কুদ্দুসের স্ত্রী ফাহমিদা বড় জায়ের সঙ্গে বসে পান খাচ্ছিল। সে নাদিমকে আসতে দেখে উঠে গিয়ে জুলেখাকে বলল, বৌ এবার ওদেরকে ঘরের ভিতর থেকে ডেকে নিয়ে সব চলে যাও, নাদিম এসেছে।
জুলেখা সবাইকে ডেকে বিদায় করে দিয়ে নাদিমের কাছে এসে বলল, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? বিয়ের দিন কেউ বুঝি এত রাত বাইরে থাকে? চল, ঘরে চল। নাদিমের। রুমেই বাসরশয্যা হয়েছে। জুলেখা তাকে সাথে করে রুমের দরজার কাছে এসে বলল, ভিতরে যাও। দোয়া করি আল্লাহ যেন আজকের রাত তোমাদের জন্য শুভ করেন, আনন্দের করেন, দুজন দুজনকে চিনবার তওফিক দেন। তারপর সে চলে গেল।
নাদিম কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তক্তপোষের কাছে। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে সাজেদার দিকে তাকিয়ে রইল।
সাজেদা তক্তপোসের উপর থেকে নেমে নাদিমকে কদমবুসি করল।
নাদিম তাকে দুহাত দিয়ে ধরে দাঁড় করিয়ে মাথায় চুমো খেয়ে বলল, আল্লাহ তোমাকে তোমার নামের অর্থমতো ধার্মিক করুক। তারপর ঘোমটা সরিয়ে চিবুক ধরে বেশ কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
সাজেদা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। বেশ কিছুক্ষণ পর কম্পিত পাপড়ি খুলে বলল, এতক্ষণ ধরে কি দেখছেন?
নাদিম বলল, আল্লাহপাকের এক অপূর্ব সৃষ্টি দেখছি। সত্যি, তিনি তোমাকে। সৌন্দর্যের রানী করে গড়েছেন।
ছোটবেলা থেকে রূপের প্রশংসা শুনে শুনে সাজেদার বেশ গর্ব ছিল। আজ স্বামীর মুখে সেই প্রশংসা শুনে আরো গর্বিত হল। স্বামীকে খুশি করার জন্য বলল, আপনিও কম কিসে।
নাদিম বলল, আপনি করে না বলে তুমি করে বল। তারপর তাকে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে তার নমর নিটোল হাত দুটো ধরে বলল, তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই, তুমি বিরক্ত বোধ করবে না তো?
সাজেদা বলল, না করব না, বল কি বলবে।
নাদিম বলল, জেনেছি তুমি ধনী ঘরের মেয়ে। খুব আদরে মানুষ হয়েছ। আমরা কিন্তু মধ্যবিত্ত। এখানে তোমার হয়ত সবকিছুতে বেশ একটু অসুবিধে হবে। সেগুলো মেনে নেয়ার চেষ্টা কর। আর আমার আব্বা-আম্মা এবং চাচা-চাচীদেরকে আপন। আব্বা-আম্মা ও চাচা-চাচি মনে করবে। তাদের সঙ্গে ঝগড়া তো দূরের কথা সামান্য কথা কাটাকাটিও করবে না। বিশেষ করে আম্মার সঙ্গে কোনো বেয়াদবি করো না। আম্মা আমাদের পুরো ফ্যামিলির বড় মা। ছোট-বড় সবাই তাকে মেনে চলে, ভক্তি শ্রদ্ধা করে। তুমিও তাই করবে। যা বলবে বিনা দ্বিধায় তৎক্ষণাৎ তা পালন করবে। নানাদের অবস্থার তুলনায় আমরা কিছুই না। মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি এবং আমার জ্ঞান। হওয়ার পর থেকে আম্মাকে যতটুকু জেনেছি, তার মতো মেয়ে পৃথিবীতে বিরল। ঐ যে দেখছ আলমারী, ওতে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর বই আছে। সব আম্মা পড়েছে। তুমিও অবসর সময়ে পড়বে। প্রচুর জ্ঞান পাবে। আজ আর বেশি কিছু বলে বিরক্ত করব না। এবার ঘুমান যাক বলে নাদিম বালিশে মাথা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।
