কি বলতে হবে মাতব্বর তাকে বুঝিয়ে বললেন।
মাতব্বরের কথা শুনে ফজলুর মন খুশীতে নেচে উঠল। বলল, ঠিক আছে হুজুর, তাই বলব। তারপর হাঁটতে শুরু করে ভাবল, সায়রার সঙ্গে দেখা করে ঘরে যাবে। আবার ভাবল, সে তো এখন ঘরে নেই। কাজ থেকে সন্ধ্যের সময় আসে। তবু মনের তাগিদে সায়রাদের ঘরে এসে তাকে দেখে বলল, আজ কাজে যাও নি?
সায়রা ফজলুর উপর ভীষণ রেগেছিল। তার কথার উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে টাকার পুঁটলীটা এনে তার হাতে দিয়ে বলল, এখুনি চলে যাও। আর কোনো দিন আসবে না।
সায়রা টাকা ফেরত দিতে ও তার কথা শুনে ফজলুর মন খুব খারাপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে না পেরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, যখন দরকার হবে তখন চেয়ে নেব বলেছি। এখন দিচ্ছ কেন? আর আমাকেই বা আসতে নিষেধ করলে কেন?
সায়রা রাগ চেপে রেখে বলল, গ্রামের লোকজন তোমাকে নিয়ে আমার নামে বদনাম করছে শোন নি?
ফজলু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, ও এই কথা? যা সত্য, গ্রামের লোকজন সেটাই বলছে। এটা আবার বদনাম হবে কেন?
সত্য আবার কি? তুমি কি মনে করেছ? আমি তোমার সঙ্গে নিকে বসব?
হ্যাঁ, আমি তাই মনে করেছি।
তা হলে তুমিই গ্রামে কথাটা প্রচার করেছ?
আমি করতে যাব কেন? গ্রামের লোকজনের কি চোখ নেই। রোজ রোজ তোমার ঘরে দিন রাত আসি, তা কি তারা দেখতে পায় না? মাতব্বর হুজুরের কানেও কথাটা গেছে। আজ ফেরার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, কথাটা সত্য। শুনে খুশী হয়ে বললেন, তা হলে দু’একদিনের মধ্যে তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সবকিছু যে মাতব্বরের পাতা ফাঁদ তা সায়রার দৃঢ় বিশ্বাস হল। নিজের বোকামির জন্য রাগে ও দুঃখে সায়রা কেঁদে ফেলল। অল্পক্ষণের মধ্যে সামলে নিয়ে বলল, তুমি যা ভেবেছ, তা ঠিক নয়। আমি তোমাকে ভায়ের মতো মনে করে তোমার সাহায্য নিয়েছি। যদি জানতাম মাতব্বরের কথামতো কাজ করছ, তা হলে অসুখে মরে গেলেও তোমার সাহায্য নিতাম না।
ফজলু বলল, মাতব্বরের কথা বাদ দাও। আমি তোমাকে নিকে করব, তুমি রাজি আছ কিনা বল?
সায়রা খুব রাগের সঙ্গে বলল, আমাকে যে নিকে করবে, খাওয়াবে কি? ভিক্ষে করে মায়ে পুতে দু’বেলা খেতে পাও না। তা ছাড়া তোমার যা সুরৎ, তোমার দিকে চাইতেই ঘেন্না লাগে। চলে যাও এখন থেকে। আবার যদি আস, তা হলে কি করি তখন দেখবে।
এবার ফজলুও খুব রেগে গেল। চড়া গলায় বলল, এই মাগি, তেজ দেখাবি। তোর তেজ না ভেঙেছি তো আমার নাম ফজলু না।
সায়রাও চড়া গলায় বলল, তেজ ভাঙতে এসে দেখিস, মাতব্বরের মতো তোর অবস্থা না করিতো আমার নামও সায়রা না।
এই কথা শুনে ফজলু চুপসে গেল। আর কিছু না বলে চলে গেল।
পরের দিন ভিক্ষে করতে বেরিয়ে ফজলু মাতব্বরের সঙ্গে দেখা করে গতকাল সায়রা যা কিছু বলেছিল বলল।
মাতব্বর রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ঐ মাগির কত তেজ দেখব। তুই চিন্তা করিস না। যেমন করে হোক তোর সঙ্গে ওর নিকে দেবই। তুই এখন যা। ভেবে দেখি কিভাবে কি করা যায়।
.
সায়রার কথা শুনে ও তার হাতের চড় খেয়ে আসগর প্রতিজ্ঞা করেছিল, যেমন করে হোক প্রতিশোধ নেবে। কিভাবে নেবে ঠিক করতে না পেরে মাতব্বরের কাছে গেল।
ফজলু চলে যাওয়ার পর মাতব্বর কিভাবে তার সঙ্গে সায়রার নিকে দেবেন বৈঠক খানায় বসে চোখ বন্ধ করে চিন্তা করছিলেন?
আসগার এসে সালাম দিল।
মাতব্বর চোখ খুলে আসগরকে দেখে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, কি খবর ভাতিজা?
খবর আর কি? গ্রামের লোকজন ফজলু আর সায়রাকে নিয়ে যেসব কথা বলছে, তা কি আপনার কানে পড়ে নি?
পড়েছে। তাই তো চিন্তা করছিলাম কি করা যায়?
আপনি হলেন গ্রামের মাথা। আপনি যা করবেন সেটা সবাই মানতে বাধ্য।
আমি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একদিন গ্রামের লোকজনদের ডেকে ওদের রিচারের ব্যবস্থা করব এবং সবার মতামত নিয়ে বিচারের রায় ঘোষণা করব।
হ্যাঁ চাচা, যত তাড়াতাড়ি পারেন সেই ব্যবস্থাই করুন।
দু’একদিনের মধ্যে কবর। তুমি এখন যাও। বিচারের রায়ের ব্যাপারে আমি এখন চিন্তা করব।
৩-৪. মাতব্বর সাহেবের বৈঠকখানা
০৩.
আজ মাতব্বর সাহেবের বৈঠকখানার সামনের চাতালে সায়রা ও ফজলুর বিচার হবে। এশার নামাযের পর গ্রামের লোকজন এসেছে। অনেক বয়স্ক মেয়েরাও এসেছে। তারা বৈঠকখানার ভিতরে বসেছে।
মসজিদের ইমাম সাহেবকে খবর দেয়া হয়েছিল। তিনিও এসেছেন। ফজলু মাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। সায়রা এখনো আসে নি। তাকে ডাকতে একজনকে পাঠানো হয়েছে। মাতব্বর ইমাম সাহেবকে ঘটনাটা বলা শেষ করেছেন, এমন সময় সায়রা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ছেলের হাত ধরে এসে বৈঠকখানার একপাশে দাঁড়াল।
তাকে দেখে একজন বলে উঠল, মাতব্বর সাহেব, এবার বিচার শুরু করুন।
মাতব্বর ফজলুকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, গ্রামের লোকজন বলছে মঈন সেখের বিধবা বৌ–সায়রার সঙ্গে তোর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে, কথাটা কি সত্য?
ফজলু অবৈধ সম্পর্ক কি জিনিস জানে না। তবু মাতব্বরের শেখান কথা বলল, হ্যাঁ সত্য।
এটা ইসলামে নিষেধ। তাই তোকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
আপনারা যা শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেব।
মাতব্বর এবার সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই ব্যাপারে তুই কি বলবি?
সায়রা বলল, আমি আর কি বলল? বললেও আপনারা বিশ্বাস করবেন না।