মেয়েরা সেজেগুজে অর্ধনগ্ন হয়ে সবখানে যাতায়াত করে কেন? নিশ্চয় পুরুষদেরকে রূপ-যৌবন দেখাবার জন্য? কিন্তু পুরুষরা যখন তাদের দিকে বারবার তাকিয়ে দেখবে তখন তারাই আবার পুরুষদের অভদ্র-ইতর-ছোটলোক বলবে। বলাটা কি ঠিক হবে? পুরুষদের দেখাবার জন্যই তো মেয়েরা ঐভাবে বেরোয়। পুরুষরা না দেখলে মেয়েদের সাজগোজ করে বেরোবার তো কোনো মূল্যই রইল না। তবে আর পুরুষদেরকে অদ্র-ইতর-ছোটলোক বলবে কেন?
একটা কথা মনে রাখবেন, যেহেতু নারীরা কন্যা, জায়া ও জননী, সেহেতু তারা খুব মূল্যবান। আর মূল্যবান জিনিস যত্র-তত্র সহজে পাওয়া গেলে তা আর মূল্যবান থাকে না। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি, পুরুষ ও নারীর শরীরের যে অঙ্গগুলো সব সময় ঢাকা থাকে সেই অঙ্গগুলো। সব সময় ভোলা অঙ্গগুলো থেকে অনেক সুন্দর ও মূল্যবান। তাই মূল্যবান জিনিসকে হেফাজতে রাখার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (দঃ) কুরআন ও হাদিসে আদেশ করেছেন। সেই সব আদেশ ও নিষেধ যারা মানুষকে বলে, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সভ্য সমাজের লোকেরা তাদেরকে মোল্লা ও গোঁড়া বলে বিদ্রূপ করে।
আমার কথা শুনে কতটা রাগ বা বিরক্ত হচ্ছেন জানি না। তবু অনুরোধ করব, মোল্লারা যা কিছু বলে, সেগুলো কুরআন-হাদিসে আছে কিনা জানার চেষ্টা করুন। চিন্তা করলে খুব অবাক লাগে, পৃথিবীর উন্নত দেশের উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা কুরআন-হাদিস পড়ে ইসলামকে জানতে পেরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। আর মুসলামনরা সেই কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন না করে ভিন্ন ধর্মের শিক্ষা সংস্কৃতিকে ভালো মনে করে সেসব অনুসরণ করছে। শুধু তাই নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অনেক কিছু বলছে ও করছে, তারা যে ইসলাম থেকে বাদ হয়ে। যাচ্ছে তাও জানে না।
শুনুন, আইন করে পৃথিবী থেকে অপরাধ বা অপরাধ প্রবণতা দূর করা কিছুতেই সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হত, উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোতে এত অপরাধ হত না। একমাত্র আল্লাহভীতিই মানুষের সব রকমের অপরাধ প্রবণতা দূর করতে পারে। আর আল্লাহকে তারাই ভয় করবে, যারা আল্লাহর পরিচয় জানবে। আল্লাহর পরিচয় জানতে হলে সব রকমের জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে কুরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং সেসব অনুসরণও করতে হবে। প্রকৃত মানুষ ও যারা প্রকৃত আল্লাভীরু, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনপাকে বলিয়াছেন,
“সকল পুণ্য ইহাতেই নহে যে, তোমরা স্বীয় মুখকে পূর্ব দিকে কর কিংবা পশ্চিম দিকে, বরং পুণ্য তো ইহা যে, কোনো ব্যক্তি ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, কীয়ামত দিবসের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, কিতাব এবং নবীগণের প্রতি। আর মাল প্রদান করে আত্মীয়স্বজন এবং এতিমদিগকে এবং মিসকিনদিগকে এবং (রিক্তহস্তে) মুসাফিরদিগকে, আর ভিক্ষুকদিগকে এবং দাসত্ব মোচনে, আর নামাযের পাবন্দি করে এবং যাকাত আদায় করে; আর যাহারা আপন প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে, যখন প্রতিজ্ঞা করিয়া বসে, আর যাহারা ধীরস্থির থাকে অভাব অভিযোগে, অসুখে বিসুখে এবং ধর্ম-যুদ্ধে, ইহারাই সত্যিকার মানুষ এবং ইহারাই (সত্যিকার) আল্লাহ ভীরু (১)।” [(১) সুরা-বাকারা, আয়াত-১৭৭, পারা-২]
আর একটা কথা বলে শেষ করব, ইসলাম বড় সহজ, সরল ও উদার ধর্ম। সেখানে গোঁড়ামির কোনো স্থান নেই। ভিন্ন ধর্মের ইসলাম বিদ্বেষী মানুষেরা ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানদের মধ্যে কিছু স্বার্থান্বেশী মানুষ ইসলামকে জটিল করে ফেলছে। তারপর ঘড়ি দেখে হালিম বলল, চলুন, ক্লাশের সময় হয়ে গেছে।
.
