তা বলতে পারেন, তবে তা ঠিক নয়। তাকে ভালোবাসি বলেই তার ভালো চাই। তাই আপনার কাছে আমার পরিচয় দিতে এসেছি। এখন আপনার মেয়ের মোহ ভাঙাবার দায়িত্ব আপনাদের। আমি নাম গোত্রহীন এক দিন মজুরের ছেলে হলেও লোভী নই। এবার উঠি তা হলে, বলে হালিম দাঁড়িয়ে পড়ল।
হালিমের সৎ সাহস ও অকপট কথাবার্তায় হাফিজ উদ্দিনের রাগ পড়ে গেল। বুঝতে পারলেন, ছেলেটা খুব বুদ্ধিমান ও সৎ। চলে যাওয়ার কথা শুনে বললেন, বস, কিছু খেয়ে তারপর যাবে।
মাফ করবেন, কিছু খেতে পারব না বলে হালিম সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেল।
বাবাকে ড্রইংরুমে যেতে বলে রাফিয়া তিন ভাবিদের কাছে গিয়ে বলল, আমার হুজুর প্রেমিক এসেছেন। বাবা ওনার কাছে গেছে, তোমরা দেখতে চাইলে এস আমার সঙ্গে।
তিন ভাবিই তার সঙ্গে এসে দরজার আড়াল থেকে এতক্ষণ শ্বশুর ও হালিমের কথাবার্তা শুনছিল। হালিমকে ভাবিদের খুব পছন্দ হল। তাকে চলে যেতে দেখে বড় ভাবি রাফিয়াকে বলল, উনি তো কিছু না খেয়ে যাচ্ছেন, ধরে নিয়ে এস।
রাফিয়া বলল, উনি বাবার কথা যখন রাখলেন না তখন আমারও রাখবেন।
সেজ ভাবি খুব ধনী ঘরের উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে। হালিমকে দেখে তার পছন্দ হলেও পরিচয় শুনে খুশী হতে পারে নি। অসন্তুষ্ট গলায় ননদকে উদ্দেশ্য করে বলল, নামগোত্রহীন ছেলের পাল্লায় পড়া তোমার উচিত হয় নি। আমাদের সোসাইটির মান-সম্মানের কথা চিন্তা না করে এই পথে পা বাড়াতে পারলে?
রাফিয়া কিছু বলার আগে মেজ ভাবি বলল, ওকে দোষ দিচ্ছ কেন? ওতো ছেলেটার পরিচয় জানার চেষ্টা করেও সফল হয় নি।
বড় ভাবি বলল, হ্যাঁ, তোমাদের দুজনেরই কথা ঠিক। আশা করি, পরিচয় জানার পর রাফিয়া ঐ পথ থেকে ফিরে আসবে।
রাফিয়া ভাবিদের কথা শুনে রেগে গেল। বলল, উনি নাম-গোত্রহীন ছেলে হলেও খুব ধার্মিক ও মহৎ। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওনাকেই জীবনসঙ্গী করব ইনশাআল্লাহ।
রাফিয়ার ছোট ভাইয়া আশফাক বাসায় ছিল না। ফেরার সময় বাসার কাছাকাছি হালিমকে দেখে সালাম বিনিময় করে বলল, আরে আপনি? এদিকে কোথায় এসেছিলেন?
হালিম বলল, আপনাদের বাসায়।
তাই নাকি? রাফিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
না।
কেন? ওকি বাসায় নেই?
তা জানি না। আমি ওনার সঙ্গে দেখা করতে আসি নি, এসেছিলাম আপনার বাবার সঙ্গে দেখা করতে।
আশফাক অবাক হয়ে বলল, বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
হ্যাঁ, হয়েছে। আগে থেকে কি বাবার সঙ্গে আপনার পরিচয় ছিল?
