্ত্রী আসবে শুনে পুরানো ব্যথাটা মনে একবার কাঁটার মতো বিধলেও খুশি মনে তাদের আসার অপেক্ষা করেছে। আজ তাদেরকে দেখে এগিয়ে এসে সামাল দিয়ে বলল, কোন দিকের চাঁদ কোন দিকে। উঠল, একেবারে ভাবিকে নিয়ে এসে পড়লে?
নাদিম সালামের উত্তর দিয়ে বলল, চাঁদ আল্লাহর হুকুম মতো নির্দিষ্ট পথেই উদিত হয়। তারপর জিজ্ঞেস করল, তোরা সব কেমন আছিস? শুনলাম আসাদ এসেছে, সে কোথায়?
রোজী সাজেদার একটা হাত ধরে বলল, ভাবি তো দারুণ সুন্দরী? তারপর তাদেরকে ভাইয়ার ঘরে নিয়ে এসে বসতে বলে বলল, একটু আগেও ছিল। তোমরা আসবে সে কথা আমাকে বলছিল। বোধ হয় নামায পড়তে গেছে।
রোজীর মা আনোয়ারা অন্য ঘরে ছিল। রোজী কারো সঙ্গে কথা বলছে শুনে জিজ্ঞেস করল, কার সঙ্গে কথা বলছিস?
রোজী বলল, দেখবে এস না আম্মা, নাদিম ভাই ভাবিকে নিয়ে এসেছে।
আনোয়ারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় বলল, ওমা তাই নাকি? খালেক যে বলে গেল, ওরা সন্ধ্যের পর আসবে।
আনোয়ারা সেখানে এলে, নাদিম সাজেদাকে ইশারা দিয়ে কদমবুসি করে উঠে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন চাচি আম্মা?
আনোয়ারা দোয়া করে বলল, আল্লাহর ফজলে ভাল আছি। তোমাদের বাড়ির খবর সব ভালো তো?
জি ভালো।
সাজেদা কদমবুসি করলে আনোয়ারা তার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে চুমো খেয়ে চিবুক ধরে বললেন, নাদিম, তোর বৌ খুব সুন্দরী। দোয়া করি, আল্লাহ তোদেরকে সুখী করুক। এমন সময় মাগরিবের আযান শোনা গেল।
নাদিম রোজীকে বলল, তুই তোর অবিকে নিয়ে নামায পড়, আমি মসজিদে যাচ্ছি।
নাদিম মসজিদে নামায পড়ে আসাদকে দেখতে না পেয়ে ফিরে এসে দেখল, রোজী সাজেদার সঙ্গে গল্প করছে।
নাদিমকে একা দেখে রোজী বলল, ভাইয়াকে মসজিদে পেলে না?
নাদিম বলল, না রে, কোথায় গেল বল তো?
রোজী বলল, তোমরা সন্ধ্যের পর আসবে বলেছিলে, তাই হয়ত কোথাও গেছে। এক্ষুনি এসে পড়বে। তোমরা দুজনে বসে কথা বল। আমাকে আম্মা ডাকছিল কেন দেখে আসি। কথা শেষ করে সে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর রোজী যখন ফিরে এল তার কয়েক মিনিটের মধ্যে আসাদ এসে তাদেরকে দেখে সালাম ও কুশল বিনিময় করে বলল, এতদিন পর, তা হলে সত্যিই এলে? তারপর সাজেদার দিকে চেয়ে তাকে মুখে নেকাব দিতে দেখে বলল, কি ভাবি, খালি হাতে মুখ দেখাবেন না বুঝি?
রোজী বলে উঠল, হ্যাঁ, ভাইয়া। আগে কিছু মালপানি ছাড়।
আনোয়ারা ওরা আসবে জেনে আসরের নামায পড়ে নাস্তা তৈরি করে রেখেছিল। নামায পড়ে নাশতা নিয়ে ঘরে ঢুকল।