নাদিমও ফিসফিস করে বলল, শুনলে কি হয়েছে? আমরা তো অন্যায় কিছুকরছিনা।
সাদেজা স্বামীর ঠোঁটে আস্তে করে কামড়ে দিয়ে ঠোঁটের উপর গাল রেখে বলল, অসভ্য।
নাদিম ও তার নরম তুলতুলে গালে কামড়ে দিয়ে বলল, আমি অসভ্য, না তুমি? একটা পুরুষের বুকের উপর শুয়ে কামড়াকামড়ি করছ, এটাতে অসভ্যতা হয়নি বুঝি?
ঠিক আছে, আর অসভ্যতা করব না, বলে সাজেদা স্বামীর বুক থেকে নেমে যেতে চাইল।
নাদিম বুঝতে পেরে দুহাত দিয়ে চেপে ধরে বলল, আমিও আর তোমাকে অসভ্য বলব না।
এ বছর মমতাজের ম্যাট্রিক পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর তার বিয়ে দেবার জন্য বাপ চাচারা পাত্রের সন্ধান করতে লাগল। ছেলে পছন্দ হলে তাদের বংশ পছন্দ হয় না। আবার বংশ পছন্দ হলে ছেলে পছন্দ হয় না। নাদিমের অনেক দিন থেকে ইচ্ছা বন্ধু আসাদের সঙ্গে বোনের বিয়ে দেবার। তাই মমতাজের জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে জেনে একদিন সেকথা আব্বা-আম্মাকে জানিয়ে বলল, আসাদকে তো তোমরাও জান, কতবার এসেছে।
রহিম বলল, তা জানি। কিন্তু তাদের বাড়ির ও বংশের খবর তো আর জানি না।
নাদিম বলল, আমি ওদের বাড়িতে অনেকবার গেছি। সবকিছু জেনেই কথাটা বলেছি।
রহিম বলল, ওদের বাড়ির সব খবর বল শুনি। ছেলেটা দেখতে-শুনতে ও তার ব্যবহার বেশ ভালো বলে মনে হয়েছে।
নাদিম বলল, আসাদের আব্বা নেই। ওরা দুভাই এক বোন। বোটনা সবার ছোট। বছর দুই আগে ম্যাট্রিক পাস করেছে। ভাইটা ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ছে। দুচাচা আছে, তারা আলাদা। চাষে যা ধান হয় সারা বছর খাওয়ার পর কিছু বিক্রি করে। আর আসাদ তো আমার সাথে বি.এ. পাস করে ঢাকায় একটা ভালো চাকরি করছে। ওর আব্বা বছর পাঁচেক আগে চার কামরা পাকা বাড়ি করার পর মারা গেছেন। বেশ ছোটখাট সংসার। মমতাজ সুখী হবে। আসাদের মায়ের ব্যবহারও খুব ভালো।
এবার আফ্রিদা বলল, সব তো ভালো শুনলাম। কিন্তু আসাদের সাথে তোর অনেক দিনের বন্ধুত্ব। সে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করবে কিনা সে কথা জেনেছিস?
