আয়মন সাংসারিক ব্যাপারে অনেক সময় সামান্য কারনে পায়ের উপর পা দিয়ে সব জাদের সঙ্গে ঝগড়া করে। সব জায়েরা মাতলেও আফ্রিদা কোনোদিন মাতেনি এবং রাগও করেনি। অনেক সময় বড় জায়ের সঙ্গে শুধু শুধু ঝগড়া করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আফ্রিদা যখন বেঁচে তার সঙ্গে কথা বলতে যায় তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাফ চেয়ে নেয়। আসলে আয়মনের বুঝশক্তি কম আর মাথা গরম। এখন বড় জা যখন হিসাব-নিকাশ ও সিন্দুকের চাবি ফাহমিদাকে দিতে চাইল তখন সে স্বভাবগত কারণে হিংসায় জ্বলে উঠেছিল। স্বামীর কথা শুনেও খুব রেগে গিয়েছিল। তাই আফ্রিদা তার মতামত জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলতে পারেনি। শেষে চাবির গোছা হাতে দিয়ে বড় জা যে কথা বলল তা শুনে ভুল বুঝতে পারল। আরও বুঝতে পারল, সারা বছর জমা খরচের হিসাব-নিকাশ রাখা খুব কঠিন ব্যাপার। তা না হলে বড় বুবু এই কাজ অন্যকে দিতে চাচ্ছে কেন? নিজের ভুল বুঝতে পেরে চাবির গোছা আফ্রিদার হাতে ফেরত দিয়ে বলল, অত ঝক্কি-ঝামেলার কাজ আমার দ্বারা হবে না। আমাদের সবার মধ্যে ছোটই উপযুক্ত। তুমি এটা ওকেই দাও।
নাদিম বলে উঠল, মেজ মা, তুমি ঠিক কথা বলেছ। ছোট মার মতো মেয়েই এই কাজ ঠিকমতো করতে পারবে। তাই তো আমি আম্মাকে প্রথম সমর্থন করি।
কুদ্দুস ও নাদিম সাত বছরের ছোট-বড়। চাচা-ভাইপো যখন এক সঙ্গে থাকে তখন একটু-আধটু ইয়ার্কি-ফাজলামিও করে। কুদ্দুস এতক্ষণ বড় ভাবির কানমলা খাবার ভয়ে উঠে গিয়ে উঠোনের একদিকে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিল। নাদিমের কথা শুনে এগিয়ে এসে বলল, ভাইপো বি.এ. পাস করে মাস্টারি করলে কি হবে, বুদ্ধিশুদ্ধি এখনও হল না। তারপর নাদিমের নাম ধরে বলল, তুই যে ছোট মার অত সাপোর্ট করছিস, তার কোয়ালিফিকেশান জানিস?
ছোট চাচার বৌ দেখতে নাদিমও গিয়েছিল। সে সময় জেনেছিল ম্যাট্রিক ফেল। তাই বলল, কেন জানব না, ছোট মা তো ম্যাট্রিক ফেল।
কুদ্দুস বলল, দুর বোকা, কার কাছে শুনেছিস? তোর ছোট মাকে জিজ্ঞেস করে দেখ, ক্লাস এইট পাস।
আফ্রিদা রেগে উঠেকুন্দুসকে বলল, নাদিমের বুদ্ধি শুদ্ধি হয়নি, আর তুই বুঝি খুব জ্ঞানী হয়েছিস? তারপর স্বামী ও দেবরদের উদ্দেশ্য করে বলল, তোমরা যদি ওর কান মলতে না পার, তা হলে ধরে নিয়ে এস, আমি ওর কান মলে দেখব ও কতটা জ্ঞানী হয়েছে।
কুদ্দুস তাড়াতাড়ি বলে উঠল, কথাটা বলে অন্যায় করে ফেলেছি। মাফ করে দাও বড়ভাবি। আর কখনও এরকম অন্যায় করব না।
আফ্রিদা বলল, কথাটা মনে রাখবি। তারপর ছোট জায়ের আঁচলে চাবির গোছা বেঁধে দিয়ে বলল, আমি বৌ হয়ে আসার ছমাস পর আম্মা যে কাজের ভার আমার উপর দিয়েছিলেন তা ঠিকভাবে পালন করতে পেরেছি কিনা আল্লাহ পাক জানেন। তোকে আমি আজ সেই কাজের ভার দিলাম। তুই আল্লাহকে হাজীর-নাজীর জেনে এই দায়িত্ব ঈমানদারীর সাথে পালন করবি।
