যাতে আপনার বাবা আমাকে অভদ্র মনে করেন।
সবার কাছে আমি কত ছোট হয়ে গেলাম, সেকথা মনে হয় নি?
হয়েছে। তারপর হালিম অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আর কিছু বলবেন?
হ্যাঁ বলব। বাবার সঙ্গে দেখা করার পর কি বলবেন বলেছিলেন, মনে আছে?
আছে।
তা হলে বলুন।
বললে আপনি দুঃখ পাবেন।
তবু বলুন।
কথাটা আপনার বাবাকে বলেছি। মনে হল, শুনে তিনি খুব রেগে গিয়েছিলেন। তাই আপনাকে আর বলতে চাচ্ছি না।
আমাকে বলতেই হবে।
তা হলে শুনুন, আমিও আপনাকে ভীষণ ভালবাসি। তবে জীবনসঙ্গিনী করার স্বপ্ন কোনো দিন দেখি নি।
কেন বলুন তো?
নামগোত্রহীনদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়, কোনো দিন সফল হয় না। স্বপ্নের পিছনে যারা ছোটে, আমি তাদের দলে নই।
স্বপ্ন সফল করার জন্য আমি যদি আপনাকে সাহায্য করি?
সাহায্য নেয়ার যোগ্যতাও আমার নেই।
কে বলেছে নেই? আমি তো জানি যাদের যোগ্যতা আছে, তাদের থেকে আপনার অনেক বেশি আছে।
আপনি আমাকে ভালবাসেন। তাই ঐ কথা বলছেন। আপনার গার্জেন ও আপনাদের হাই সোসাইটির কাছে আমার এতটুকুও যোগ্যতা নেই। তা ছাড়া। আমার একটা সাধনা আছে, সেই সাধনা সফল না হওয়া পর্যন্ত সংসার জীবনে প্রবেশ করতে পারব না। কবে সেই সাধনা আল্লাহ সফল করাবেন, তা তিনিই জানেন। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, আপনাকে ভালবাসলেও কেন আপনার ডাকে সাড়া দিতে পারছি না? তারপর আর সময় দিতে পারছি না বলে হালিম উঠে দাঁড়াল।
প্লীজ, আর একটু বসুন বলে রাফিয়া তার একটা হাত ধরে বসিয়ে বলল, আগেও বলেছি এখনও বলছি, আপনার সাধনা সফল না হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব। কথা দিন, আমাকে ভুলে যাবেন না?
হালিম হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, কথা দিলে দু’জনকেই দিতে হবে, একজন দিলে তো হবে না।
আমি তো আগেই কথা দিয়েছি।
আমি নিশ্চিত, অতদিন আপনি অপেক্ষা করতে পারবেন না। আর আপনার গার্জেনরা অপেক্ষা করা তো দূরের কথা, ওনারা আমাকে পছন্দই করেন না। যখন শুনবেন আমার জন্য আপনি ওনাদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন তখন যেমন করে হোক বিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন। কারণ কোনো গার্জেনই চাইবেন না আমার মতো একটা ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে।
রাফিয়া বলল, আমি শিক্ষিত ও ম্যাচিওর। গার্জেনরা যতই চেষ্টা করুন না কেন, আমার অমতে কিছুতেই বিয়ে দিতে পারবেন না। প্রয়োজনে চাকরি করে বাসা ছেড়ে অন্যত্র থাকব। আপনি শুধু ওয়াদা করুন, সাধনা সফল হওয়ার পর আমার কাছে আসবেন।
হালিম ছোট্ট একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল, তা না হয় করলাম, কিন্তু এসে যদি দেখি আপনি কারো সংসার করছেন, তখন?
রাফিয়া ভিজে গলায় বলল, আল্লাহর কোনো মুমীন বান্দা কখনও ওয়াদা খেলাপ করে না। আশা করি, এরপর আমাকে আর অবিশ্বাস করবেন না?
প্রেম-ভালবাসার মধ্যে অবিশ্বাসের স্থান নেই। যদি থাকে, তাহলে খাঁটি প্রেম-ভালবাসা হয় না। আপনাকে অবিশ্বাস করি নি, যা বাস্তব তাই বলেছি। বুঝতে পারছি, আমার কথায় মনে দুঃখ পেয়েছেন। সেজন্য ক্ষমা চাইছি। বলুন ক্ষমা করে দিয়েছেন?
রাফিয়া চোখ মুছে বলল, আগে ওয়াদা করুন।
ঠিক আছে, করলাম। এবার ক্ষমা পেয়েছি কি না বলুন।
রাফিয়া আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে সুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, প্রেমিক প্রেমিকাদের একে অপরের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করার মাধ্যমে প্রেম আরো গম্ভীর হয়, তাই না?
হালিম মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ, তাই। তারপর বিদায় নিয়ে হালিম চলে গেল।
.
অনার্স কমপ্লীট করা পর্যন্ত তাদের যোগাযোগ থাকলেও আজ প্রায় চার বছর হতে চলল যোগাযোগ নেই। রাফিয়া ভেবেছিল, হালিম মাস্টার্স কমপ্লীট করে সাধনায় নামবে, কিন্তু মাস্টার্স করার সময় তার খোঁজ না পেয়ে চিন্তিত হল। ভাবল, তা হলে সে কি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সাধনার কাজে লেগে গেল? আরো ভাবল, তাই যদি হয়, তা হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না কেন? তার মন বলে উঠল, সাধনার কাজে হয়তো খুব ব্যস্ত আছে। সময় সুযোগ পেলে নিশ্চয় যোগাযোগ করবে। আশায় আশায় দিন গুনতে গুনতে মাস্টার্স কমপ্লীট করার পরও যখন হালিম যোগাযোগ করল না তখন খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।
এরমধ্যে একটা ভালো পাত্রের সন্ধান পেয়ে হাফিজ উদ্দিন একদিন স্ত্রীর সামনে মেয়েকে সেকথা জানিয়ে মতামত জানতে চাইলেন।
রাফিয়া বলল, আমি এখন বিয়ে করব না।
মেয়ের কথা শুনে ফাতেমা খাতুন বললেন, লেখাপড়া শেষ করলি। এবার তোর বিয়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হতে চাই। তুই এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিস না কেন? সব সময় কি আর ভালো ছেলে পাওয়া যায়? ছেলে ডাক্তার, মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ছেলের বাবা ব্যবসায়ী। ছোট সংসার। এরকম ছেলে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
রাফিয়া বলল, যতই ভালো হোক, বললাম না, এখন আমি বিয়ে করব না?
কেন করবি না বলবি তো?
পরে বলব বলে রাফিয়া তাদের কাছ থেকে চলে গেল।
হাফিজ উদ্দিন বললেন, মনে হয় ও কোনো ছেলেকে পছন্দ করে। তুমি ওকে জিজ্ঞেস করে দেখে।
ফাতেমা খাতুন বললেন, বড় বৌ বলছিল, অনেক দিন আগে হালিম নামে যে ছেলেটা তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তাকে নাকি ও পছন্দ করে।
চার বছর আগের কথা হাফিজ উদ্দিন ভুলে গিয়েছিলেন। কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করে স্মরণ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্মরণ করতে পারলেন না। বললেন, কই মনে পড়ছে না তো?