রহিমন বিবি নিজের ঘরে না গিয়ে মাতব্বরের কাছে গিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে বলল, না হুজুর সায়রা কিছুতেই রাজি হল না। তারপর সায়রা যা বলেছে বলল।
মাতব্বর তার কথা শুনে খুব রেগে গেলেও সামলে নিয়ে বললেন, ঠিক আছে, তুমি যাও। যা করার আমি করব।
কয়েকদিন পর এক গভীর রাতে মাতব্বর দুজন চামচাকে নিয়ে মঈন সেখের ঘরের দরজার কাছে এলেন। তারপর চামচা দুজনের দ্বারা বেড়া কেটে ফাঁক করে তাদেরকে বাইরে রেখে মাতব্বর একা ঘরে ঢুকে দেখলেন, হারিকেনের বাতি কমানো রয়েছে, মায়ে পুতে পাশাপাশি শুয়ে আছে দেখে সায়রাকে জড়িয়ে ধরে তার কাপড় খুলতে গেলেন।
রহিমন বিবি যেদিন এসেছিল, সেদিনই সায়রার দৃঢ় ধারণা হয়েছিল, মাতব্বর রাতের অন্ধকারে তার ইজ্জত লুটতে আসবে। তাই তারপর থেকে সে রাতে ঘুমায় না। মাতব্বরের লম্পটগিরী বন্ধ করার জন্য এবং নিজের ও গ্রামে গরিব ঘরের বৌ বেটিদের ইজ্জৎ বাঁচাবার এক কঠিন শপথ নেয়। আগে রাতে বিছানায় যাওয়ার সময় হারিকেনের বাতি কমিয়ে একটা হেঁসো রাখত, শপথ নেয়ার পর একটা ব্লেড কিনে এনে সেটাও বালিশের তলায় রেখে ঘুমায়।
আজও সেসব রেখে জেগে শুয়ে ছিল। মাতব্বর ও চামচাদের ফিস ফিসানি ও বেড়া কাটা সবকিছু জানতে পেরেও কিছু বলে নি। মাতব্বর ঘরে ঢুকে টর্চ লাইট জ্বালাতে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে ছিল। যখন তার কাপড় খুলছিল তখন বাধা না দিয়ে বালিশের তলা থেকে ব্লেড নিয়ে তৈরি হয়ে রইল। শেষে যখন উপগত হতে গেল তখন তার লিঙ্গটা এক হাতে ধরে অন্য হাতে ব্লেড চালিয়ে কেটে নিল। মাতব্বর অর্ত চিৎকার দিয়ে শালি মেরে ফেললরে বলে লিঙ্গের গোড়টা চেপে ধরে বিবস্ত্র অবস্থায় দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে এল। তখন গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে।
মাতব্বরের অবস্থা দেখে চামচা দুজনের আক্কেলগুড়ুম। তাড়াতাড়ি মাতব্বরকে গ্রামে কোনো ডাক্তার না থাকায় করিবাজের বাড়িতে নিয়ে গেল।
তখন গভীর রাত। কবিরাজের বাড়ির সবাই ঘুমে অচেতন। অনেক ডাকাডাকি করার পর কবিরাজ ঘর থেকে বেরিয়ে মাতব্বরের অবস্থা দেখে বললেন, এরকম কেসের চিকিৎসা আমি করতে পারব না। শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান। আপাতত আমি রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
মাতব্বরের আর্তচিৎকার ও লাফালাফিতে হালিমের ঘুম ভেঙে যেতে তাকিয়ে দেখল, বাবারে মারে শালী মেরে ফেললরে বলে মাতব্বর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, মাতব্বর এসেছিল কেন? তার কি হয়েছে? ওরকম চিল্লাতে চিল্লাতে চলে গেল কেন?