না, আজই পরিচয় হল।
আশফাক আরো অবাক হয়ে বলল, বাবার সঙ্গে পরিচয় নেই অথচ তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন, ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
মাফ করবেন, ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে পারছি না। আশা করি, বাসায় গেলেই বুঝতে পারবেন। এবার আসি বলে সালাম বিনিময় করে হালিম হাঁটতে শুরু করল।
হাফিজ উদ্দিন ভিতরে চলে যাওয়ার পর ভাবিরা রাফিয়াকে নিয়ে ড্রইংরুমে বসে কথা বলছিল। আশফাক বাসায় ঢুকে তাদের গলা পেয়ে সেখানে এসে রাফিয়ার কথা শুনে জিজ্ঞেস করল, কাকে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস রে?
রাফিয়া লজ্জা পেয়ে ছুটে পালিয়ে গেল।
আশফাক ভাবিদেরকে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার বলতো?
বড় ভাবি বলল, কিছুক্ষণ আগে হালিম নামে রাফিয়ার এক ক্লাশমেট এসেছিল বাবার সঙ্গে দেখা করতে। এক্ষুনি চলে গেল, তুমি হয়তো তাকে দেখে থাকবে।
হ্যাঁ, দেখেছি। তার সঙ্গে কথাও বলেছি।
মেজ ভাবি বলল, তাকে তুমি চেনো?
হ্যাঁ, চিনি। আপ্যায়ন করিয়েছিলে?
বাবা তাকে কিছু খাওয়ার কথা বলেছিলেন, শুনল না।
রাফিয়া কিছু বলে নি?
বাবার সঙ্গে কথা বলেই চলে গেল। আমরা রাফিয়াকে বলতে বলেছিলাম। বলল, বাবার কথা যখন রাখল না তখন আমার কথাও রাখবে না।
আমি জানলে ধরে নিয়ে আসতাম।
সেজ ভাবি বলল, রাফিয়া ওকে জীবনসঙ্গী করতে চায়, তাও জান না কি?
না, জানি না। তাই বুঝি ওকে জীবনসঙ্গী করার কথা জিজ্ঞেস করতে পালিয়ে গেল?
বড় ভাবি বলল, হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞেস করল, হালিমকে তুমি চেনো কিভাবে?
আশফাক মার্কেটের ঘটনাটা বলে বলল, ঐদিন রাফিয়ার কাছ থেকে ওর পরিচয় জানতে পারি। পরে মেডিকেলে দেখতে গিয়ে আলাপ করি। বাবার সঙ্গে দেখা করতে কেন এসেছিলেন জান?
হ্যাঁ, জানি। এসেছিল তার বায়োডাটা বাবাকে জানাতে। তারপর বাবা ও হালিমের সঙ্গে যা কিছু কথা হয়েছে বলল।
আশফাক অবাক হয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, নামগোত্রহীন হলেও ছেলেটা খুব জিনিয়াস। তবু বলব, তাকে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্ত নেয়া রাফিয়ার উচিত হয় নি। তোমরা ওকে কিছু বল নি?
বলিনি আবার, বলার পরতো ঐ কথা বলল।
দেখি, আমি ওর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করব বলে আশফাক সেখান থেকে চলে গেল।
.
পরের দিন ক্লাশ শেষে রাফিয়া হালিমকে বলল, চলুন, কোথাও বসি, আলাপ করব।
হালিম হাঁটতে শুরু করে বলল, আলাপটা অন্য দিন করলে হয় না?
রাফিয়া বলল, না, আজই করব।
ওরা কবি নজরুল ইসলামের কবরের কাছাকাছি এক জায়গায় বসল। বসার পর হালিম বলল, এবার বলুন কি আলাপ করবেন।
কাল আমার সঙ্গে দেখা না করে চলে এলেন কেন?
আপনার সঙ্গেতো প্রায় প্রতিদিন দেখা হচ্ছে। তাই প্রয়োজন মনে করি নি।
বাবা কিছু খেতে বলার পরও খেলেন না, এটা কি উচিত হয়েছে?
না, উচিত হয় নি।
অনুচিত জেনেও কাজটা করলেন কেন?