নাদিম বলল, না, জানি নি। তবে তাকে যতটা জানি, সে অরাজি হবে না।
রহিম বলল, ঠিক আছে, আগে তার মতামত নাও; তারপর আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলব।
নাদিম বলল, জি, তাই নেব।
পরের দিন নাদিম স্কুলে যাওয়ার সময় চিন্তা করল, আসাদ বাড়ি এসেছে কিনা খালেককে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে। খালেকও গোদাগাড়ি হাইস্কুলের মাস্টার। তার বাড়ি আসাদদের গ্রামে সুলতানগঞ্জে। সে তাদের চেয়ে দুতিন বছরের সিনিয়র। আবার ভাবল, গত বছর আসাদের সাথে দেখা হতে দুদিন পর তাদের বাড়িতে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু স্ত্রীকে মারধরের ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ ছিল বলে যাওয়া হয়নি। পরে অবশ্য যেতে চেয়েছিল, আসাদ ঘরে নেই জেনে আর যায়নি। তারপরও আসাদের খবর খালেকের কাছে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু এমনি দুর্ভাগ্য, যখনই জিজ্ঞেস করেছে, তখনই আসাদ ঘরে থাকে না।
স্কুল-কলেজে পড়ার সময়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আসাদের সঙ্গে প্রায়ই তাদের বাড়িতে যেত। সুলতানগঞ্জ সারেংপুর থেকে মাত্র এক মাইল। সারেংপুর ও সুলতানগঞ্জের মধ্যস্থলে সুলতান শাহ পীরের মাজার আছে। প্রতি বছর মাজারের পাশে মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সাত দিনের জন্য মেলা বসে। কিন্তু মেলা ভাঙতে ভাঙতে আরো সাতদিন লেগে যায়। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় নাদিম বন্ধু আসাদের সঙ্গে প্রতিদিন মেলাতে ঘুরে বেড়াতো আর ক্ষিধে পেলে কোনো কোনোদিন নাদিম তাকে বাড়িতে নিয়ে এসে খাওয়াতো। সুলতানগঞ্জের পাশ দিয়ে মহানন্দা নদী বয়ে গেছে। অনেক সময় দুবন্ধুতে এত মিল থাকা সত্ত্বেও এবং মাত্র এক মাইলের ব্যবধান হলেও কেউ কারো বাড়ি একা একা ছোট বেলায় গেলেও বড় হওয়ার পর থেকে যায়নি। নাদিম বড় হবার পর বুঝতে পেরেছিল, আসাদের বোন রোজী তাকে ভালবাসে। কিন্তু রোজী কোনোদিক দিয়ে কোনো অংশে খারাপ নয় জেনেও রোজীকে সে ভালবাসতে পারেনি। তাই সে একা কোনো দিন তাদের বাড়িতে যায়নি। বড় হওয়ার পর আসাদও বুঝতে পেরেছিল নাদিমের বোন মমতাজ তাকে ভালবাসে।
মমতাজকেও আসাদের খুব পছন্দ। কিন্তু বন্ধুর বোন বলে সে কথা মনের মধ্যে চেপে রেখেছে। তাই সেও একা কোনোদিন নাদিমের বাড়িতে যায় নি। নাদিম যেমন বন্ধুর মনের খবর আঁচ করতে পেরেছে, তেমনি আসাদও বন্ধুর মনের খবর আঁচ করতে পেরেছে। এখন আসাদ ঢাকায় চাকরি করে। দুমাস পর বাড়িতে এলে ঐ কারণে সারেংপুর গিয়ে বন্ধুর খোঁজ নিতে সাহস করে না।
নাদিমও ঐ একই কারণে সুলতানগঞ্জে গিয়ে বন্ধুর খোঁজ নিতে সাহস করে না। তার উপর সে তাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করে লজ্জায় আরো যেতে পারে না। তাই খালেককে মাঝে মাঝে আসাদ বাড়ি এসেছে কিনা জিজ্ঞেস করে।
আজ স্কুলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল।
খালেক বলল, হ্যাঁ, এসেছে। গতকাল এশার নামাযের সময় মসজিদে দেখা হয়েছে।
নাদিম বলল, আপনি তার সঙ্গে দেখা হলে বলবেন, আমি কাল সন্ধ্যের পর তার সঙ্গে দেখা করতে যাব। আর তার সঙ্গে যদি আপনার দেখা না হয়, তা হলে তার। আম্মাকে বলবেন তিনি যেন আসাদকে বলে রাখেন, আমি যাব।
আসাদের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে খালেক স্কুলে আসে। বলল, আজ বাড়ি যাবার সময় ওদের বাড়িতে খবরটা দিয়ে দেব।