বাতেন বলল, জি, আমার কাছে সবকিছু ভাল মনে হয়েছে বলেইতো আপনার কাছে প্রস্তাব দিলাম। নাদিম আমাদের ছেলে। যেখানে-সেখানে বা যেমন-তেমন মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দিতে পারি না।
তুমি কি রহিমকে কথাটা বলেছ?
জি, বলেছি। শুনে আপনাকে বলতে বলল।
ঠিক আছে, তুমি এখন যাও। ভেবে চিন্তে পরে তোমাকে জানাব।
বাতেন চলে যাওয়ার পর কবিরন বিবি রহিম ও আফ্রিদাকে ডেকে তার কথা বলে মতামত জিজ্ঞেস করলেন।
রহিম বলল, আম্মা, আপনি ভাল বুঝবেন কাকেন; তাতে আমার কোন দ্বিমত নেই।
বড়মা কিছু বলবে? কবিরন বিবি আফ্রিদাকে বড়মা বলে ডাকেন।
জি না আম্মা, আমার কিছু বলার নেই। তবে নাদিমকে একবার জিজ্ঞেস করলে ভাল হয়।
নাদিম কি তার কোন আত্মীয়ের বা অন্য কোন মেয়েকে পছন্দ করে?
এ ব্যাপারে সে আমাকে কোন দিন কিছু বলে নি। আমার মনে হয়, সে এসব নিয়ে এখনও মাথা ঘামায়নি।
তোমরা এবার যাও। এসব কথা নিয়ে কারো সঙ্গে আলাপ করো না। আর নাদিমকেও কিছু বলল না। যা বলার তাকে আমি বলব।
কয়েকদিন পরে কবিরন বিবি সব ছেলেদের সাথে আলাপ করে বাতেনকে ডেকে বললেন, তুমি দুচার দিনের মধ্যে প্রেমতলী যাও। গোপনে গ্রামের পাঁচজনের কাছে শিহাবদের নানিয়েল ও দাদিয়েলদের খোঁজ-খবর নাও। উভয় বংশের লোকজন কোন গর্হিত কাজ করেছে কিনা, কেউ সুধখোর ও মদখোর ছিল কিনা, কোন মেয়ে বংশের মুখে কলঙ্ক দিয়েছে কিনা সব কিছু জানার চেষ্টা করবে। যদি এইসব তাদের মধ্যে কেউ করে না থাকে, তা হলে শিহাবকে শুধু তার মেয়েকে নিয়ে আসতে বলবে। আমি কাজটা গোপনে করতে চাই। পরে তারা ধুমধাম করে যা করতে চায় করবে।
বাতেন বলল, ঠিক আছে চাচি, তাই হবে বলে ওনার কাছ থেকে চলে এল।
একদিন কবিরন বিবি নাদিমকে ডেকে পাঠালেন।
নাদিম এসে বলল, আমাকে ডেকেছেন দাদি?
কবিরন বিবি বললেন, হ্যাঁ ভাই, বস। তোমার সঙ্গে কথা আছে।
নাদিম দাদির পাশে বসে বলল, কি কথা বলবেন বলুন।
তুমি উপযুক্ত হয়েছ, এবার আমি তোমার বিয়ে দিতে চাই।
বিয়ের কথা শুনে নাদিম লজ্জা পেয়ে মথা নিচু করে বলল, এ ব্যাপারে আমাকে বলছেন কেন? আব্বা-আম্মাকে বলুন। তবে আমার ইচ্ছা-বলে থেমে গেল।
কি হল, থামলে কেন? বল তোমার কি ইচ্চা? আমি কিন্তু একটা ভাল মেয়ের খোঁজ পেয়ে লোক লাগিয়েছি। যদি সবকিছু মনের মতো হয়, তা হলে কয়েকদিনের মধ্যে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করব। তোমার আব্বা, আম্মা ও চাচাদেরকে জানিয়েছি। তারাও তোমাদের বিয়ে দিতে চায়। তাই তোমার মতামত জানার জন্য ডেকেছি।
আপনারা যা করবেন তাতে আমার কোনো অমত নেই। তবে আমার ইচ্ছা, ভালো বংশের কোন গরিব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করব।
কেন দাদু? বড়লোকের মেয়েরা কি ভাল না? হয়তো তাদের মধ্যে অনেকে ধর্মীয় শিক্ষা না পেয়ে একটু-আধটু খারাপ হতে পারে। তাই বলে সবাই খারাপ, একথা ভাবছ।
কেন?