সায়রা তখন শাড়িটা ঠিক করে পরছিল। বলল, আমাকে ছেড়ে দে, দেখছিস রক্তে শাড়ি ভিজে গেছে।
হালিম মাকে ছেড়ে দিয়ে হারিকেনের সলতে বাড়িয়ে দিয়ে বিছানায় ও মায়ের। শাড়িতে রক্ত দেখে আবার জিজ্ঞেস করল, এত রক্ত কেন মা?
আসল কথা বলতে না পেরে সায়রা বলল, এতরাতে মাতব্বর আমার কাছে এসেছিল বলে তার গায়ে বঁটির কোপ দিয়েছি। এসব তারই রক্ত। তারপর বলল, এসব কথা কাউকে বলবি না।
হালিম ভয়ার্তস্বরে বলল, কাল মাতব্বর যদি লোকজন নিয়ে এসে তোমাকে মারে?
চুপকর, তোকে ওসব ভাবতে হবে না। তারপর বালতি ভরে পানি এনে লাতা ভিজিয়ে ঘরের ভিতরের ও বাইরের রক্ত পরিষ্কার করতে লাগল।
মাতব্বর বাড়ির লোকজন ও চামচেরা ঘটনাটা গোপন রাখতে চেষ্টা করলেও এককান দু’কান করে সবাই জেনে গেল, অনেকে খুশী হয়ে মন্তব্য করল, যেমন কর্ম তেমনি ফল, সেই সাথে সায়রাকে সবাই বাহবা দিতে লাগল।
.
০২.
প্রায় একমাস হাসপাতালে থেকে মাতব্বর ঘরে ফিরে এলেন। হাসপাতালে থাকাতেই কিভাবে সায়রাকে শায়েস্তা করবেন চিন্তা করলে ও ঘরে ফিরে গ্রামের পরিস্থিতি দেখে আগের চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করে কাজে নামলেন।
একদিন ফজলু ভিক্ষে করতে এলে তাকে বললেন, কতদিন আর ভিক্ষে করে খাবি? যা বলছি শোন, আমি তোকে একটা কাজ দেব। কাজটা করতে পারলে তোকে আর ভিক্ষে করে খেতে হবে না। তারপর কি করতে হবে না হবে বুঝিয়ে বলে বললেন, যদি কাজটা করতে পারিস, তা হলে সায়রার সঙ্গে তোর বিয়ে দেব, নতুন ঘর করে দেব, দশ কাটা জমিও তোকে লিখে দেব, বাজারে একটা মুদি দোকানও করে দেব। দোকানদারী করবি আর বৌ নিয়ে সুখে থাকবি।
ফজলু খুব রোগা ও খোঁড়া, কোনো কাজ করতে পারে না। তার মা ছাড়া কেউ নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা ভিক্ষে করে সংসার চালাত। বয়স বেশি হওয়ার কারণে সে ভিক্ষা করতে পারে না। এখন ফজলু ভিক্ষে করে সংসার চালায়। বিয়ে করার ইচ্ছা থাকলেও কোনো মেয়ের বাপ তার কাছে মেয়ে দিতে চায় নি বলে আজও বিয়ে হয় নি। বয়সে মঈন সেখের চেয়ে দুতিন বছরের ছোট। মঈন সেখ যখন বেঁচে ছিল তখন ফজলু তাদের ঘরে যেত। এখনও যায়। সায়রাকে ভাবি বলে ডাকে।
মাতব্বরের কথা শুনে খুব খুশী হলেও চিন্তা করতে লাগল। সায়রা সুন্দরী, সেকি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে? শেষে যদি মাতব্বরের মতো অবস্থা তারও করে?
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে তার মনের ভাব বুঝতে পেরে বললেন, কিরে কাজটা করতে পারবি না?
ফজলু হ্যাঁ-না কিছু বলতে না পেরে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে মাতব্বরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
মাতব্বর মুচকি হেসে বললেন, ঠিক আছে। যা করতে বললাম, তা যদি করতে না পারিস, তা হলে বাদ দে। এবার যা বলছি শোন, তারপর কি করতে হবে না হবে বলে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে এই কাজটাও পারবি না?