আয়মন ছেলেকে সাজেদার সঙ্গে নিরিবিলিতে গল্প করতে আগে অনেকবার দেখেছে। তখন কিছু না বললেও মনে মনে অসন্তুষ্ট হয়েছে। আজ তাদের অট্টহাসি শুনে খুব রেগে গিয়ে রুমের বাইরে ছেলেকে ডেকে বেশ রাগারাগি করে বলল, তুই তোর ভাবির সঙ্গে অত ইয়ার্কি করসিস কেন? বেহায়ার মতো অত হাসাহাসিই বা করছিস কেন? তোর বাপ-চাচারা দেখলে কি মনে করবে। সাজেদাকে দরজার কাছে আসতে দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমাকেও বলি বৌমা, ঘরের বৌ হয়ে এরকম হাসতে তোমার লজ্জা করে না, তোমার শ্বশুররা শুনলে কি মনে করবে? লেহাজ-তামিজ বলতে তোমার কি কিছুই নেই? তারপর ছেলেকে বললেন, তুই লেখাপড়া করে অমানুষ হচ্ছিস। আর কোনদিন বৌমার সঙ্গে ইয়ার্কি-ফাজলামি করবি না। চলে যা এখান থেকে।
ইলিয়াস বলল, আম্মা ভাবির সঙ্গে একটু হাসিঠাট্টা করলে দোষ হবে কেন?
হাসিঠাট্টারও একটা সীমা আছে।
আমরা কি সীমা ছাড়িয়ে গেছি?
তুই কলেজে পড়ে বহুৎ বেয়াদব হয়েছিস। মায়ের মুখে মুখে তর্ক করছিস।
সাজেদা মেজ শাশুড়ীর কথায় খুব রেগে গিয়ে বলল, মেজ মা, আপনাদের মন এত নীচ তা জানতাম না।
সাজেদার কথা শুনে আয়মনের মাথা গরম হয়ে গেল। বেশ জোর গলায় বলল, তুমি বৌ হয়ে শাশুড়ীর দোষ ধরছ, এতবড় সাহস তোমার? যোয়ান দেবরের সঙ্গে হাসাহাসি ঢলাঢলি করা খুব বাহাদুরি, তাই না? নাদিম ঘরে আসুক তোমার বেহায়াপনা বের করব।
সাজেদা আরো রেগে গিয়ে বলল, সে আমার কি করবে?
নাদিম যখন তার মাকে সাজেদাকে তালাক দেয়ার কথা বলেছিল তখন আয়মন সেখান থেকে যাওয়ার সময় সে সব কথা শুনেছিল। এখন সে কথা মনে পড়তে রাগের মাথায় বলে ফেলল, একবার তো নাদিম তোমাকে তালাক দিতে চেয়েছিল, বড় বুবু বুঝিয়েছে বলে তোমাকে নিয়ে ঘর করছে। এইসব শুনলে যা করবে তা বুঝতে পারবে।
সাজেদা বলল, দিক না তালাক, আপনাদের ছেলে যদি আমাকে তালাক দিয়ে নতুন বৌ পায়, তা হলে আমারও নতুন স্বামী পেতে অসুবিধে হবে না।
আফ্রিদা রান্না করছিল। তাদের কথা কাটাকাটি শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি সেখানে আসার সময় বৌয়ের কথা শুনে যেমন খুব অবাক হল তেমনি রেগে গেল। কাছে এসে সাজেদাকে ধমক দিয়ে বলল, এ কি কথা বলছ? এত বড় স্পর্ধা তোমার? ছিঃ ছিঃ তুমি লেখাপড়া জানা মেয়ে হয়ে এই কথা বলতে পারলে? শাশুড়ীদের সঙ্গে কি রকমভাবে কথা বলতে হয় তাও জান না?