ফাহমিদা অন্য জাদেরকে বড় বোনের মতো মনে করলেও বড় জাকে মায়ের মতো মনে করে। আঁচল গুছিয়ে গায়ে দিয়ে ভাসুরদেরকে, স্বামী ও জাদেরকে কদমবুসি করে বলল, আপনারা দোয়া করুন, আমি যেন বড়বুবুর কথামতো এই কাজ করতে পারি।
আফ্রিদা বলল, এবার সব যাও ঘুমিয়ে পড়। আবার তো সেহরী খেতে উঠতে হবে।
এরপর আর কেউ কিছু না বলে একে একে সবাই উঠে চলে গেল।
ঘুমাবার সময় কুদ্দুস স্ত্রীকে বলল, তুমি খুব ভাগ্যবতী। চৌধূরী বাড়ির ক্যাশের চাবি এখন তোমার হাতে। তারপর দুষ্টুমি করে বলল, যাক ভালই হল, মাঝে মাঝে তোমার কাছ থেকে টাকা ঝাড়া যাবে।
ফাহমিদা জানে তার স্বামী সব ভাইয়ের চেয়ে খুব হিসেবী। সংসারের উন্নতির দিকে তার খুব লক্ষ্য। তাই স্বামীর কথা শুনে বুঝতে পারল, দুষ্টুমি করছে। সে দুষ্টুমি করার ইচ্ছাটা চেপে রেখে অভিমান কণ্ঠে বলল, সবার সামনে আমি এইট পাস বলে অপমান করলে কেন?
কুদ্দুস খুব সরল ও সাদাসিধে। তাই তখন কোনো কিছু চিন্তা না করে বলে ফেলে বুঝতে পেরেছিল, কথাটা বলা ঠিক হয়নি। এখন স্ত্রীর কথা শুনে বলল, ভুল করে বলে ফেলেছি। তাই তো সবার সামনে মাফ চেয়েছি। তুমিও মাফ করে দাও।
ফাহমিদা বলল, যাও; স্বামী বলে মাফ করে দিলাম, কিন্তু টাকা ঝাড়ার কথা যে বললে সে গুড়ে বালি।
কেন?
টাকা ঝাড়তে হলে ক্যাশিয়ারকে তোষামোদ করে চলতে হবে। সে যা বলবে তক্ষুনি তা পালন করতে হবে।
কুদ্দুস স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলল, তা হলে এক্ষুনি হুকুম করে দেখ পালন করি কিনা।
শুধু আদর করলে কি আর কাজ হয়? তার সঙ্গে আরো কিছু করতে হয়।
সেই কাজটা কি বলে দেখ না করি কিনা।
এই দুষ্টু, সে কাজের কথা বুঝি মুখে বলা যায়?
না বললে বুঝব কি করে?
না যদি বুঝতে পার, তা হলে চুপচাপ শুয়ে পড় বলে ফাহমিদা স্বামীকে ঠেলে পাশ ফিরে শুয়ে বলল, এটাই আমার প্রথম হুকুম।
এতবড় শাস্তি দিতে পারলে?
না দিয়ে উপায় নেই। রোযার মাস মনে নেই বুঝি।
কুদ্দুস বলল, সরি, সে কথা আমার খেয়াল ছিল না।
.
বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা, একদিন সাজেদা মেজ শ্বশুরের বড় ছেলে ইলিয়াসের সঙ্গে খুব ইয়ার্কি করছিল আর হেসে হেসে উল্টে পড়ে যাচ্ছিল।
ইলিয়াস এ বছর কলেজে ভর্তি হয়েছে। আজ কলেজ বন্ধ। তাই সকালে নাশতা খাওয়ার পর সাজেদার ঘরে এসে গল্প করছিল। সাজেদার সাথে ইলিয়াসের বেশ ভাবসাব। প্রায়ই তারা অবসর সময়ে গল্প করে। সেদিন গল্প করতে করতে ইলিয়াস কলেজের একটা ঘটনা বলার সময় দুজনেই হাসছিল। কিন্তু সাজেদা একটু বেশি হাসছিল।