হ্যাঁ চাই। তবে তার আগে ওর সম্পর্কে ছোট নানার কাছে সবকিছু জানব। ভালো হলে রাফিয়াকে ওর হাতে তুলে দেব।
আর যদি খারাপ কিছু হয়?
তা হলে দেব না। রাফিয়াকে সেকথা জানিয়ে আমাদের পছন্দ করা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেব।
ঠিক আছে, আমি তোর বাবার সঙ্গে আলাপ করব। তার আগে তুই একা গিয়ে নানাদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আয়।
কয়েকদিন পর আশফাক নানার বাড়ি বেড়াতে এল। তারপর নানাকে বলল, শুনলাম, ছোট নানা তাদের কাজের বুয়ার হালিম নামে একটা ছেলেকে নাকি লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করেছেন?
আশফাকের নানা আব্দুল রহমান ভাইয়েদের মধ্যে বড়। তিনি খুব বিচক্ষণ ব্যক্তি। নাতির কথা শুনে বললেন, নানার বাড়ি এসেছ অনেকদিন পর। ওসব খবর জেনে কি লাভ? যে কদিন থাক খাও, দাও, আনন্দ করে বেড়াও।
আশফাক বলল, পরে যখন আসব তখন আনন্দ করে বেড়াব। এখন এসেছি হালিমের খোঁজ খবর নিতে। তাই যা জিজ্ঞেস করলাম বলুন।
আগে বল, হঠাৎ হালিমের খোঁজ খবর নিতে কেন এসেছ?
ভার্সিটিতে পড়ার সময় হালিমের সঙ্গে রাফিয়ার পরিচয় হয়। তারপর দুজন দু’জনকে পছন্দ করে সিদ্ধান্ত নেয়, বিয়ে করার। তারপর রাফিয়ার ও মা-বাবা ও ভাইয়াদের মতামতের কথা জানাল।
সবাই যখন অমত তখন তুমি কেন ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছো?
হালিমকে আমি চিনি এবং খুব ভালো ছেলে বলেও জানি। তা ছাড়া রাফিয়া হালিমের সংস্পর্শে এসে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আমার মনে হয়, ওদের বিয়ে হলে ওরা সুখী হবে। আজ চার বছর হল তার খোঁজ নেই। তাই সবকিছু জানতে এসেছি।
তোমরা ওর সম্পর্কে যা শুনেছ, আমরাও তাই শুনেছি। সবকিছু জানতে হলে তোমার ছোট নানা আবু তাহেরের কাছে যেতে হবে।
আপনিও যাবেন আমার সাথে।
নাতনি যখন পণ করেছে হালিমকে ছাড়া বিয়ে করবে না তখন তো যেতেই হবে। তারপর বললেন, তা হলে এখনই যাই চল।
আবু তাহের ঘরেই ছিলেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় করে আশফাকের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কে? তোমাকে যেন চেনাচেনা লাগছে?
আব্দুর রহমান হেসে উঠে বললেন, চেনাচেনা তো লাগবেই। ওতো ফাতেমার ছোট ছেলে আশফাক। তোর কাছে এসেছে হালিমের সব কিছু জানতে। তারপর ঘটনা খুলে বললেন।
আবু তাহের অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে হালিম ও সায়বার পুরো হিস্ট্রি বলে বললেন, সায়রা আমাদের কাজের বুয়া নয়। তাকে আমরা মেয়ে ও হালিমকে নাতি হিসাবে গ্রহণ করেছি। আর হালিম যে ছেলে হিসাবে একটা রত্ন, তা এখানকার সবাই জানে। রাফিয়া হালিমকে পছন্দ করেছে জেনে খুব খুশী হয়েছি। দোয়া করি, “আল্লাহ যেন ওদের জোড়া কবুল করেন।”
আব্দুর রহমান বললেন, হালিম যে একটা রত্ন তা আমরাও জানি। এই বিয়ে হলে আমরাও খুশী হব। ফাতেমা ও হাফিজ উদ্দিনকে আমি আসতে বলব। না এলে ঢাকায় গিয়ে তাদেরকে রাজি করাব।
আবু তাহের বড় ভাই ও নাতিকে আপ্যায়ন করিয়ে আশফাককে বললেন, আমাদের বাড়িতে ও দু’দিন বেড়াবে।
আশফাক বলল, ছোটনানা, এবারের মতো মাফ করবেন। সামনের বার যখন আসব তখন দু’দিন নয় এক সপ্তাহ বেড়াব। চাকরি করি। মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি।
তা হলে তো কিছু বলার নেই। ভিতরে গিয়ে নানির সঙ্গে দেখা করে এস।
আশফাক ছোট নানির সঙ্গে দেখা করে এলে আব্দুর রহমান তাকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলেন।
তারা চলে যাওয়ার পর আবু তাহের স্ত্রীকে হালিম ও রাফিয়ার সবকিছু ঘটনা বলে সায়রাকে ডেকে বললেন, তোর ছেলে ঢাকায় পড়তে গিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে পালিয়ে এসেছে। মেয়েটি হালিমকে ছাড়া বিয়ে করতে চাচ্ছে না বলে গার্জেনরা তার বিয়ে দিতে পারছে না। হালিমের বাবা দিনমজুর, তার মা কাজের বুয়া জেনে গার্জেনরা হালিমকে পছন্দ করে না। মেয়ের ছোট ভাইয়া বোনকে খুব ভালবাসে। সে হালিমকে পছন্দ করে। মেয়েটির সঙ্গে প্রায় চার বছর হালিম যোগাযোগ রাখে নি। তাই ভাইটা ঠিকানা জোগাড় করে খোঁজ করতে এসেছে। মেয়ে অন্য কেউ নয়, আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে ফাতেমার একমাত্র মেয়ে। হালিমের মতো ছেলে এরকম কাজ করবে ভাবতেই পারছি না। ওকে আমি কঠিন শাস্তি দেব।
সায়রা গতকাল দু’দিনের জন্য বাহেরচর থেকে এসেছে। আব্বার কথা শুনে বুঝতে পারল, হালিম যাই করুক না কেন, খুশী হয়েছেন। আর শাস্তির কথাটা খুশীর আমেজ। হাসি চেপে রেখে বলল, আপনি ওর গার্জেন, যত কঠিন শাস্তি দেন না কেন আমি কিছু মনে করব না।
আবু তাহেরের স্ত্রী ফারহানা বেগমও স্বামীর মনোভাব বুঝতে পেরেছেন। সায়রা থেমে যেতে তবু বললেন, আমি মনে করি, হালিম খুব ভালো কাজ করেছে। শহরের বড়লোকের আপটুডেপ মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলে না হয় অন্যায় হত। সে প্রেম করেছে আমাদের নাতনির সঙ্গে। তা ছাড়া প্রেম করলেও আমাদের জানিয়ে বিয়েতে করেনি। নাতনি নাতবৌ হয়ে আসবে, এটাতো মস্তবড় সুখবর? শাস্তি দেয়ার কথা আসবে কেন?
আবু তাহের বললেন, তোমার কথা ঠিক হলেও সম্পূর্ণ ঠিক নয়। ইসলামে ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম করা নিষিদ্ধ জেনেও হালিম করল কেন? তা ছাড়া প্রেম করার পর তাকে বিয়ে করার ওয়াদা করে ও আজ চার বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে নি কেন? এই দুটো কাজই অন্যায়। তাই তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
ফারযানা বেগম কিছু বলার আগে সায়রা বলল, হ্যাঁ আব্বা আপনি ঠিক কথা বলেছেন। হালিমকে শাস্তি পেতে হবে।