সাজেদা শাশুড়ীর কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে বলল, আমরা লেখাপড়া করেছি বলে আমাদের মন অত নীচ নয়। আপনারা যদি লেখাপড়া করতেন তা হলে আপনাদের মন অত নীচ হত না।
আফ্রিদা বৌয়ের সাহস দেখে খুব রেগে গেল। বলল, আর তুমি বুঝি কলেজে ইউনিভার্সিটির সব ডিগ্রী নিয়ে এসে বেহায়াপনা ও বেয়াদবি করে উচ্চ মনের পরিচয় দিচ্ছ? এতদিন ছেলেমানুষ ভেবে তোমার অনেক অন্যায় ক্ষমা করেছি, আর নয়। এবার মুখ সামলে কথা বলো, নচেৎ-বলে কথাটা আর রাগে শেষ করতে পারল না।
নাদিমের ছোট ভাই রউফ বাতেনের স্ত্রী রহিমাকে গিয়ে বলল, বড় চাচি জলদি চল, ভাবী, আম্মার সঙ্গে ঝগড়া করছে।
রহিমা শুনে তাড়াতাড়ি করে যখন এল তখন সাজেদা বলছে, নচেৎ কি করবেন? মারবেন? আগের যুগে মুর্থ শাশুড়ীরা বৌদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে কিন্তু এখন আর সেসব চলবে না।
রহিমাও এতদিনে স্বামীর বন্ধুর মেয়ের স্বভাব-চরিত্র জেনেছে। কাছে এসে তার একটা হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, চুপ কর বেয়াদব মেয়ে। তুমি বৌ হয়ে শাশুড়ীদের দোষ ধরে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করছ? তোমার সাহসের বলিহারি। শাশুড়ীর মুখের উপর কথা বলতে তোমার এতটুকু বাঁধল না? তুমি কি জান তোমার শাশুড়ীর পরিচয়? এখানকার সব থেকে ধনী লোকের মেয়ে। ম্যাট্রিকে পাঁচটা লেটার নিয়ে ফাস্ট ডিভিশানে পাস করেছে। এই বংশের শ্রেষ্ঠ গৃহিণী, আমরা ছোট-বড় সবাই তাকে মেনে চলি। আর তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে দুদিন বৌ হয়ে এসে তার সঙ্গে ঝগড়া করছ? আজ পর্যন্ত সে কারো সঙ্গে ঝগড়া করা তো দূরের কথা, কথা কাটাকাটি পর্যন্ত করে না। কেউ তার গলার আওয়াজ শুনেনি। আজ প্রথম আমরা শুনলাম। তোমার বাপকে খবর দিয়ে আনিয়ে এর একটা বিহিত করব। নাদিম যে ধরনের ছেলে, এসব শুনলে তোমাকে আস্ত রাখবে না।
সাজেদা রহিমাকে চাচি আম্মা বলে ডাকে, তাকে একটু ভয়ও করে। তার কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে গেল। আর কিছু না বলে চুপ করে রইল।
রহিমা তাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে অনেক বোঝাল, শেষে শাশুড়ীর ও মেজ শাশুড়ীর পায়ে ধরে মাফ চাইতে বলে চলে গেল।
নাদিম ছাত্র পড়িয়ে ফিরে এলে আয়মন ভাসুরপেপাকে ঘটনাটা জানাল।
শুনে নাদিম অত্যন্ত রেগে গেল। স্কুলে পরীক্ষা চলছে, তাকে যেতেই হবে। তাই রাগটা সামলে নিয়ে বলল, আমার এখন সময় নেই। স্কুলে যেতে হবে। স্কুল থেকে ফিরে যা করার করব।
নাদিম গোসল করে ভাত খেয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় সাজেদাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি মেজ মা ও আম্মার সঙ্গে নাকি ঝগড়া করেছ?
সাজেদা ভেবে রেখেছিল, স্বামী ফিরলে তাকে সত্য-মিথ্যা করে ঘটনাটা বলে নিজের সাফাই গাইবে। কিন্তু তার আগেই শাশুড়ী ছেলেকে জানিয়েছে জেনে খুব রেগে গেলেও নরম সুরে বলল, হ্যাঁ,করেছি। কিন্তু কেন করেছি তা কি শুনেছ? আমি ইলিয়াস ভাইয়ের সাথে একটু কথা বলছিলাম বলে…