০৮.
রাফিয়ার বাবা হাফিজ উদ্দিন খুব বিত্তশালী। চার পাঁচটা গার্মেন্টসের মালিক। ওনাদের চার ছেলে এক মেয়ে। বড় তিন ছেলে লেখাপড়া শেষ করে তিনটে গার্মেন্টস দেখাশোনা করে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
হাফিজ উদ্দিন ছোট ছেলে আশফাককে ও একটা গার্মেন্টস দেখাশোনা করতে বলেছিলেন। আশফাক রাজি না হয়ে ভালো বেতনে চাকরি করছে। তার বিয়ে দেয়ার জন্য হাফিজ উদ্দিন মেয়ের সন্ধান করছেন। উনি ব্যবসা ও সংসারের দায়-দায়িত্ব ছেলে-বৌদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কেউ এলে তার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করেন। শুধু বাইরের নয় ছেলে মেয়েদের কাউকে পেলে কমপক্ষে আধ ঘণ্টা আটকে রেখে নানান বিষয়ে আলাপ করবেন। তাই ছেলেমেয়েরা বাবার কাছে সহজে আসে না। একমাত্র রাফিয়াকে পাঁচমিনিটের বেশি আটকাতে পারেন না। বাবা কিছু বলার আগে এমন ব্যস্ততার কথা বলবে, যা শুনে হাফিজ উদ্দিন বলবেন, ঠিক আছে, আমার কাছে আর সময় নষ্ট করিস না। পরে আসিস তখন অনেকক্ষণ আলাপ করব।
ঐ দিন ভার্সিটিতে হালিমের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর রাফিয়া ইসলামকে জানার জন্য অবসর সময়ে কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা ও অন্যান্য ইসলামিক বই পড়তে শুরু করল। সেই সাথে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলে হালিমের মন। জয় করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর হতে চলল হালিমের সঙ্গে মেলামেশা করলেও তার মন জয় করতে পারে নি। এমনকি পরিচয়ও জানতে পারে নি। এখন রাফিয়া মাথায় রুমাল বেঁধে ও গায়ে বড় ওড়না দিয়ে ক্লাশ করতে আসে। সেজন্য তাকে বন্ধু-বান্ধবীদের অনেক বিদ্রূপ হজম করতে হয়। ভার্সিটিতে হালিমকে জড়িয়ে তার নামে অনেক কটুক্তিও শুনতে হয়। ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখে বাসায় ভাবিরাও বলে, মনে হচ্ছে কোনো হুজুরের পাল্লায় পড়েছ। একদিন তো মেজভাবি বলেই ফেলল, তোমার হুজুর প্রেমিককে একদিন বাসায় নিয়ে এস, আমরাও তার কাছে দীক্ষা নেব। এরকম আরো অনেক কিছু বলে ভাবিরা রাগায়।