আবু তাহের বললেন, হ্যাঁ, তাকে শাস্তি দিতেই হবে।
.
ঐ দিন রাতে আশফাক লঞ্চে ঢাকা ফেরার সময় আব্দুর রহমান বললেন, বেশি দিনের ছুটি নিয়ে আব্বা আম্মাকে নিয়ে আসবে। তাদেরকে যা বলার আমি বলব।
আশফাক বলল, বাবা আসবেন বলে মনে হয় না। মা হয়তো আসতে পারেন।
আশফাক ঢাকায় ফেরার পর মাকে হালিমের ব্যাপারে নানারা যা বলেছেন জানাল।
ফাতেমা খাতুন বললেন, তোর বাবা ও ভাইয়াদের বলে দেখ, তারা কি বলে।
রাফিয়া এক ফাঁকে আশফাককে জিজ্ঞেস করল, হালিমের খোঁজ পেয়েছ?
আশফাক বলল, হ্যাঁ, পেয়েছি। সে এখন রাঙ্গিকালি থানার দারোগা।
ভালো না মন্দ কিছু বললে না যে?
হালিমের সম্পর্কে নানাদের কাছে যা কিছু জেনেছে বলে বলল, তোর কথাই ঠিক, ওর মতো উন্নত চরিত্রের ছেলে হয় না। সারা পটুয়াখালী জেলাতে ওর সুনাম। বড় নানা ও ছোট নানা কি বলেছেন জানিস?
তুমি না বললে জানব কি করে?
বলেছেন, “হালিমের সঙ্গে বিয়ে হলে রাফিয়া সুখী হবে।”
রাফিয়া লজ্জা পেয়েও জিজ্ঞেস করল, ওর সঙ্গে তোমার দেখা হয় নি?
না, জেলা শহর থেকে রাঙ্গিকালি থানা অনেক দূর। তাই যাওয়া হয় নি।
এবার কি করবে ভেবেছ?
সবকিছু জানার পর মা রাজি হয়েছে বুঝতে পারলাম। বাবাও ভাইয়াদেরকে নানাদের মতামত জানিয়ে রাজি করাবার চেষ্টা করব।
যদি রাজি না হয়?
তুই চিন্তা করিস না, তারা রাজি না হলেও আমি আগে যে কথা বলেছি, তা যেমন করে হোক করবই।
রাফিয়া ছলছল চোখের বলল, তুমি আমাকে এত ভালবাস ছোট ভাইয়া? তোমার ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না।
এই পাগলি, কাঁদছিস কেন বলে আশফাক তার চোখ মুছে দিয়ে বলল, আমি তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারি না। আর কোনো দিন কাঁদবি না। তারপর আবার বলল, আমরা ভাই-বোন, ঋণের কথা বলছিস কেন? আবার কখনো বললে কি শাস্তি দিই দেখবি।
.
আশফাক মাকে আসল কথা বলে গেলেও বাবা ও ভাইয়া ভাবিদের বলেছিল, অফিসের কাজে পটুয়াখালী যাচ্ছে। তাই রাতে খাওয়ার টেবিলে সবাইয়ের উদ্দেশ্যে বলল, সময় করে একদিন নানাদের ঘরে গিয়েছিলাম, ওনারা ভালো আছেন। বাবা ও মাকে যেতে বলেছেন। ছোট নানার সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। কথা প্রসঙ্গে হালিমের কথা বললেন। সে এখন ওখানকার রাঙ্গীকালি থানার দারোগা। সারা পটুয়াখালী জেলাতে তার মতো ভালো ছেলে নাকি নেই।
হালিমের কথা শুনে হাফিজ উদ্দিন রেগে গেলেন। রাগের সঙ্গে বললেন, সে থানার দারোগা হোক আর হাইকোর্টের জজ হোক, তাতে আমাদের কি? সেতো কামলার ছেলে, তার মা তোর ছোট নানার বাড়িতে বুয়ার কাজ করে। তার দয়াতেই সে লেখাপড়া করেছে।
আশফাক বাবার রাগকে ভয় করে। তবু সাহস করে বলল, কামলারা কি মানুষ না? তারা যদি কৃষি কাজ না করত, তা হলে ফসল জন্মাত কেমন করে? তারাইতো কঠোর পরিশ্রম করে শহরের মানুষের পেটের অন্ন জোগাচ্ছে। তা ছাড়া হালিমের বাবা অনেক আগে মারা গেছেন। বর্তমানে ছোট নানাই তার গার্জেন। আর তার মা কাজের বুয়াও নন। ছোট নানা-নানি তাকে মেয়ে ও হালিমকে নাতি করে নিয়েছেন। এখন ছোট নানার পরিচয়ই তাদের পরিচয়।
হাফিজ উদ্দিন আরো রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তার আগে বড় ছেলে আশরাফ উদ্দিন বলল, তুই হালিমের হয়ে এত ওকালতি করছিস কেন? তা হলে কি তার সঙ্গে রাফিয়ার বিয়ে দিতে চাস?
