নাদিম আবার দুষ্টুমি করে বলল, জানি না বলেই তো জিজ্ঞেস করছি। জানলে তোমার সঙ্গে এতক্ষণ বকবক করতাম না।
সাজেদারও নাদিমের সৌন্দর্যপূর্ণ সুন্দর স্বাস্থ্য দেখে তার বিশ বছরের যৌবন, চাওয়া পাওয়ার আনন্দে অধীর হয়ে উঠল। তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকের উপর মাথা রেখে বলল, আমি জেনেও যে লজ্জায় বলতে পারছি না।
নাদিমও তাকে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলল, তুমি বলতে না পারলেও আমি পারি।
বিয়ের চার দিন পর শিহাব মেয়ে জামাই নিয়ে বাড়ি ফিরল। দুদিন পর খুব ধূমধামের সঙ্গে খানা করে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকদের খাওয়াল। সবাই জামাই দেখে খুব আনন্দিত।
শ্বশুর বাড়িতে এসে নাদিম সাজেদার আসল রূপ দেখে যেমন খুব অবাক হল তেমনি মনে মনে খুব শংকিত হয়ে পড়ল। সে বাপ-চাচাদেরকে তুমি করে বললেও মা, চাচি ও দাদির সঙ্গে তুই-তোকারি করে কথা বলছে। দোতলায় বারান্দা থেকে সবাইকে হুকুম করছে। আর একটা জিনিস নাদিম লক্ষ্য করল, ছোট-বড় সবাই যেন সাজেদাকে ভয় ভয় করছে। তার হুকুম মানার জন্য সবাই যেন তটস্থ হয়ে থাকে। এমন কি নাদিমকে খাওয়াবার সময়ও সে নিজে কোনো কিছু নিয়ে আসে না, বারান্দা থেকে অন্যকে নিয়ে আসতে বলে। তার কথা পালন করতে কেউ যদি দেরি করে, তা হলে ছোট হোক আর বড় হোক, তাকে খুব গরম মেজাজে কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দেয়। সাজেদার এহেন রূপ দেখে নাদিমের দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। চিন্তা করল, এরকম স্বভাবের মেয়েকে নিয়ে কি করে আমি সারা জীবন কাটাব? এইসব ভেবে নাদিমের মন খুব খারাপ হয়ে গেল।
নাদিমের সঙ্গে বন্ধু রিয়াজুল ও তার এক দুলাভাই এসেছিল। দুলাভাই দুদিন থেকে বাড়ি ফিরে গেছে, রিয়াজুল আছে। নাদিমের মন খারাপ দেখে সে জিজ্ঞেস করল, কি রে, তোর মন খারাপ কেন? বৌয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছে বুঝি?
নাদিম বলল,না রে, তুই যা ভাবছিস তা নয়, তবে-বলে থেমে গেল।
থামলি কেন, বল।
কি আর বলব, সবই আমার ভাগ্য।
ভাগ্যের হাতে আমরা যখন বন্দি তখন আর মন খারাপ করছিস কেন? কি হয়েছে বল।
নাদিম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, জানিস, ছেলেবেলা থেকে যে আশা আকাঙ্খা পোষণ করে রেখেছিলাম, তা স্বপ্নই রয়ে গেল।
রিয়াজুল বলল, মানুষ চেষ্টার দ্বারা স্বপ্নকে সফল করে। তোর কি স্বপ্ন ছিল শুনি।
নাদিম পাত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে দাদিকে যে কথা বলেছিল, সেকথা এবং সাজেদার এখানকার সকলের প্রতি ব্যবহারের কথা বলে বলল, আমার মনে হয় আমি দাম্পত্য জীবনে কোনোদিন সুখ-শান্তি পাব না।
রিয়াজুল বলল, আরে দূর, দুদিন বৌয়ের সঙ্গে চলে সারাজীবনের কথা বলছিস কি করে? সব মেয়েরাই বাপের বাড়িতে একটু বেপরোয়া হয়ে চলে। স্বামী ঘরে কি আর সেরকম করতে পারে? তা ছাড়া তোর বৌকে নিজের মতো করে গড়ে নিবি। তুই তো হাদিস-কালাম অনেক জানিস। সেসব বলে তাকে নিজের মতো করে নেয়ার চেষ্টা করবি।
নাদিম বলল, তা তো করবই। কিন্তু তবু যেন মনে কি রকম একটা আতঙ্ক লাগছে। বড়লোকের মেয়েদের সম্বন্ধে যতটুকু জানি, সাজেদা যদি সে ধরণের হয় তা হলে আমার আশা কোনদিন পূরণ হবে না।
রিয়াজুল বলল, তুই বড় সেন্টিমেন্টাল। এত সেন্টিমেন্টাল হলে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি হয় না। তুই কি এমন স্বামী-স্ত্রী দেখাতে পারবি, যাদের মধ্যে কোনোদিন মনোমালিন্য বা ঝগড়াঝাটি হয় না? নাদিম কিছু বলছে না দেখে আবার বলল, তুই কেন-কেউই দেখাতে পারবে না, থাকলে তো দেখাবে। তোর বৌ খুব সুন্দরী এবং বড়লোকের মেয়ে। সব ছেলেই এরকম মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। মেয়েরা বাপের বাড়িতে যাই থাকুক না কেন, স্বামীর বাড়িতে গেলে ঠিক হয়ে যায়।
নাদিম বলল, অনেক ক্ষেত্রে তোর কথা ঠিক হলেও সব ক্ষেত্রে নয়। কম হলেও অনেকে এমন আছে যারা ঐ রকম মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। আমি ঐ কম দলের মধ্যে।
তা হলে তুই একে বিয়ে করলি কেন?
ভাগ্য করিয়েছে।
তা হলে এখন আফসোস করছিস কেন? ভাগ্যকে মেনে নে।
তা তো নিতেই হবে। কিন্তু ভাগ্যের আঘাত বড় নির্মম হয়।
মানুষ চেষ্টার দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
ততটুকু পারে যতটুকু তার ভাগ্যে থাকে।
তাই যদি জানিস, তাহলে মন খারপ করছিস কেন? আমি একটা কথা বলি শুন, ভাগ্যে যা আছে তা যখন হবেই তখন আর তাকে নিয়ে চিন্তা না করে ডু ইউর ডিউটি, খাও-দাও আর বৌকে নিয়ে মৌজ কর।
নাদিম হেসে উঠে বলল, তুই বুঝি তাই করিস?
তা করি বই-কি। তোর মতো আমি অত চিন্তা করে কোনো কিছু করি না।
তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তুই যে বললি, ডু ইউর ডিউটি, সেটা কি তুই ঠিক মতো পালন করিস? খাচ্ছিস-দাচ্ছিস দোকানদারি করছিস, আর বৌকে নিয়ে ফুর্তি করছিস-এখানেই কি ডিউটি শেষ? পরকাল বলে যে একটা কথা আছে সেখানকার কথা চিন্তা করে কিছু করা-সেটাও যে ডিউটির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে; সেদিকে খেয়াল করেছিস? শুধু দুনিয়ার ডিউটি পালন করার জন্য আল্লাহপাক আমাদেরকে পাঠাননি। আখেরাতের ডিউটির জন্যও পাঠিয়েছেন।
তোর কথা অস্বীকার করব না। সব মানুষ কি সব ডিউটি পালন করতে পারে? না পেরেছে?
সব মানুষ কি করে না করে বলছিস কেন? আগে নিজে কর তারপর অন্যদের কথা বলবি। অন্যরা অন্যায় করলে তুই করবি কেন?