সাজেদা টাউনঘেঁষা মেয়ে। প্রেমতলী গ্রাম রাজশাহী টাউনের পাশে। তার উপর ম্যাট্রিক পাস। খুব চালাক-চতুর ও বাকপটু এবং হঁচড়েপাকা। চাচাতো ভাবিদের কাছে এবং যে সব চাচাতো বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে, তাদের কাছ থেকে স্বামী-স্ত্রীর অনেক ঘটনা শুনে শুনে পাকা হয়ে গেছে। তার উপর নানা রকম আজেবাজে উপন্যাস পড়ে আরো ঝুনো হয়েছে।
নাদিম ঘুমোবার কথা বলতে বলল, আজকের রাতে কেউ ঘুমায় নাকি? এই শুভরাত তো মানুষের জীবনে মাত্র একবার আসে।
নাদিম এমনি কথার ছলে ঘুমাবার কথা বলেছিল। সাজেদার কথা শুনে ভাবল, সে নিশ্চয় বাসর রাত সম্বন্ধে অনেক কিছু জানে। কতটা জানে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার কথা ঠিক; এই রাত মানুষের জীবনে একবারই আসে; কিন্তু শুধু শুধু রাত জেগে কি লাভ? তার চেয়ে ঘুমালে অনেক লাভ।
জেগে থাকলেও লাভ আছে।
কি লাভ যদি বল তা হলে জেগে থাকতে পারি।
সে লাভ মুখে বলা যায় না।
যেভাবে বলা যায় সেভাবে বল।
মেয়েরা সেভাবেও বলতে পারে না।
কোন ভাবেই যখন বলতে পারবে না তখন আর সেই লাভের কথা না তোলাই ভালো ছিল।
নাদিমের কথা শুনে সাজেদা ভাবল, সে কি তা হলে স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জানে না? সাজেদা জেনেছে, স্বামীরা বাসর রাতে স্ত্রীর দেহ ভোগ করার জন্য নানা রকম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে কাজ হাসিল করে। সে ব্যাপারে নাদিমের কোনো আগ্রহ নেই দেখে বেশ অবাক হল। হঠাৎ তার চাচাতো ভাবি কুলসুমের কথা মনে পড়ল, তার চাচাতো ভাই ইউনুস বাসর রাতে কেমন কৌশলে তাকে ভোগ করেছিল; সেই কথা চিন্তা করতে লাগল।
সাজেদার মতো অপূর্ব রূপসীকে স্ত্রীরূপে পেয়ে নাদিমের পঁচিশ বছরের যৌবন ক্ষুধা বাধভাঙা বন্যার পানির মতো সমস্ত শরীরে ছুটে চলেছে। এতক্ষণ লজ্জা ও সম্মানের ভয়ে এবং তাকে জানার জন্য নিজেকে কঠোরভাবে দমন করে রেখেছিল। সাজেদার কথা শুনে বুঝতে পারল, দুজনেরই অবস্থা এক। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল, কিছু বলছ না কেন? চুপ করে থাকলে তো ঘুমিয়ে পড়ব।
সাজেদা তার কথা শুনে চিন্তা করল, মেয়েছেলে হয়ে এতটা যা বলেছি, তা অন্য কেউ শুনলে বেহায়া ভাববে। আর কি বলবে, ভাবতে লাগল।
নাদিম এবার দুষ্টুমি করে বলল, ঠিক আছে, কিছুই যখন কলার নেই তখন ঘুমিয়ে পড়ছি।
সাজেদা চিন্তা করে চলেছে, সে সত্যি কিছু জানে না, না জেনেও না জানার ভান করছে? বলল, তুমি তো আলমারী ভর্তি বই পড়ে কতকিছু জেনেছ, আর আজকের রাতের সামান্য ব্যাপারটা জান না?