আশফাক বলল, হ্যাঁ, চাই। আমি তাকে যতটুকু জেনেছি, তাতে মনে হয়েছে, সে একটা রত্ন। তার সঙ্গে বিয়ে হলে রাফিয়া সুখী হবে। নানারাও তাই বলেছেন।
হাফিজ উদ্দিন গর্জে উঠলেন, খুব লায়েক হয়ে গেছিস দেখছি। খবরদার, ঐ কথা আর মুখে আনবি না।
আশফাক জানে বাবা বেশি রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাই আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেল।
পরেরদিন মাকে একাকি পেয়ে বলল, বাবাও ভাইয়াদের মতামত তো শুনলে, এখন কি করবে?
ফাতেমা খাতুন বললেন, আমি কি বলব, তুই যা ভালো বুঝিস কর।
আমি তোমাকে ও রাফিয়াকে নিয়ে নানাদের বাড়িতে গিয়ে ওদের বিয়ে দিতে চাই। তুমি যাবে কিনা বল।
তোর বাবা না গেলে আমি যাব কি করে? তোর সঙ্গে আমাকে ও রাফিয়াকে পাঠাবে বলেও মনে হয় না। তার চেয়ে এক কাজ কর, তুই কাউকে কিছু না বলে রাফিয়াকে নিয়ে যা। তোর নানা-নানিদেরকে আমার ও তোর বাবা ও ভাইয়াদের মতামত জানিয়ে ওদের বিয়ে দিয়ে দিতে বলবি। তারা বিয়ে দিয়েছে শুনলে তোর বাবা রেগে গেলেও তেমন কিছু করবে না। অবশ্য তোকে সবাই খুব বকাবকি করবে।
বাবা ও ভাইয়াদের বকাবকি আমি হজম করতে পারব। ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।
কিছু দিনের মধ্যে আশফাক অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সুযোগমতো রাফিয়াকে নিয়ে পটুয়াখালীতে নানা বাড়িতে এসে উঠল।
পরের দিন খবর পেয়ে আবু তাহের তাদেরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে স্ত্রীর সঙ্গে রাফিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর আশফাককে বৈঠকখানায় নিয়ে এসে ঢাকার খবর নিতে লাগলেন।
ফারযানা বেগম রাফিয়াকে ছোটবেলায় দু’একবার দেখেছিলেন। এখন তার রূপ যৌবন দেখে খুব অবাক হলেন। সালাম ও কুশল বিনিময় করে রাফিয়া কদমবুসি করতে এলে জড়িয়ে ধরে প্রথমে মাথায় ও পরে দু’গালে চুমো খেয়ে পাশে বসিয়ে বললেন, তোমার রূপ আমার নাতিকে পাগল করেছে। তা না হলে যে নাতি কোনো মেয়ের মুখের দিকে কখনো তাকিয়ে দেখে না, সে কিনা তোমার প্রেমে পড়ে গেল।