না দাদি, বড়লোকের মেয়েরা খারাপ একথা বলছি না। আমার চিন্তাধারাটা একটু অন্যরকম।
বল, কি তোমার চিন্তাধারা?
বড়লোকের মেয়েরা যেমন বেশি আরামপ্রিয় হয় তেমনি খাওয়া-পরার ব্যাপারেও বাছ-বিচার করে। সে মেয়েকে যদি স্বামীর ঘরে এসে পরিশ্রম করতে হয় অথবা খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদ বাপের বাড়ির তুলনায় নিম্নমানের হয়, তা হলে অনেক দুঃখ পায়। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে হয়ত নিজের ভাগ্যের কথা মনে করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে; কিন্তু মনের দুঃখটা তার চিরসাথী হয়ে থাকে। ফলে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী ও বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে ঝগড়া করে। কাউকে সে খুশি মনে গ্রহণ করতে পারে না। তখন সংসারে অশান্তি নেমে আসে। অপরপক্ষে যদি কোন ভাল বংশের গরিব মেয়েকে বিয়ে করা যায়, তা হলে মেয়েটা বাপ-মার ঘরে যা খেয়েছে। পরেছে তার চেয়ে স্বামীর বাড়িতে ভাল খাওয়া-পরা পেয়ে খুব শান্তি পায় এবং শ্বশুর বাড়ির সবাইকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। এরা সাধারণত পরিশ্রমী ও খুব স্বামীভক্ত হয়। আমি মনে করি, প্রত্যেক বাপ-মার উচিত মেয়েদেরকে বিলাসিতায় আরামপ্রিয় না করে মানুষ করা।
তোমার চিন্তাধারাটা মন্দ নয়। তবে কি জান ভাই, সুখ-শান্তি তকদিরের ব্যাপার। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরিবদের চালচলন খুব নিম্নমানের হয়। তাদের। মনমানসিকতাও নিম্নমানের। তা ছাড়া প্রত্যেক বংশের মান-সম্মান বলে একটা কথা আছে। সব থেকে উত্তম হল সমপর্যায়ে আত্মীয়তা করা।
এটা অতি সত্য কথা আপনি বলেছেন।
তা তুমি তেমন কোন মেয়ের সন্ধান পেয়েছ নাকি?
না দাদি, আমি ওসব ব্যাপার নিয়ে এখনও কোন চিন্তা করিনি। আপনাকে শুধু আমার মনের ইচ্ছাটা জানালাম।
নাদিম দাদির কাছ থেকে মায়ের কাছে এসে বলল, দাদি আমার বিয়ের ব্যবস্থা। করছেন, এ ব্যাপারে তুমি কি কিছু জান?
আফ্রিদা বলল, তোর মেজ চাচা তার বন্ধুর মেয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। তুই কার কাছে শুনলি?
একটু আগে দাদি আমার মতামত জিজ্ঞেস করলেন।
কি বললি?
বললাম, আপনাদের মতামতই আমার মত।
আফ্রিদা ছেলেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
কয়েকদিন পর বাতেন ছোট চাচির কথামতো প্রেমতলী গিয়ে শিহাবদের বাড়িতে থেকে গোপনে গ্রামের লোকজনদের কাছে সবকিছু খোঁজ-খবর নিল। কোন দোষ পেল। না। শিহাব তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেছে। দুতিন দিন থেকে শিহাব ও তার স্ত্রীকে বিয়ের কথা বলে শিহাবকে ও তার মেয়ে সাজেদাকে নিয়ে ফিরে এল।